আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের কৌশলগত লড়াইয়ে ইরান জয়ী হচ্ছে বলে লন্ডনভিত্তিক এক থিংক ট্যাংকের গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) গবেষণায় বলা হয়েছে, রিয়াদের শতকোটি ডলার বিনিয়োগের পাল্টায় এর ভগ্নাংশ পরিমাণ খরচ করেও তেহরান এখন সিরিয়া, লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনের ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।
মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে সৌদি আরব দশকের পর দশক ধরে শত শতকোটি ডলারের পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্র কিনেছে, যার বেশির ভাগই যুক্তরাজ্য থেকে গিয়েছে। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ইরান প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্রে পিছিয়ে থেকেও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে নেটওয়ার্ক গড়ে কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছেছে বলে আইআইএসএস জানিয়েছে। ‘মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের নেটওয়ার্কের প্রভাব’ শীর্ষক ২১৭ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংকটি জানায়, ইসলামি বিপ্লবের পর ১৯৭৯ সালে দেশটির নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই ইরানের প্রভাব দেশের সীমানার বাইরেও বিস্তৃত করার কাজ শুরু হয়। এ কাজে তারা প্রথম যুক্ত করে লেবাননের হিজবুল্লাহকে। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন উত্খাতের পর শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরাকে তারা গড়ে তোলে আধাসামরিক পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিট (পিএমইউ)। সিরিয়া যুদ্ধে বাশারের পাশে দাঁড়িয়ে তেহরান তাদের প্রভাব ইসরাইলের সীমানায় নিয়ে যায়। ইয়েমেনের যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হস্তক্ষেপ করলে ইরান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় হুতিদের দিকে।
আইআইএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্যকে নিজের দিকে টেনে আনতে সক্ষম হয়েছে, পুরোনো ঘরানার শক্তিশালী বাহিনীগুলোকে প্রতিহত এবং তৃতীয় পক্ষের শক্তিগুলোকে ব্যবহার করে তারা এটা অর্জন করেছে।’ মধ্যপ্রাচ্যের এই পালটে যাওয়া চিত্রের মূল অনুঘটক বলা হচ্ছে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) বৈদেশিক বিভাগ কুদস ফোর্সকে, যারা সমগ্র অঞ্চলে তেহরানের স্বার্থ রক্ষায় তত্পর। এই কুদস ফোর্স ও তাদের প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সুলাইমানির সরাসরি যোগাযোগ ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সঙ্গে।
সাদ্দামকে বলা হতো মধ্যপ্রাচ্যে তেহরানের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো প্রাচীর। ওই প্রাচীর সরে যাওয়ার পর কুদস ফোর্স ত্বরিতগতিতে শক্তিবৃদ্ধির কাজ শুরু করে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মেলবন্ধনে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজে সচেষ্ট হয়। কেবল তাই নয়, প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রচলিত ঘরানার সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় তারা ড্রোন ও সাইবার হামলার মতো অপ্রচলিত কিন্তু শত্রুকে ব্যতিব্যস্ত রাখার কার্যকর পথে হাঁটা শুরু করে।