শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

লাইলাতুল কদর ও সাদাকাতুল ফিতর

আপডেট : ০৭ মে ২০২১, ১০:১৬

লাইলাতুল কদর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনন্য নেয়ামত। ‘শব’ ফারসি ও ‘লাইলাতুন’ আরবি শব্দ, যার অর্থ রাত্রি। আর কদর অর্থ সম্মান ও মাহাত্ম্য। তাই শবে কদর তথা লাইলাতুল কদর অর্থ হচ্ছে সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা মর্যাদার রাত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (আল-কোরআন) নাজিল করেছি কদরের রাতে। আপনি কি জানেন, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনি। এই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতা ও রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশে অবতীর্ণ হয়। শান্তি, যা বিরাজ করে সেই রাতের ফজর পর্যন্ত (সুরা কদর, ১-৫)।’

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে, প্রিয় নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর সন্ধান করতে বলেছেন। এখন কীভাবে লাইলাতুল কদর লাভ করব। লাইলাতুল কদর লাভ করার সর্বোত্তম উপায় হলো শেষ দশকে ইতেকাফ করা। হাদিসে প্রিয় নবি হজরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রাতটি লাইলাতুল কদরের রাত হবে, তা চেনার কিছু নির্দেশনের কথা বলেছেন। তা হলো—১. রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না। ২. রাতটি নাতিশীতোষ্ণ হবে। ৩. মৃদ বাতাস প্রবাহিত থাকবে। ৪. সেই রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত তৃপ্তিবোধ করবে। ৫. কোনো ইমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়ে দিতে পারেন। ৬. ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষিত হবে। ৭. সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে, যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো। লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য মুমিন মুসলমান রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি নফল নামাজ, আল-কোরআন তেলাওয়াত, দুরুদ ও সালাম, তওবা-ইস্তেগফার, দান-সদকা ইত্যাদি কাজের মধ্যে নিজেকে মগ্ন রাখবেন।

এ ছাড়া ঈদের আগেই আমাদের সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। সাদাকাতুল ফিতর বলা হয় ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে গরিব-দুস্থ রোজাদারদের মধ্যে বণ্টন করা সদকাকে। নারী-পুরুষ, স্বাধীন-পরাধীন, শিশু-বৃদ্ধ, ছোট-বড় সব মুসলিমের জন্য ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব। ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় মুসলমানের ওপর সাদাকাতুল ফিতর এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব ওয়াজিব করা হয়েছে। তিনি লোকদের ঈদের নামাজে বের হওয়ার আগেই তা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন।

সাদাকাতুল ফিতর বা ফেতরা বণ্টনে দুই ধরনের সময়ের কথা বলা হয়েছে—ফজিলতপূর্ণ সময় ও জায়েজ সময়। ১. ফজিলতপূর্ণ সময় :ঈদের দিন সকালে ঈদের নামাজের আগে। ২. জায়েজ সময় :ঈদের এক-দুই দিন আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা। তখন তা ওয়াজিব হিসেবেই আদায় হয়ে যাবে। তবে ঈদের দিন ঈদের নামাজের আগেই আদায় করা মুস্তাহাব। যদি কোনো কারণবশত ঈদের নামাজের আগে আদায় করতে না পারে, তাহলে পরে হলেও আদায় করা ওয়াজিব; এটা কখনো নফলে পরিণত হবে না। -হেদায়া :১/২০৮

এ বছর আমাদের দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সাদাকাতুল ফিতরের বাজারমূল্য নির্ধারণ করেছে জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা। উন্নতমানের গম বা আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ৭০ (সত্তর) টাকা দান করতে হবে। যব দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২৮০ (দুই শ আশি) টাকা, কিশমিশ দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১ হাজার ৩২০ টাকা, খেজুর দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১ হাজার ৬৫০ টাকা, পনির দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২ হাজার ৩১০ টাকা ফিতরা দিতে হবে।

পরিশেষে বলব, মহান আল্লাহ পুরো রমজানেই বান্দাদের ক্ষমা করেন। এজন্য এই মাসকে ক্ষমার মাস বলা হয়। রমজান মাস হলো ক্ষমা চাওয়ার সর্বোত্তম মাস। মাহে রমজানে আল্লাহর ফেরেশতারা বান্দাদের ক্ষমার জন্য দোয়ায় লিপ্ত থাকেন রমজান মাসে ক্ষমার বিষয়ে হজরত আবদুর রহমান বিন আওফ (রা) বর্ণনা করেন, রসুল (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইমানের সঙ্গে সওয়াব এবং এখলাসের সঙ্গে ইবাদত করে, সে নিজ গুনাহ থেকে এভাবে পবিত্র হয়ে যায়, যেভাবে সেদিন সে তার মাতৃগর্ভ থেকে জন্মলাভ করেছিল।’ (সুনানে নিশাই, কিতাবুস সাওম) তাই আসুন, চোখের অশ্রু ফেলে বলি, হে আল্লাহ, তুমি দয়াময় পরম করুণাময়। তুমি দয়ালু। আমি ভুল করে অন্যায় করেছি, আবার তোমার আশ্রয় খুঁজছি, তুমি ক্ষমা করা পছন্দ করো। তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করো আমায়, তোমার রসুলের অসিলায়। করি এই প্রার্থনা সব সময়। আমিন।

লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, সরকারি মাদ্রাসা-ই- আলিয়া, ঢাকা

ইত্তেফাক/এমআর

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন