একটা সিজদাহর কত দাম। সঠিকভাবে সিজদা দিতে না পারার ব্যথা কতটা কষ্টদায়ক তা একমাত্র বৃদ্ধরা বলতে পারবেন। আজকে আমরা কতশত সিজদাহ মিস করছি। একটিবার চিন্তা করে দেখুন ইবলিশ মাত্র একটি সিজদা না দেওয়ায় পরিণতি কত ভয়াবহ হয়েছে। ইবলিশ বড় আবেদ ছিল। সাতটি আসমানে তাকে সাত নামে ডাকা হতো। ফেরেশতাদের শিক্ষক ছিল। কিন্তু শুধু একটি সিজদাহ দিতে অস্বীকার করায় আজকে তার পরিণতি কত ভয়াবহ। একটা সিজদা দিতে অস্বীকার করায় আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয়েছে। পৃথিবীতে যা কিছু আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন, সবাই আল্লাহকে সিজদা করে। পবিত্র কোরআনে সে কথায় বিধৃত হয়েছে, আর আসমানসমূহ ও জমিনের সবকিছুই আল্লাহর জন্য অনুগত্য ও বাধ্য হয়ে সকাল-সন্ধ্যায় সিজদা করে এবং তাদের ছায়াগুলোও। (সুরা রাদ, আয়াত নম্বর ১৫)। আর আসমান ও জমিনের যত প্রাণী এবং ফেরেশতা আছে সবাই আল্লাহকেই সিজদা করে, তারা অহংকার করে না। তারা তাদের উপরস্থ রবকে ভয় করে এবং তাদেরকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা তা পালন করে। (সুরা নাহল, আয়াত নম্বর ৫০)।
আসমান-জমিনের সকল প্রাণী ও ফেরেশতা আল্লাহর সামনে অবনত মস্তকে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। অহংকারের বশীভূত হয়ে আল্লাহর অবাধ্যতা করে না। কিন্তু আমরা কেন প্রতিনিয়ত আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হচ্ছি। প্রতিদিন পাঁচ বার আল্লাহকে সিজদা করার জন্য মুয়াজ্জিন আহ্বান জানানোর পরেও আমরা অহংকার ও আত্মগরিমায় বুঁদ হয়ে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হই! আল্লাহ তাআলা বলেন, আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা রহমান (আল্লাহ)-কে সিজদা করো, তখন তারা বলে, রহমান কী? তুমি আমাদেরকে আদেশ করলেই কি আমরা সিজদা করব? আর এটা তাদের পলায়নপরতাই বৃদ্ধি করে। (সুরা ফুরকান, আয়াত নম্বর ৬০)। সিজদাহ হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সাব থেকে সহজ মাধ্যম। আর সিজদাও আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। সিজদাকারীকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। হাদিসে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, বান্দা আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হয়, যখন সিজদারত থাকে। অতএব তোমরা তখন অধিক দোয়া করতে থাকো। (মুসলিম, হাদিস : ৪৮২) সিজদাকারীর চেহারায় আলাদা একধরনের নূর থাকে। হূদয়ে থাকে প্রশান্তি। নবি করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার যে কোনো উম্মতকে কিয়ামতের দিন আমি চিনে নিতে পারব। সাহাবিরা জিগ্যেস করেন, এত মানুষের মধ্যে আপনি তাদের কীভাবে চিনবেন? তিনি বলেন, তোমরা যদি কোনো আস্তাবলে প্রবেশ করো যেখানে নিছক কালো ঘোড়ার মধ্যে এমন সব ঘোড়াও থাকে, যেগুলোর হাত, পা ও মুখ ধবধবে সাদা, তবে কি তোমরা উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে না? সাহাবিরা বললেন, হ্যাঁ, পারব। তিনি বলেন, ঐ দিন সিজদার কারণে আমার উম্মতের চেহারা সাদা ধবধবে হবে, আর অজুর কারণে হাত-পা উজ্জ্বল সাদা হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস :২৮৩৬)
একবার চিন্তার রুদ্ধদ্বার উন্মুখ করে ভাবা দরকার আমরা প্রতিনিয়ত কতগুলো সিজদা বাদ দিচ্ছি। আমাদের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হবে। যৌবন বয়সেই তৃপ্তি ভরে সিজদা দেওয়া। যেন বৃদ্ধ বয়সের অপারগতা এখনই কেটে ওঠে। এ জন্য আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে সিজদা করো এবং ইবাদত করো।’ (সুরা নাজম- ৬২)।
লেখক: তরুণ প্রাবন্ধিক
ইত্তেফাক/কেকে