শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

'গানের রাজা'র তারকা শফিকুলের স্বপ্ন

আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:৪৪

চ্যানেল আইয়ের গানের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান 'গানের রাজা' থেকে সারাদেশের মানুষের কাছে পরিচিতি পায় ক্ষুদে শিল্পী শফিকুল ইসলাম। ২০১৯ সালে এই গানের প্রতিযোগিতার মঞ্চে ‘আমার মতো এতো সুখী নয়তো কারও জীবন, মানব জীবন বৃথা গান গেয়ে মন কেড়েছে দর্শকশ্রোতা ও বিচারকদের। বিচারক প্যানেলে থাকা অবস্থায় গান শুনে কাঁদেন নায়ক বাপ্পারাজও।

গান গেয়ে মন জয় করা শফিকুলের গায়ক হিসেবে ওঠে আসা সহজ ছিলনা। নেত্রকোনার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল থেকে ওঠে আসে এই ক্ষুদে গায়ক। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে এসএসসি পরীক্ষার। আলাপচারিতায় জানিয়েছে তার জীবন সংগ্রাম ও গায়ক হিসেবে ওঠে আসার গল্প। শফিকুল বলে, 'ছোটবেলায় গ্রামে দেখতাম গানের আসর বসতো, যেখানে গানের আসর বসার কথা জানতে পারতাম ছুটে যেতাম সেখানে। কখনো সন্ধ্যা আবার কখনো গভীর রাতে গান শোনার জন্য চলে যেতাম। গানের প্রতি আমার আলাদা একটা ভালোবাসা জন্ম নিয়েছিল ছোটবেলা থেকে আর গায়ক হওয়ার স্বপ্নটাও। আমার নিজের স্বপ্ন পূরণে নিজেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করি। পরে গানের আসরগুলোতে গান গাওয়ার সুযোগ হয়, গান শুনে মুগ্ধতার কথাও জানান অনেকে। আমার বাবাও সংগীতপ্রেমী মানুষ, তিনি গান না করলেও গানকে ভালোবাসতেন।'

শফিকুল বলে, 'আমার গান শোনার পর বাবা আমাকে অনুপ্রেরণা দেওয়া শুরু করেন। তার সাথে আমার পরিবারের সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমাদের পরিবার স্বচ্ছল ছিলনা, বাবা যা আয় করতেন সেটা দিয়েই দিন পার হতো, রোজগারের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনিই। আমার বোন মোবাইলে গান শুনে আমাকে লিখে দিতেন, আমি সেটা দেখে গাইতাম আর গান শেখার চেষ্টা করতাম। সেই উৎসাহ থেকে বিভিন্ন জায়গাতে আমার গান গাইবার সুযোগ হয়, প্রথমে আমি বাউল গান করতাম, কখনো গ্রামের কোনো গানের পালা বা কখনো মাজারে গান করেই চলতো আমার দিন। বিভিন্ন জায়গায় গানের জন্য ডাক পেতাম আর গান গেয়ে কিছু অর্থ পেলে এনে দিতাম পরিবারকে। গান গেয়ে উপার্জন করা টাকা দিয়ে আমার বোনকেও বিয়ে দিয়েছি।'

'আমার জেএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার দিন এক চাচা বললো শফিকুল মাছরাঙা টিভিতে ম্যাজিক বাউলিয়ানা প্রতিযোগিতায় তোমার জন্য নিবন্ধন করেছি, আগামীকাল অডিশন তুমি যাও, আমি সেদিনই ঢাকায় এলাম অডিশন দিতে। সেখানে অডিশন দিতে এসে অনেক ভোগান্তি হয়, আমার নম্বর মিলে কিন্তু নাম মিলে না। সারাদিন অপেক্ষা শেষে অডিশন দেওয়ার সুযোগ পাই।  এরপর আমি সেই ম্যাজিক বাউলিয়ানা প্রতিযোগিতায় ১ম রানারআপ হই। ওই চাচার মাধ্যমেই চ্যানেল আইয়ের গানের রাজা প্রতিযোগিতায় আসা হয়। আমাকে দেখার পর সেখানকার একজন কর্মকর্তা চিনে ফেলেন আমি মাছরাঙায় গান করেছি। ফলে অংশ নিতে কোনো সমস্যা হয়নি। এরপর শুরু হয় গানের রাজা অনুষ্ঠানে আমার পথচলা।'—বলছিল এই ক্ষুদে তারকা।

চ্যানেল আইয়ের গানের রাজায় প্রথম রানারআপ হয় শফিকুল। সেখান থেকে বেড়িয়ে বেশকিছু মৌলিক গানও করেছে সে। নিজের লেখা গানও গেয়ে প্রকাশ করছে তার ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলে। ইসলামিক সংগীতও প্রকাশ হয়েছে তার। পপুলার প্রেমিক নামের এক টিভি নাটকে প্রেমের পোকা শিরোনামে গান করার পর, এখন স্বপ্ন দেখে একদিন গান করবে সিনেমায়। এরইমধ্যে সিএমভি’র ব্যানারে ইমরানের সুরে প্রকাশ পেয়েছে তার পর পর দুটি গান ও ভিডিও। ‘ভাবতে ঘেন্না লাগে’ ও ‘মন বইলা কিছু নাই’ শিরোনামের গান দুটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

শফিকুল আরও বলে, আমি গানকে আকড়ে ধরে বাচঁতে চাই। গানের মাধ্যমেই আমি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। গানকে ভালোবাসে আমি সেই ভালোবাসার প্রতি সম্মান রেখে এগিয়ে যেতে চাই।  আমি যেসব গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি, বড় হয়ে সেরকম গানের প্রতিযোগিতায় বিচারক প্যানেলে থাকার একটা স্বপ্ন রয়েছে।  

শফিকুলের কাছে তার ইচ্ছার কথা জানতে সে বলে, আমার প্রিয় শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম কনকচাঁপা, তাঁর সাথে গান করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে হতো। প্রবল ইচ্ছে ও স্বপ্ন দেখি এই গুনি শিল্পীর সাথে একটি মৌলিক গান করার।

ইত্তেফাক/এসটিএম