মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তরুণদেরকে বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং শেখাবেন রেজওয়ান করিম

আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২১, ২৩:০৭

কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ প্রকৌশলী, কেউবা ব্যবসায়ী। তবে সকলের স্বপ্নের পাশে যুক্ত হচ্ছে না সফল শব্দটা। অথচ আগ্রহ থাকলে যেকোনো বিষয়ে সফল হওয়া সম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হওয়া ২৯ বছর বয়সী তরুণ রেজওয়ান করিমের গল্প জানাবো আজ। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইটে। বর্তমানে ফিনল্যান্ডের একটি স্টার্টআপের সঙ্গে ডাটা অ্যানালিস্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি।

রেজওয়ান করিমের শৈশব কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক ছিলো বেশি। ২০০০ সালের শেষের দিকে অনুমতি মেলে বাবার কম্পিউটার চালানোর। কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহটা তৈরী হয় সেখান থেকেই।

অ্যারোনটিক্যাল ইন্সটিটিউট অফ বাংলাদেশ থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন ২০১৫ সালে। বাবা বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে কর্মরত রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। মা একজন গৃহিণী। ছোট বোন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে পড়াশোনা করছেন। ছোট পরিবার তাদের।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় কীভাবে জানতে চাইলে রেজওয়ান করিম জানান, ২০১৬ তে  ইন্টার্নশিপ শেষ করলাম, তারপর চাকরি পাচ্ছিলাম না। তখন চিন্তা করি, চাকরির জন্য অপেক্ষা করবো না। নতুন কিছু শেখা শুরু করবো। আমার যেহেতু ছোটবেলা থেকেই টেকনলোজিতে ঝোঁক ছিল তাই ঘাটাঘাটি শুরু করলাম এটাকে কিভাবে প্রফেশনাল কাজে ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেটে দফায় দফায় রিসার্চ করার পর ২০১৬ সালে সিদ্ধান্ত নিলাম ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার। তখন আমার জন্য সবচেয়ে সহজ যে ক্যাটাগরি ছিল তা হচ্ছে ওয়েব রিসার্চ। আমি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ওয়েব রিসার্চকে নির্বাচন করলাম। ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে অ্যাকাউন্ট তৈরি করলাম আপওয়ার্কে। আমার প্রথম কাজটা ছিলো ৭৫ ডলারের। কাজটি পেয়েছিলাম, প্রথম তিন মাস কাজে বিড করার পর। সে প্রজেক্ট সম্পূর্ণ করতে আমি সাতদিন সময় নিয়ে ছিলাম। এভাবে ধারাবাহিক ভাবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কাজ করতে থাকলাম।

রেজওয়ান আরও বলেন, ২০১৯ সালে হঠাৎ করেই কাজ আসা থেমে গেছিল। আমি বুঝতে পারলাম আমার স্কিলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আবারও নিজেকে তৈরী করলাম এবং ২০২০ সাল থেকে ধারাবাহিক কাজ পাওয়া শুরু হলো।

বিগত পাঁচ বছরে শতাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্টে কাজ করেছেন রেজওয়ান করিম। তার মধ্যে ব্লুমবার্গ (Bloomberg), আপকাউন্সিল (Upcounsel ), ওয়েফেয়ার (Wayfair) অন্যতম।

সম্প্রতি রেজওয়ান করিমকে টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আপওয়ার্ক। নিজের পড়াশোনার বাইরে গিয়ে কাজ করার সময় পরিবারের সহযোগিতা ছিলো তুলনামূলক বেশি। চাকরি হচ্ছেনা এই বলে বসে থাকার চেয়ে নতুন কিছু একটা শুরু করার জন্য সবসময়ই অনুপ্রেরণা দিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।

২০২০ সালে ফিনল্যান্ড ভিত্তিক একটা স্টার্টআপ থেকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক আসে রেজওয়ান করিমের। সুযোগ মেলে ১ মাস ইন্টার্নশিপের। কাজের দক্ষতা ও  অগ্রগতি দেখে ফুল টাইম ডাটা অ্যানালিস্ট হিসেবে যুক্ত করা হয় তাকে। এরপর থেকে সেখানেই কর্মরত আছেন।

রেজওয়ান করিম অবসর সময় কাটান পিয়ানো বাজিয়ে। পিয়ানো বাজানো তার অন্যরকম একটা শখ। বর্তমানে বাবার কিনে দেওয়া পিয়ানো নিয়ে অবসর কাটাচ্ছেন। গান তৈরি করে নিজের ভেরিভাইড স্পটিফাই প্রোফাইল ও ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন তিনি।

রেজওয়ান করিম বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে অসুস্থ একটা প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিং শিখলে অনেক টাকা কামানো যাবে, এই লভ দেখিয়ে শিখানোর নামে একটি চক্র লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তরুণদের কাছ থেকে। অথচ সম্পূর্ণ না শিখতে পারায় হতাশ হচ্ছে উদ্যমী তরুণরা। ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা উপার্জন করা সম্ভব তার জন্য প্রয়োজন তিনটা বিষয়— এক কঠোর পরিশ্রম, দ্বিতীয়ত মেধা এবং পরিশেষে ধৈর্য্য। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রেজওয়ান করিম জানান, তরুণদের জন্য বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং শেখার ব্যবস্থা করতে চান। অভিজ্ঞতার আলোকে অবসর সময়ে, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অনলাইনে ট্রেনিং করাবেন তরুণদের। যার মাধ্যমে সৃষ্টি হবে বেকার যুব-সমাজের কর্মসংস্থান।

ইত্তেফাক/এসটিএম