শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে মোগল আমলের চাঁদখোসাল মসজিদ

আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১৬:২০

প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক অন্যন্য নিদর্শন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদ খোসাল মসজিদ। ঐতিহাসিক এ মসজিদটি নির্মিত হয় প্রায় ৫শ বছর আগে। এ মসজিদটি নিয়ে লোকমুখে ছড়িয়ে আছে নানা কাহিনী। কিন্তু সঠিক নজরদারী এবং অপরিকল্পিত সংস্কারকাজের কারণে এর স্থাপত্যকলা বিনষ্ট হওয়ার পথে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে মোঘল আমলে নির্মিত মসজিদটির ইতিহাস ঐতিহ্য। 

সরেজমিনে গিয়ে এলাকার প্রবীণব্যাক্তি এবং মসজিদের মুসুল্লিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৫শ বছর আগে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের ভেড়ভেড়ি গ্রামের তৎকালীন জমিদার সূর্য আলহাজ্ব চৌধুরীর চাঁদ এবং খোসাল চৌধুরী নামে দুই পুত্র ছিলেন। চাঁদ চৌধুরী এবং খোসাল চৌধুরী দুই ভাই মিলে মসজিদটি নির্মাণ করেন। সেই থেকে মসজিদটির নামকরণ হয় চাঁদখোসাল মসজিদ। মসজিদটির ভিতরে গিয়ে দেখা যায় তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির মুল অবকাঠামোর দৈর্ঘ্য ৪০ ফিট, প্রস্থ ১০ ফিট এবং উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। মসজিদটি তৈরির সময় চিটাগুড়, চুন সুরকি এবং পোড়ামাটি ব্যাবহার করে নির্মাণ করলেও এর নির্মাণশৈলী এখনও নজর কারে সবার। মসজিদটির মিনারের পিছনে গিয়ে দেখা যায়, প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী এ মসজিদটি সংস্কার এবং পরিচ্ছন্নতার অভাবে মসজিদটির সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। 

চাঁদখোসাল মসজিদের খাদেম আপান উদ্দিন বলেন, চাঁদ এবং খোসাল দুইভাইয়ের মধ্যে চাঁদ চৌধুরী নিঃসন্তান হওয়ার কারণে উভয় ভ্রাতা নিম্ন তফশিল বর্ণিত বিত্ত তৎকালীন সময়ে চাঁদ খোসাল মসজিদ আওলাদ ওয়াকফ দলিল হিসাবে ঘোষণা করেন। যাহার জমির পরিমাণ মোট ১৪৭ একর। মসজিদ এরিয়ার মধ্যে ২ একর ৫২ শতক জমি থাকলেও বর্তমানে ২৫৫ দাগে মসজিদের অবকাঠামো রয়েছে ১৩ শতাংশ এবং ৩৯৯ দাগে ২৮ শতক জমিসহ (পুকুর) মসজিদের দখলে মোট ৪১ শতক জমি রয়েছে। বাকি জমি প্রভাবশালীদের দখলে। তিনি আরো বলেন, মসজিদের সমস্ত জমি নীলফামারী জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড রয়েছে প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপ না থাকায় প্রভাবশালীরা দিনের পর দিন জমি ভোগ দখল করে আসছেন। 

চাঁদ খোসাল মসজিদের মোয়াজ্জেম কেফায়েত উল্লাহ বলেন, চাঁদখোসাল মসজিদে প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন এলাকা থেকে এক থেকে দেড় হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ জুম্মার নামাজ আদায় করতে আসে। মসজিদে আসা মুসুল্লিগন বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মসজিদে টাকা পয়সা, গরু-বাছুরসহ বিভিন্ন জিনিস দান করে। সেই দানের অর্থ থেকে প্রতিমাসে মসজিদের ফান্ডে জমা পরে ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা। মসজিদের ফান্ডে টাকা আছে কিন্তু মসজিদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না। 

ভেড়ভেড়ি গ্রামের বাসিন্দা এবং মসজিদের মুসুল্লি আজগর আলী বলেন, মসজিদে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ২০১০ সালে অপরিকল্পিতভাবে মূল ভবনের সাথে একটি ভবন নির্মাণ করা হলেও সেটিও এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়নি। ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা মুসুল্লিরা অনেক কষ্টে নামাজ আদায় করে। 

কিশোরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এবং চাঁদখোসাল মসজিদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল বলেন, মসজিদের দান বাক্স এবং অন্যান্য মিলে প্রতিমাসে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা জমা হয়। বর্তমানে মসজিদ ফান্ডের লাখ লাখ টাকা ব্যাংকে অলস পড়ে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানা অফিসার ইনচার্জের যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া কেউ কোনো টাকা উত্তোলন করতে পারবে না। ইতিহাস ঐতিহ্যর ধারক এ মসজিদটিকে কিভাবে উত্তরবঙ্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মসজিদ হিসাবে নির্মাণ করা যায় সে বিষয়ে কমিটির লোকজনের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চাঁদখোসাল মসজিদ কমিটির সভাপতি রোকসানা বেগম বলেন, প্রাচীন স্থাপত্য ভেঙ্গে নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করার কোনো সুযোগ নেই। এলাকাবাসী এবং মসজিদ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করে আলাদা জায়গায় আরো একটি ভবন নির্মাণ করা যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মসজিদের দখলকৃত জমি উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, মসজিদের জমি ওয়াকফ করা কিনা আমি জানিনা। যদি ওয়াকফ করা হয়ে থাকে তাহলে সরকারের আলাদা প্রতিনিধি নিয়োগ থাকবে। সর্বোপরি লকডাউনের পর কাগজপত্র যাচাই করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন