বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইভানের পথচলা

আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২১, ২০:২৮

জ্ঞানচর্চার জন্য খবর দেখা আর সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস গড়ে দিয়েছিলেন বাবা, কিন্তু একসময় এটাই ভালো লেগে যায় তার। খবরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ তাকে করে তোলে খবরেরই একজন। বলছি তরুণ সাংবাদিক সাদিক ইভানের কথা।

২০১৪ সালে মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় দৈনিক ইত্তেফাকে ছোটদের পাতায় লেখালেখির মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে যাত্রা শুরু হয় তার। পরের বছর শিশু সাংবাদিকতা শুরুর মাধ্যমে নিয়মিত কাজ শুরু করেন তিনি। অভিজ্ঞতার পাল্লা ভারি করতে সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনেও তিনি কাজ করেছেন৷ স্বীকৃতি সরুপ মিলেছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল- ইউনিসেফের তিনটি অ্যাওয়ার্ড, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রজ্ঞার সাংবাদিকতা পুরষ্কারও।

সাদিক ইভান পড়াশোনা করছেন বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে। পাশাপাশি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে 'হ্যালো' বিভাগের কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত। তার বেড়ে ওঠা গাজীপুরের শ্রীপুরের কাওরাইদে। যৌথ পরিবারে পারিবারিক বন্ধনে কেটেছে শৈশবের দিনগুলো। বাবা চাইতেন ছেলে সৃজনশীলতা ও মানবিক গুণাবলি নিয়ে আদর্শ মানুষ হয়ে বড় হবে। খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস থেকে স্কুলে পড়ার সময়েই তার লেখালেখির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। সেই আগ্রহের মাত্রা আরও বেড়ে যায় খবরের কাগজে নিজের নাম দেখে।

সদিক ইভান বলেন, '২০১৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের কঁচিকাচার আসরের সদস্য হই আমি। ডাকযোগে লেখা পাঠাতাম। তখন ইমেইল পাঠানো বুঝতাম না। পত্রিকার পাতায় নিজের লেখা দেখতে পেয়ে অনেক আনন্দ হত। এটাই পরবর্তীতে গণমাধ্যমে কাজ করার জন্য বড় অনুপ্রেরণা তৈরি করেছে।'

২০১৫ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের শিশু সাংবাদিকতার সাইট হ্যালোতে যুক্ত হন তিনি। চার বছর পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা হিসেবে শিশু সাংবাদিকতা করেন। শিশুদের সঙ্গে অন্যায়, অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, তাদের দুর্ভোগ এবং নানা চাওয়া পাওয়া ওঠে এসেছে তার প্রতিবেদনে। এ প্রসঙ্গে সাদিক ইভান বলছিলেন, 'শিশু সাংবাদিকতা যেহেতু ভলান্টিয়ারিং ওয়ার্ক, তাই আমার মাথার ওপর তেমন কোনো চাপ ছিল না। উইলিংলি কাজ করতে পারতাম। তাই পাশাপাশি আরও কাজের অভিজ্ঞতা নেওয়ার ইচ্ছাও তৈরি হয় আমার।'

শেখার বয়সটাকে আরও বেশি অর্থবহ করতে তুলতে কাজের সঙ্গেই লেগে থাকতেন তিনি। কোনো সুযোগ পেলে সেটা হাতছাড়া করেননি। নতুন আরেকটি গণমাধ্যমে কাজ করার ইচ্ছা থেকে তিনি যুক্ত হন বেসরকারি বেতার চ্যানেল এশিয়ান রেডিও এমএম ৯০.৮ এ। কর্তৃপক্ষ তাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেয়। অল্প কিছুদিন কাজ করলেও এই প্রতিষ্ঠানের হয়ে পুরষ্কারও জিতে আনেন সাদিক ইভান।

এদিকে এইচএসসি পরীক্ষা ঘনিয়ে আসায় একটু বেশি করে পড়াশোনায় মনযোগী হতে হয় তাকে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ইন্টারনেটে বুঁদ হয়ে থাকা কিংবা অন্যকোনো ভাবে সময় কাটানোর কোনো সুযোগই ছিল না তার। কাজের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পেতেন তিনি। এরমধ্যে টেলিভিশনেও কাজ শুরু করেন। নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক সংস্থা 'ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড' কর্তৃক তৈরি শিশুকিশোরদের মতামত ও সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন অনুষ্ঠান 'কানেস্তারা'য় যুক্ত হন। এই অনুষ্ঠানটি কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হত। পড়াশোনার সঙ্গে সমান তালে কাজের মাঠেও সক্রিয় থাকেন তিনি। তার রোজকার দিনলিপি বেশ কর্মব্যস্তই থাকত। কাজের স্বীকৃতিও মিলেছে তার। ২০১৬ সালে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ পুরষ্কার ইউনিসেফের মিনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পান। রেডিও বিভাগে একটি এবং প্রিন্ট ও অনলাইন বিভাগে দু'টি অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন। ২০১৭ সালেও ইউনিসেফের আরেকটি অ্যাওয়ার্ড তার ঝুলিতে জমা হয়। শুধু তাই নয়, একই বছর ‘প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার’ও পান তিনি।

অ্যাওয়ার্ড প্রসঙ্গে সাদিক ইভান বলেন, "তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরষ্কার ঘোষণার দিন ছিল আমার এইচএসসি পরীক্ষা। তাই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে আমার বদলে অংশগ্রহণ করে আমার কাজিন। পরীক্ষা দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে প্রথমেই তাকে কল দেই আমি। জানতে পারি আমিও অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। এরপর দ্রুত বাসায় ফিরে এসে আমার ক্রেস্ট ও চেক বুঝে নেই। পুরো বিষয়টাই অন্যরকম একটা টুইস্ট ছিল।"

এখনকার সময়গুলোও তাকে খুব একটা অবসর দেয় না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ও পেশাগত দায়িত্ব তাকে ব্যস্ততার গণ্ডিতেই আটকে রাখে। সুযোগ পেলেই সল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি, বই, ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্রে লেখালেখি, সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ভবিষ্যতেও তিনি কাজের মাঝেই থাকতে চান। স্বপ্ন দেখেন, একদিন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক হিসেবেই নিজে গড়ে তুলবেন।

ইত্তেফাক/এসটিএম