বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নাজাতের দশকে তোমার সন্তুষ্টি কামনা 

আপডেট : ১৭ মে ২০২০, ০০:০৮

মহান আল্লাহতায়ালার অপার দয়ায় রমজানের রহমত ও মাগফিরাতের দশক অতিবাহিত করে প্রবেশ করেছি নাজাতের দশকে, আলহামদুলিল্লাহ। নাজাতের এ দশকে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ দয়াময় প্রভুর দরবারে সকাতর প্রার্থন করবেন তিনি যেন বিশ্বকে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন।  

মুমিন বান্দারা এ দশকে প্রত্যাশায় থাকে লাইলাতুল কদরের আশায়। এ রাত কখন আসে, কীভাবে আসে এবং কোন আরাধ্য আত্মার কাছে মহিমান্বিত রজনী ধরা দেয় এ বিষয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের জীবনে আগত প্রতিটি রমজানের শেষ দশকের কোন এক বেজোড় রাত্রিতে এ সম্মানিত রজনীকে তালাশ করো। অর্থাৎ রমজানের ত্রিশটি দিবস অসম্ভব কঠোর সাধনায় অবিরাম আরাধনার পর এ মাসের প্রায় শেষ প্রান্তে সে আরাধক তার কাঙ্ক্ষিত রাতের সন্ধান লাভ করবে। আর এটাই হলো রমজানের নিবিড় ইবাদতের মর্মকথা। 

রমজানের যতসব কল্যাণ তার সবটুকুই সে মাসের শেষ দশকে এসে সঞ্চিত হয় আর সেই অংশের কোন বেজোড় রাত্রিতেই আত্মগোপন করে থাকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ঐ রজনী, ঐশী জগতে যার নাম ‘লাইলাতুল কদর’। অতএব পুণ্যে পরিপূর্ণ এ রাতের সন্ধান লাভ করা কোন সাধারণ বিষয় নয় এবং এটা কোন সাধারণ কাজও নয়। যে মহাজন বছরের প্রতিটি দিবস ও রাত অতিশয় সাধনায় দ্বীনের ইবাদতে ব্রত থেকে পুণ্যতায় পূর্ণ হতে পারবেন কেবল তিনিই সন্ধান পাবেন সে রাতের সওগাত সম্ভার। রমজানের শেষ ১০ রাত নবী করিম (সা.) আরো বেশি পরিশ্রম করতেন, আরো অধিক ইবাদতে মশগুল হতেন। নিজের পরিবার-পরিজনকে ইবাদতের জন্য জাগিয়ে দিতেন। তিনি কোমর বেঁধে লাইলাতুল কদর পাওয়ার আশা নিয়ে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হতেন। 

আসুন! রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোকে সিয়াম সাধনায় নিবিড়চিত্তে নিবেদিত হয়ে সেই মাহাত্ম্য আহরণে মত্ত হই। রোজা পালন ও তদসঙ্গে কোরআন পাঠ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অতীব পুণ্যের কাজ। আত্মাকে ঐশী সাজে সাজানোর এক বিশেষ সময়। তবেই হাশরের দিন রমজান ও কোরআন এ বলে আমাদেরে সুপারিশ করবে যে, রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে পানাহার এবং কু-প্রবৃত্তি হতে নিবৃত্ত রেখেছি, এ কারণে তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ করো আর কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি এবং তাকে শুইতে দেয়নি, সুতরাং এই কারণে তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল করো’ (বাইহাকী)। তাই ইবাদতে আমরা যত নিবিড়ভাবে নিবিষ্ট হবো রমজানের আগমন আমাদের জন্য ততই কল্যাণকর হবে। 

আরো পড়ুন: রোজা আল্লাহ প্রেমিক বানায়

হজরত ইবনে উমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘সৎকর্মশীলতার দিক দিয়ে আল্লাহর দৃষ্টিতে রমজানের শেষ দশকের চেয়ে মহৎ ও প্রিয় আর কোন দিন নেই’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, ২য় খণ্ড)। অর্থাৎ এই দশকে আল্লাহতায়ালা অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশী মাহাত্ম্য দান করেন। নইলে, কোন দিন বা রাত আল্লাহর কাছে কী করে মহান হতে পারে? মহান এ দিক দিয়েই যে, এই দশকে আল্লাহর সংস্পর্শে যারা আসে, তাদেরকে এটি মহানে পরিণত করে। মহান আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক যতো নিবিড় হবে, বান্দাও ততো মহানে পরিণত হতে থাকবে। 

রমজানের শেষ দশকেই রয়েছে আত্মার নাজাতের প্রতিশ্রুতিসহ লাইলাতুল কদরের উপহার। এমনিভাবে বিভিন্ন ইবাদতে খোদা মানুষের আত্মার মঙ্গলার্থে নানান উপায়ে মজুত রেখেছেন তার অনন্যসব অবদান। এসব ব্যবস্থাদি মানুষের প্রতি খোদার অনুকম্পা প্রদর্শনেরই প্রমাণ। 

আমাদের উচিত হবে, খোদা সকাশে ধর্ণা দিয়ে সেসব অনুকম্পাদি আহরণ করা। নচেৎ জীবন হবে মূল্যহীন। আমরা তো কোনভাবেই প্রত্যাশা করতে পারি না যে, আমাদের জীবনে আবারো একটি রমজান ফিরে আসবে। আবারো এর তৃতীয়াংশের অবদান লাভ করতে পারবো। 

তাই আমাদের প্রত্যেকের স্বীয় আত্মার নাজাতের জন্য এখনই ক্রন্দনে রত হয়ে যাওয়া উচিত। সেই সাথে রমজানের শেষাংশের সকল কল্যাণ লাভের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো, এর বিনিময়ে যেন আমাদের প্রিয় প্রভু আমাদেরকে রমজানের শেষ দশকের সবক’টি নেয়ামত দান করেন, আমিন।

লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট 

ইত্তেফাক/এএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন