রমজান মাস বিশেষ ইবাদত-বন্দেগির মাস। এ মাসের প্রথম রাতেই শয়তানকে বন্দী করে রাখা হয় এবং জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর জান্নাতের সব দরজা খুলে দেয়া হয়। এই সুসংবাদ তাদের জন্য, যারা সব ধরণের পাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে এবং হৃদয় পবিত্র করে রোজার দিনগুলো অতিবাহিত করে।
বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যেই পবিত্র এ বরকতপূর্ণ দিনগুলোতে বিশেষ ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করছেন। আর তাই রমজান মাসে মুমিন মুসলমানদের ঘরে ঘরে রোজা আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, দান-খায়রাত ইত্যাদি নেক কাজের আধিক্য দেখা যায়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন রমজান আসে তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করা হয়’ (বোখারি ও মুসলিম)। অপর এক হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাত হয় শয়তান ও অবাধ্য জিনগুলোকে শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়। অতঃপর একটি দরজাও খোলা হয় না। আর জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, অতঃপর এর একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। এক আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকেন, হে পুণ্যের অন্বেষণকারী! সম্মুখে অগ্রসর হও আর হে মন্দের অন্বেষণকারী! থেমে যাও। এ মাসে আল্লাহতায়ালা অনেককে দোজখের আগুন থেকে মুক্তি দেন। আর এটা প্রতি রাতেই সংঘটিত হয়ে থাকে’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)।
শয়তান শিকলাবদ্ধ থাকার অর্থ কি মানুষ এদিনগুলোতে কোন প্রকার পাপ কাজে লিপ্ত হবে না? অবশ্য তা নয়। শয়তান বিভিন্নভাবে মানুষকে পাপ কাজে লিপ্ত করতে উদ্বুদ্ধ করতে চাইবে ঠিকই কিন্তু একজন মুমিন ব্যক্তি যে রোজা রেখে অধিকহারে ইবাদতে রত থাকবে তাকে শয়তান কিছুই করতে পারবে না। যে ব্যক্তির রোজা শুরু হয় তাহাজ্জদের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আর দিন অতিবাহিত হয় খোদার স্মরণে, তার ওপর কোনভাবেই শয়তান ভর করতে পারবে না।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা হতে তোমরা আহার করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিও না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (সুরা বাকারা, আয়াত:১৬৮)।
শয়তান যেহেতু আমাদের প্রকাশ্য শত্রু, তাই আমরা যদি আন্তরিকতার সাথে রোজা রাখি, নেককর্ম করতে থাকি তাহলে সে আমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। কিন্তু আমরা যদি রোজা রেখে রোজার হক আদায় না করি, তাহলে শয়তান আমাদের ওপর ভর করবে আর আমাদের দ্বারা মন্দকাজ সংঘটিত হবে।
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা এবং এর ওপর আমল করা থেকে বিরত থাকেনা আল্লাহতায়ালার জন্য তার উপবাস থাকা এবং পিপাসার্ত থাকার কোন প্রয়োজন নেই’ (বোখারি)। অর্থাৎ যখন মানুষ রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে গাফেল হয়ে যায় তখন সে শুধু নিজেকে উপবাসই রাখে যা আল্লাহতায়ালার জন্য কোন প্রয়োজন নেই।
আরো পড়ুন: আমায় ক্ষমা কর প্রভু
আসলে যে ব্যক্তি রোজা রেখে বৃথা কাজকর্ম করে, মিথ্যা কথা বলে, ধোঁকা দেয়, ব্যবসায় অধিক মুনাফা আদায় করে এবং প্রতারণা করে, সেটি মূলত তার জন্য রোজা নয় বরং শুধুমাত্র উপবাস থাকারই নামান্তর। তাই রজমানের বরকত থেকে কল্যাণমণ্ডিত হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে জিনিসটি তাহলো হৃদয়ের পবিত্রতা। হৃদয়ের পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব নয়। আমরা যদি পবিত্র হয়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি তাহলে হয়তো তিনি আমাদের ক্ষমা করে বিশ্ব থেকে সব বালা-মুসিবত দূর করবেন।
আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন, কোন নিয়তে আমরা রোজা রাখছি এটাই মূল বিষয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে রমজান থেকে কল্যাণমণ্ডিত হয়ে তার প্রিয়দের অন্তর্ভুক্ত করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট
ইত্তেফক/এএএম