শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ০০:৩৫

কোভিড-১৯ এর শুরুর দিকে সাধারণ জনগণের নাগালের বাইরে চলে যায় অক্সিজেন সেবা। দ্বিগুণের চাইতেও বেশী দামে কিনতে হয়েছিল অক্সিজেন সিলিন্ডার। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে নানান উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। এমন দুর্দিনের অন্ধকারে আশার আলো নিয়ে উপস্থিত হয় ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’।

করোনার তীব্র প্রকোপের মধ্যে ২৫ জুন থেকে তাদের এই কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০ দিনে এই স্বেচ্ছাসেবক টিম সারাদেশে ৩ হাজার ৩ শত করোনা আক্রান্ত রোগীকে সহায়তা করেছে। আর এই উদ্যোগ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদ বিন কাদের চৌধুরী, সবুর খান কলিন্স ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।

এ স্বেচ্ছসেবক টিমের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০ দিনে তারা সেবা দিয়েছেন ৩ হাজার ৩ শত ৪২ জনকে। রোগীদের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিতেন তারা। ২৫ জুন ঢাকায় এ সেবা শুরু করলেও পরে ২৫ জুলাই চট্টগ্রামে, ২৯ জুলাই ময়মনসিংহে এবং ৬ আগস্ট কুরিয়ার যোগে সারাদেশে এ সেবা চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে ফেনী, লক্ষীপুর ও বগুড়া জেলায় এ সেবা চালু হয়। এছাড়াও কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ ও খুলনায় অক্সিজেন সেবা চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর এ কাজে সারাদেশে সহায়তা করে ১২০ জন।

সেবার বিষয়ে উদ্যোক্তা সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সব রোগীর ক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয় না। করোনা আক্রান্ত রোগীর এক পর্যায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়, আর এসময় কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। শুধু করোনায় আক্রান্ত রোগী নয়, অন্যান্য রোগীর জন্যও অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে। এমতাবস্থায় অক্সিজেন মজুত করা ও এর মূল্য বেশী হওয়ায় অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে অক্সিজেন গ্রহণ নিশ্চিত করতে পারছেন না। তখন মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজন কি হতে পারে সেটিকে প্রাধান্য দিয়ে এই অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য আমরা বিনামূল্যে ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’র উদ্যোগ গ্রহণ করি।’ এর মধ্যে পরিবারের অন্যান্য সদস্যেদের সঙ্গে সাদও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

সে সময় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার জন্য ভয়ের একটি সময় গিয়েছিল তখন। বিশেষ করে আমার আম্মু-আব্বুর জন্য। তাদের বয়স হয়েছে। কোনো ধরনের ঘটনাই তখন আমার জন্য সুখকর ছিল না। হয়তো মানুষের দোয়ায় সে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি’।

এই কার্যক্রম কতদিন চলমান থাকবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যতদিন এই অন্ধকার কেটে না যাবে ততদিন আপনাদের পাশে থাকার দৃপ্ত শপথ নিয়েই আমরা এই কার্যক্রম শুরু করেছি এবং সেটি অব্যাহত থাকবে ইনশাল্লাহ’।

সেবা সম্পর্কে রফিকুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘আমরা যখন অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে কোভিড-১৯-এ আক্রান্তদের পৌঁছে দিই তখন তাদের মুখের হাসি আমাদেরকে অভিভূত করে। তবে সবসময়ই যে ভালো আচরণ করে এমন না; কিছু মানুষ এমন অপ্রত্যাশিত আচরণ করে যেন মনে হয় আমরা তাদের কর্মচারী’।

সেবা থেকে উপকৃত হয়েছেন এমন একজন রিয়াদুল ইসলাম। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন যে কোনো সময় কমে যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় হাসপাতালেও তাৎক্ষণিকভাবে অক্সিজেন সেবা মেলে না। কিন্তু ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’র মাধ্যমে দিন বা রাতের যে কোনো সময় এই সেবাটির নিশ্চয়তা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী পর্যায়ে এ ধরনের সেবা সত্যিই আশাব্যাঞ্জক। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে তারা অনেকের কাছে অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দিয়েছে, যাদের এটি খুবই উপকারে এসেছে।

ইত্তেফাক/এএএম