বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ছিন্নমূল শিশুদের মান সম্মত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে মিলল জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড

আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:২২

নাটোরের রেলস্টেশনের ছিন্নমূল শিশু অর্থাৎ যারা একেবারে সুবিধা বঞ্চিত। স্টেশনের আশপাশের বস্তিতে এরা বসবাস করে। অন্যান্য শিশুরা যেমন সামাজিক ও মৌলিক অধিকার পেয়ে থাকে, এই শিশুরা সেসব অধিকার থেকে বঞ্চিত। আর এসব শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে হ্যাপি নাটোর। তাই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ হ্যাপি নাটোর অর্জন করেছে বাংলাদেশের তরুণদের সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলার ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২০’। 

শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে ‘স্বপ্ন কলি’ নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে হ্যাপি নাটোর। পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের অংশগ্রহণে সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। স্কুলটিতে সুবিধা বঞ্চিত ১২০ জন শিশু পড়াশোনা করছে। এছাড়াও শিক্ষা বিস্তারে সচেতনতা তৈরি করতে বস্তিবাসীর মধ্যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। 

কয়েকজন যুবক মিলে গড়ে তোলে এই প্রতিষ্ঠান। মোস্তাফিজুর রহমানের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সুষ্ময় দাশকে সাথে নিয়ে শুরু হয় এসব সামাজিক ও মৌলিক অধিকার বঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে কাজ। 

বন্ধুরা মিলে গড়ে তুলেছে হ্যাপি নাটোর। কিভাবে হ্যাপি নাটোর গড়ে উঠলো জানতে চাইলে বেশ পেছনে চলে যান প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, রেলস্টেশনে ঘুরতে গিয়ে কয়েকজন ছিন্নমূল শিশু শীতে কষ্ট করছিলো এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। শীত নিবারণ করতে কিছু শীতবস্ত্র দরকার। তাই তাদের জন্য কিছু করা যায় কিনা এমন মানবিক ভাবনা থেকেই শুরু হয় কাজ। তখন মনে হতে থাকে এভাবে না হয়ে একটা সংগঠনের মাধ্যমে করা যায় কিনা। তখন থেকেই গড়ে ওঠে হ্যাপি নাটোর। ১৫ জন শিশুকে শীত বস্ত্র দেওয়ার মাধ্যমেই ২০১২ সালের ২৯ অক্টোবর পথ চলা শুরু হয় হ্যাপি নাটোরের। তবে সেই কাজটি থেমে থাকেনি, দীর্ঘ আট বছর ধরে এসব শিশুদের জন্য সহযোগিতা চলমান রেখেছে সংগঠনটি। 

সমাজের যেসব অধিকার এসব শিশুদের পাওয়ার কথা, সেসব অধিকারকে তাদের কাছে নিয়ে আসতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি ও সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা। অন্যান্য শিশুর সাথে এসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে হ্যাপি নাটোর বরাবরই সজাগ রয়েছে। 

আরো পড়ুন: ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে’

তবে রেলস্টেশনের এসব বাচ্চাদের স্কুলমুখী করাটা মোটেও সহজ ছিলো না বলে জানালেন মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়াও অর্থের যোগান কিভাবে আসবে সেটা আরও একটা বড় প্রতিবন্ধকতা ছিলো। বন্ধুরা ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাঁদা তুলেই চলতে থাকে এই শিক্ষা বিস্তারের সুযোগ। 

তিনি বলেন, এসব শিশুরা ভিক্ষাবৃত্তি ও অন্যান্য কাজের বিনিময়ে সামান্য কিছু অর্থ উপার্জন করতো, যা পরিবারে ভূমিকা রাখতো। এজন্য অভিভাবকরা আগ্রহী ছিলেন না স্কুলে দিতে। তাদেরকে বোঝাতে হয়েছে। যেটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। 

জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড সামনে চলার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ যুগিয়েছে বলে জানালেন হ্যাপি নাটোরের উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, সংগঠনের সাথে ভলান্টিয়ার, কমিটির মেম্বর, আমার যেসব বন্ধুরা এই সংগঠনের পেছনে কাজ করছে সবার কাছে এই অ্যাওয়ার্ড একটা অন্যরকম স্বীকৃতি। 

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে তরুণদের বিভিন্ন কাজের স্বীকৃতি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করছে সিআরআই ও ইয়াং বাংলা। তরুণদের কাজের স্বীকৃতির এমন একটি প্লাটফর্ম সৃষ্টির জন্য সিআরআই ও ইয়াং বাংলাকে ধন্যবাদ দেন তিনি। 

ইত্তেফাক/এএএম