বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

২৮ লাখ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর জন্য

এক প্ল্যাটফর্মে ২৮ লাখ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া

আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২১:২২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে ‘ঢাবিয়ান’ বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। শুধু ঢাবিই নয়, দেশের নামকরা সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট ট্যাগ ব্যবহার করেন। যেমন- এনএসটিইউ-ইয়ান, ইডাব্লিউইউ-ইয়ান, নটর ডেমিয়ান, হলি ক্রসিয়ান, রাজউকিয়ান ইত্যাদি। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর এমন কোনো ট্যাগ নেই!

উপরের কথাটা বেশ ভাবিয়েছে পলাশ আহমেদকে। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট খেলোয়াড়দের স্পোর্টস এজেন্ট পলাশ সকাল নামে পরিচিত। তিনি দেশ সেরা শিক্ষকদের কাছে গিয়েছেন তার ভাবনা নিয়ে। অনেকের সঙ্গে কথা বলার পর একটি সিদ্ধান্তে পৌছেছেন। গড়েছেন ‘হাউজ অফ এনইউবিডিয়ানস’।

পলাশের এ ব্যাতিক্রম উদ্যোগের প্রথম উদ্দেশ্যই হলো- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীদের কাছে ‘এনইউবিডিয়ানস’ নামটি ছড়িয়ে দেওয়া। প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি প্লাটফর্ম, যেটি কাজ করছে সম্পূর্ণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তভূর্ক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের ঘিরে। পলাশের ভাষায়, ‘‘চাকরি কিংবা যেকোনো জায়গায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নামটা শুনলে অনেকেই অবহেলা করে, কোনো পড়ালেখাই কিন্তু অবহেলার নয়, মূলত তাদের আত্নউন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতেই আমাদের পথচলা।’’

ভাবনা যখন আশেপাশের গল্প থেকেই
পলাশের আপন ভাই আকরাম, পড়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পাবলিকে সুযোগ না পাওয়ায় মানুষের ধীক্কারধর্মী কথাবার্তা অনেক শুনতে হয়েছে তাকে। শুধু নিজের ভাই-ই নয়, চারপাশেই আছে এরকম হাজারো আকরাম যাদের গল্পগুলো যেনো বারবার মনে দিচ্ছিলো পলাশকে। তাই তিনি এমন প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করালেন, যেটি কাজ করবে শুধুমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঘিরেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ ‘এনইউবিডিয়ানস’ নামটি দিয়েছেন। তার মতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে কাজ করার মতো তেমন কোনো প্ল্যাটফর্মই ছিল না। কিন্তু নতুন এ উদ্যোগের কারণে সবাই বিভিন্ন দক্ষতা শিখতে পারবে, জব সেক্টর সম্পর্কে জানতে পারবে।

শুধু পড়ালেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা এই প্লাটফর্মে পাঠ্যবই অনুসারে ক্লাসের সুযোগ রয়েছে। এসব ক্লাস নিচ্ছেন দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালগুলো শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে পড়ালেখার পাশাপাশি নানান সহশিক্ষা নিয়েও। সাপ্তাহিক কুইজ, টেস্টসহ নানান কার্যক্রমসহ প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে শিক্ষার্থীদের দক্ষতার উপর প্রশিক্ষণ নিয়েও।

প্রধান প্রাসাশনিক কার্যনির্বাহী জুয়েল বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বা কর্পোরেটের সফল মানুষদের সাথে মিলে আমরা কটেন্ট নিয়ে কাজ করছি। মূলত ব্যবসায়, মার্কেটিং, ব্যবসায় উদ্যোগ কিংবা উচ্চতর শিক্ষারসহ নানান সহশিক্ষামূলক ভিডিও নিয়ে কাজ করছি আমরা।

অর্জন যেনো হাসিমুখেই
কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে পুরো প্রতিষ্ঠান? জানতে ঢুঁ মেরেছিলাম প্রতিষ্ঠানটির কার্যলয়ে। যেখানে কাজ করছিলেন অর্ধশত তরুণ। কেউ কাজ করছে ক্লাস রেডি করার কার্যক্রমে, অন্যদিকে চলছে প্রোডাকশন টিমের কটেন্ট তৈরির শুটিং। ব্যস্ততার ছাপ যেনো সবখানেই। তবে অবাক করা ব্যাপারটা হচ্ছে ২/৩ জন ছাড়া অন্যান্য সবাই ই কাজ করছে পুরোপুরি স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে। অতিরিক্ত প্রধান প্রাসাশনিক কার্যনির্বাহী তানভীর হোসাইনের ভাষায় পারিশ্রমিক থেকেও যেন মূখ্য এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে উপকৃত তরুণদের হাসিমুখের চিত্রটা।

বর্তমানে মাত্র অল্প সময়ের ব্যবধানেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে বিশাল একটি পরিবারে রূপ নিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। নিজেদের ভবিষ্যতে কোন পথে দেখতে চান? জবাবে পলাশ বলেন, আমরা চাই সারা দেশজুড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান, প্রাক্তন সব ছাত্র যেন নিজেদের গর্বের সাথে পরিচয় দিতে পারে। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সকল ক্ষেত্রের তফাৎ আরো কমিয়ে আনা।

ইত্তেফাক/এসটিএম