করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথমদিক, চারদিকে যখন আতঙ্ক আর উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২০ সালের ২৫ জুন যাত্রা শুরু হয়েছিল জয় বাংলা অক্সিজেন সেবার। বিনামূল্যে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়েছিল করোনা আক্রান্ত রোগী কিংবা শ্বাসকষ্টে থাকা মানুষজনের কাছে। সে অব্যাহত সেবার বছর পূর্ণ হয়েছে। দীর্ঘ এক বছরের এ স্বেচ্ছসেবায় সারাদেশে ৭ হাজার ৭২৫ জনকে সেবা দিয়েছেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকরা।
এ স্বেচ্ছসেবক টিমের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫টি বিভাগীয় শহর ও ৭টি জেলা শহরে সরাসরি কার্যক্রম রয়েছে অক্সিজেন সেবার। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী এবং জেলা শহরগুলো হচ্ছে ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, চাপাইনবাবগঞ্জ। যেসব জেলা শহরে সরাসরি সেবা নেই সেখানে কুরিয়ার যোগে বা কোনো অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে সিলিন্ডার পাঠান সেবার উদ্যোক্তারা। সারাদেশে এ কার্যক্রমের সঙ্গে ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক সরাসরি কাজ করে। শুরুতে ১২টি সিলিন্ডার দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন ১৪০টি সিলিন্ডার নিয়ে কাজ করেন তারা। এ অক্সিজেন সেবার উদ্যেক্তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ডাকসুর সাবেক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ ও শিক্ষার্থী সবুর খান কলিন্স।
এক বছরের সেবার বিষয়ে উদ্যোক্তা সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় মানুষের ভালোবাসা নিয়ে ছিলাম। এত দীর্ঘসময় মানুষের ভালোবাসা ছাড়া এ ধরনের একটি কাজ পরিচালনা করা অসম্ভব। মানুষের ভালোবাসায় এই কাজটি পরিচালনা করতে সম্ভব হয়েছি। মানুষ যখন বলে আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডারের উসিলায় উনি বেঁচে গেছেন, ফের জীবন ফিরে পেয়েছেন তখন এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। যদিও হায়াতের মালিক সৃষ্টিকর্তা। সংকট যতদিন ততদিন আমরা এই সেবা নিয়ে মানুষের পাশে থাকব ইনশাল্লাহ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মহামারিতে অনেকে তার প্রিয়জন হারিয়েছেন। এই হারানোর লাইনটা আর দীর্ঘতর না হোক সেটিই প্রত্যাশা। গতবছর ২৫ জুন থেকে আমরা এই সেবা চালু করি। মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে দিনে ২৪ ঘণ্টা এবং সপ্তাহের ৭ দিনই সেবা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক বন্ধুদের জন্য এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং চেষ্টা করে যাব। সংকট শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই সংগ্রাম চালু থাকবে ইনশাল্লাহ।’
সবুর খান কলিন্স বলেন, ‘একটি নতুন ভোরের প্রতীক্ষা’ স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা সারাদেশে ধাপে ধাপে অক্সিজেন সেবা বৃদ্ধি করেছি। আমরা যখন অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের পৌঁছে দেই তখন তাদের মুখের হাসি আমাদেরকে অভিভূত করে। আমার বিশ্বাস করি, করোনামুক্ত যে নতুন ভোরের স্বপ্ন আমরা দেখি সে ভোর খুব বেশি দূরে নয়। আর এই অন্ধকারে আলো হয়ে মানুষের পাশে থাকবে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা।’
ইত্তেফাক/জেডএইচডি