শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হোর্সে লুইস বোর্হেসের গল্প: বিশ্বাসঘাতক ও বীরের ধারণা

আপডেট : ১৪ জুন ২০২০, ২১:১৭

সুতরাং সেই আদর্শ, প্লেটোনিক বর্ষ 
ঘূর্ণাবর্তনে দূর করে নতুন ন্যায় ও অন্যায়
ঘুরপাক খায় বরং পুরাতন জঞ্জালেই;
প্রতিটি মানবই যেন নর্তক আর তাদের পদবিক্ষেপ
পা মেলায় যেন কোনো ঘণ্টার উন্মত্ত ঝনঝন ধ্বনির সাথে। 
ডব্লু. বি. ইয়েটস: মিনার (দ্য টাওয়ার)
 

অভিজাত নানা রহস্য কাহিনির উদ্ভাবক ও আলঙ্কারিক চেস্টারটন এবং কিছুটা প্রাসাদের পরামর্শক লিবনিজের (প্রাক-প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলার উদ্ভাবক) দ্বারা ভীষণ প্রভাবিত হয়ে আমার অলস বিকেলগুলোয় এই গল্পটি লেখার ভাবনা আমি ভেবেছি যা হয়তো কোনোদিন আমি লিখব এবং যা ইতোমধ্যেই আমাকে কিছুটা হলেও যৌক্তিক প্রতিপন্ন করেছে। গল্পটির পুঙ্খানুপুঙ্খ নানা দিক, সংশোধন, সমন্বয় সাধনসহ নানা কাজ এখনো বাকি; গল্পটির কিছু এলাকা এখনো আমার নিজের কাছেই পুরোপুরি প্রকাশিত হয়নি; আজ, ১৯৪৪ সালের ৩ জানুয়ারি, আমি গল্পটিকে এভাবে দেখতে পাচ্ছি:

ঘটনাটি ঘটছে একটি নির্যাতিত তবে মুক্তির সঙ্কল্পে অনমনীয় কোনো দেশে: পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড অথবা ভেনেশিয়ান রিপাবলিকে, দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশে অথবা বলকান কোনো রাষ্ট্রে: অথবা এটা ঘটেছে, যেহেতু এ গল্পের কথক সাম্প্রতিক সময়ের এক গল্পকার, তার গল্প উনিশ শতকের মধ্যভাগে বা শুরুর সময়ে ঘটেছে। আমাদের বরং বলতে দিন (বর্ণনার সুবিধার্থেই) যে ঘটনাটা ঘটেছিল আয়ারল্যান্ডে, ১৮২৪ সালে। গল্পের কথকের নাম রায়ান; সে আইরিশ বিদ্রোহের শহিদ ফার্গ্যুস কিলপ্যার্ট্রিকের পৌত্র—ফার্গ্যুস কিলপ্যার্ট্রিক এক চিরতরুণ, বীরত্বপূর্ণ, সুন্দর ও নিহত শহিদদ যার কবর রহস্যজনকভাবে তছনছ করা হয়েছিল, যাঁর নাম ব্রাউনিং এবং হুগোর কবিতার পঙক্তিতে শোভা বাড়িয়েছে, চারপাশে রক্তিম জলাভূমির ভেতরে একটি ধূসর পর্বতে যার ভাস্কর্য দণ্ডায়মান। 

কিলপ্যার্ট্রিক ছিলেন আসলে স্বদেশভূমি মুক্তির এক পরিকল্পনাকারী, পরিকল্পনাকারীদের এক গোপন ও উজ্জ্বল নেতা; মোজেস যেমন মোয়াবের ভূমি থেকে ইহুদিদের নেতা হিসেবে তার প্রভা ছড়িয়েছেন তবু পৌঁছাতে পারেননি তার জনগোষ্ঠীকে প্রতিশ্রুত স্বপ্নের ভূমিতে, কিলপ্যার্ট্রিকও তেমনি আইরিশ জনতার জয়সূচক বিদ্রোহের আগেই বিনাশ হয়েছেন, যে বিজয়ের তিনি স্বপ্ন দেখেছেন বা পরিকল্পনা করেছেন। তবে আজ তার মৃত্যুর শতবার্ষিকী যতই কাছে ঘনিয়ে আসছে, ততই তার মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত ঘটনাবলিও রহস্যাবৃত হয়ে উঠছে; রায়ান, তার পিতামহের একটি জীবনী লেখার কাজে ব্যাপৃত হতে গিয়ে আবিষ্কার করে যে এই রহস্য একটি সাদামাটা পুলিশি তদন্তের পরিসরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কিলপ্যার্ট্রিকের মৃত্যু সম্পর্কে এটাই জানা যায় যে প্রেক্ষাগৃহে একটি নাটক দেখার সময় তিনি খুন হন; ব্রিটিশ পুলিশ অবশ্য কখনোই সেই হত্যাকারীকে খুঁজে পায়নি; ইতিহাসবিদেরা বলেন, এতে অবশ্য ব্রিটিশ পুলিশের সুনাম খুব একটা ক্ষুণ্ন হয়নি যেহেতু সম্ভবত: পুলিশই তাকে হত্যা করেছিল। তবে এই রহস্যের আরো কিছু দিক রায়ানকে বিব্রত করছে। যে বিষয়গুলো রায়ানকে বিব্রত করছে তা কিছুটা চক্রাকার প্রকৃতির; এই চক্র যেন পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে বা সমন্বয় করছে দূর নানা এলাকার বা দূর নানা সময়ের ঘটনার। যেমন, কিলপ্যার্ট্রিকের মৃত্যুর পর তার দেহ যে পুলিশ অফিসাররা পরীক্ষা করেন, তারা তার দেহে একটি সিল গালা করা চিঠি পেয়েছিলেন যেখানে তাকে সেদিন সন্ধ্যায় থিয়েটার দেখতে যেতে মানা করা হয়েছিল; ঠিক যেন জুলিয়াস সিজারের মতো, সিনেট ভবনের প্রাসাদে যাবার পথে তার কাছে ঠিকই একটি চিরকূট এসেছিল যেখানে তাকে সতর্ক করা হয়েছিল যে সিনেট ভবনের সামনে তার বন্ধুরা তার জন্য ছুরি হাতে অপেক্ষা করছে, কীভাবে তাকে হত্যা করবে সেই সতর্কবাণীর পাশাপাশি হত্যাকারী বা প্রতারকদের নামও সেই চিরকূটে ছিল। সিজারের স্ত্রী কালপুর্নিয়া আগের রাতে দুঃস্বপ্নে একটি ভবনের ভেঙে পড়া দেখেছিলেন যা সিনেটের বিচারে সিজারের মৃত্যুদণ্ডের বিধানের ইঙ্গিত; একইভাবে কিলপ্যার্ট্রিকের মৃত্যুর আগে সারা দেশে অনামা মানুষের মুখে মুখে এক মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে কিলগারভানের বিশাল মিনারটি আগুনে পুড়ে গেছে যা তার আশু মৃত্যুর ইঙ্গিত যেহেতু কিলগারভানেই তার জন্ম। সিজারের মৃত্যু এবং এক আইরিশ বিদ্রোহী নেতার হত্যার দুই ঘটনার এই সমান্তরলতা রায়ানকে এমন অনুমানে উদ্বুদ্ধ করে যে সময়ের আছে কোনো গোপন আঙ্গিক, পুনরাবৃত্ত নানা রেখার একটি নির্দিষ্ট বিন্যাস। রায়ান ভাবেন কন্ডোর্সেটের আবিষ্কৃত দশমিকের ইতিহাস, হেগেল, স্পেঙ্গলার ও ভিকো প্রস্তাবিত অঙ্গসংস্থানবিদ্যা এবং হেসিওদের মানবদের কথাও তিনি মনে করেন যাদের সামাজিক অবস্থান স্বর্ণ থেকে লৌহে অবনমিত হয়েছিল। রায়ান আরো ভাবেন আত্মার দেহান্তরপ্রাপ্তির কথা, যে ভাবনা কিনা কেল্টিক সাহিত্যে ত্রাসের সূচনা করেছে এবং সিজার নিজেই ব্রিটিশ ড্রুইডদের ভেতর এই ভাবনার বীজ ছড়িয়ে দিয়েছেন। রায়ান তাই ভাবতে থাকেন যে ফার্গ্যুস কিলপ্যার্ট্রিক হবার আগে তিনি ছিলেন জুলিয়াস সিজার। তবে এক কৌতূহলোদ্দীপক আবিষ্কার দ্বারা তিনি এই চক্রাকৃতি গোলকধাঁধা থেকে মুক্তি পান, যে আবিষ্কার কিনা রায়ানকে আরো একটি ভাবনায় ডুবিয়ে দেয়, আরো তির্যক ও অসমসত্ত্ব সব গোলকধাঁধার ভাবনায়: মৃত্যুর দিন ফার্গ্যুস কিলপ্যার্ট্রিককে বলা এক ভিখিরির কিছু সংলাপ শেক্সপিয়ার যেন তার ‘ম্যাকবেথ’-এ আগেই বলে গেছিলেন। এই ইতিহাস যার কিনা আর এক ইতিহাসের অনুলিপি করা উচিত ছিল, ছিল যথেষ্ট বিষ্ময়কর... রায়ান আবিষ্কার করেন যে ১৮১৪ সালে জেমস আলেক্সান্দার নোলান, কিলপ্যার্ট্রিকের সঙ্গীদের ভেতর যিনি ছিলেন সবচেয়ে পুরনো, শেক্সপিয়ারের প্রধান নাটক ইতোমধ্যেই গেইলিক ভাষা বা আইরিশদের ভাষায় অনুবাদ করে ফেলেছিলেন। হ্যাঁ, তিনি ‘জুলিয়াস সিজার’ অনুবাদ করে ফেলেছিলেন। আর্কাইভ বা পুরাতন নথিপত্রের সংগ্রহশালায় রায়ান নোলানের লেখা একটি প্রবন্ধের পাণ্ডুলিপিও খুঁজে পান যা কিনা ছিল স্যুইস ফেস্টসপিয়েলের বিষয়ে: বিপুল পরিসরের ও ভ্রাম্যমাণ থিয়েটারে কেমন হাজার হাজার অভিনেতা দরকার হয় এবং প্রতিটি শহর বা পর্বতে যেখানেই এমন থিয়েটার প্রদর্শিত হতো, সেখানে ঐতিহাসিক ঘটনাপর্বগুলো কীভাবে অভিনীত হতো সে বিষয়ক রচনা। আরো একটি অপ্রকাশিত নথি থেকে রায়ান আরো জানতে পারে যে আইরিশ বিপ্লবীদের শেষ বৈঠকে সভাপতিত্ব করার সময় কিলপ্যার্ট্রিক দলের এক বিশ্বাসঘাতকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশে স্বাক্ষর করেন এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সেই বিশ্বাসঘাতকের নাম অবশ্য পরে নথিপত্র থেকে মুছে ফেলা হয়। কিলপ্যার্ট্রিকের দয়ালু প্রকৃতির সঙ্গে অবশ্য এই নির্দেশ খাপ খায় না। রায়ান এই ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে (এই অনুসন্ধানটিই আমার গল্পের প্লটের ফাঁকের একটি জায়গা) এবং রহস্যের উদ্ঘাটনে সমর্থ হয়।

কিলপ্যার্ট্রিক এক প্রেক্ষাগৃহে নিহত হন, তবে গোটা শহরই ছিল একটি থিয়েটার বা প্রেক্ষাগৃহ যেহেতু অভিনেতারা ছিলেন একটি আস্ত সেনাবাহিনী, এবং তার মৃত্যুতে মুকুটাবৃত নাটকটি বহু বহু দিন ও বহু বহু রাত জুড়ে চলে। নিচে বলছি আসলে কি ঘটেছিল:

১৮২৪ সালের ২ আগস্টে আইরিশ বিদ্রোহী, তারা দেশমাতৃকা মুক্ত করার পরিকল্পনা ছক কষছিলেন, তারা সবাই সমবেত হলেন। গোটা দেশই ছিল বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত; তবে, গোটা বিদ্রোহের পরিকল্পনার ভেতরে কিছু একটা যেন ইতোমধ্যেই হেরে বসে আছে: কেউ কি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে? গোটা বিদ্রোহী বাহিনীতে ছিলেন মাত্র একজন বিশ্বাসঘাতক। ফার্গ্যুস কিলপ্যার্ট্রিক জেমস নোলানকে দিলেন সেটা তদন্তের ভার। খুঁজে বের করতে হবে যে কে বিশ্বাসঘাতক? নোলান তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করলেন এবং ভরা বৈঠকের ভেতর ঘোষণা দিলেন যে বিশ্বাসঘাতক আর কেউ নয় কিলপ্যার্ট্রিক স্বয়ং। অলঙ্ঘ্যনীয় নানা প্রমাণ নিজের অভিযোগের পক্ষে দাখিল করে নোলান তার তদন্তের সত্যতা প্রমাণ করলেন। আইরিশ বিদ্রোহীরা তখন তাদেরই সভাপতির মৃত্যুদণ্ড সাব্যস্ত করলেন। কিলপ্যার্ট্রিক নিজেই তার মৃত্যুদণ্ডাদেশে স্বাক্ষর করলেন। তবে একইসঙ্গে তিনি এই প্রার্থনা জানালেন যে তার দণ্ডাদেশ যেন তার দেশবাসীর ক্ষতির কারণ না হয়। কারণ কিলপ্যার্ট্রিক নিজেই বিশ্বাসঘাতক ছিলেন জানলে আইরিশ জনতার মনোবল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

আর তখনই নোলান তার বিচিত্র পরিকল্পনা সাজালেন। আয়ারল্যান্ড কিলপ্যার্ট্রিককে উল্টো দেবপূজায় ভূষিত করবে বলে অন্য বিদ্রোহী নেতারা ঠিক করলেন; কারণ আইরিশ বিদ্রোহের মূল নেতা নিজেই স্বদেশভূমির সঙ্গে প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েছিলেন এমন সূক্ষ্ণ সন্দেহও গোটা বিদ্রোহকে বিপন্ন করবে। কাজেই নোলান বাকি বিদ্রোহী নেতাদের কাছে এই প্রস্তাব রাখলেন যে কিলপ্যার্ট্রিকের মৃত্যুদণ্ড এমনভাবে কার্যকর হবে যাতে করে সাধারণ আইরিশ জনতার চোখে এমন একটি চিত্র আঁকা যায় যে স্বদেশের মুক্তির জন্যই তার মৃত্যু হয়েছে। নোলান আরো এমন একটা পথ বাতলালেন যাতে করে অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনো অজানা অনামা আততায়ীর হাতে খুন হবেন একটি সাজিয়ে তোলা নাটকীয় পরিস্থিতিতে আর সাধারণ আইরিশ জনতার কল্পনাপ্রবণ মনে এই হত্যা দেশমাতৃকার জন্য এক বীরের আত্মাহুতি হিসেবে গৃহীত হবে। তারা তখন দেশের মুক্তির জন্য আত্মবলীদানে আরো বেশি করে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিলপ্যার্ট্রিক শপথ নিলেন যে তিনি নিজেও তাকে হত্যার এই পরিকল্পনায় অংশ নেবেন যা তাকে তার বিশ্বাসঘাতকতার পাপ থেকে মুক্ত হবার ও অনুশোচনার সুযোগ দেবে এবং মৃত্যুর পর তিনি আবার পূর্ণ উজ্জ্বলতায় স্বমহিম হবেন।

নোলান, সময়ের প্রয়োজনেই, বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতি সাজিয়ে তোলার মতো পরিস্থিতি নিজে থেকে উদ্ভাবন করতে পারেননি, কাজেই জাতশত্রু ইংরেজের ঘরেরই নাট্যকার উইলয়াম শেক্সপিয়ারের নাটক থেকে তাকে চুরি করতে হলো। তিনি ‘ম্যাকবেথ’ ও ‘জুলিয়াস সিজার’ থেকে অনুকরণ করলেন। কিলপ্যার্ট্রিকের প্রতি দায়েরকৃত দণ্ড প্রকাশ্য ও গোপনে পরিপূর্ণভাবে পালিত হতে কয়েকদিন সময় নিল। অভিযুক্ত ব্যক্তি ডাবলিন শহরে প্রবেশ করলেন, আলাপ-আলোচনা করলেন, অভিনয় করলেন, প্রার্থনা করলেন, নিজেকে আবার প্রমাণ করলেন, শোকবাক্য উচ্চারণ করলেন এবং তার এই প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি যা কিনা ভবিষ্যতে আয়ারল্যান্ডে গৌরবের সঙ্গে স্মরণ করা হবে, আগেই নোলান পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। শ’য়ে শ’য়ে অভিনেতা মূল নায়কের সঙ্গে সহযোগিতা করে চললেন; কারো কারো অভিনয়ের ভূমিকা ছিল বেশ জটিল; কারো কারোটা ছিল ক্ষণস্থায়ী। তারা সবাই মিলে যা যা বললেন এবং করলেন তা রয়ে গেল ইতিহাস বইয়ের পাতায়, আয়ারল্যান্ডের আবেগতপ্ত স্মৃতিতে। কিলপ্যার্ট্রিক, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাজিয়ে তোলা এই নিয়তি যা একইসঙ্গে বীর হিসেবে তার পুনর্জাগরণ আর ব্যক্তি তার বিনাশ ঘটাবে, সেই নিয়তি দ্বারা আন্দোলিত হলেন, একাধিকবার তার বিচারকের দণ্ডাদেশের বাণী আরো কিছু শব্দরাজি ও আচরণে সমৃদ্ধতর হলো। এভাবেই নানা মানুষের অংশগ্রহণে সমন্বিত এই নাটকের অন্তিম যবনিকা উন্মোচিত হলো ১৮২৪ সালের ৬ আগস্ট। প্রেক্ষাগৃহে একটি থিয়েটার বক্সে লিঙ্কনের শববহনের জন্য আনা পর্দার সামনে একটি দীর্ঘ-কাঙ্ক্ষিত বুলেট প্রতারক ও বীর কিলপ্যার্ট্রিকের বুকে ভেদ করলে তিনি সহসা রক্তপাতের ভেতর কোনোমতে আগেই শিখে নেওয়া কয়েকটি শব্দ কোনোক্রমে উচ্চারণ করতে পারেন।

নোলানের রচনায় শেক্সপিয়ার থেকে অনুকৃত স্তবকটিই সবচেয়ে কম নাটকীয়; রায়ান সন্দেহ করেন যে নোলান এই শেক্সপিয়ার থেকে এই স্তবকটি পরে প্রক্ষিপ্ত অংশ হিসেবে বসিয়ে দেন যাতে ভবিষ্যতে কেউ আসল সত্যটির কিনারা করতে পারে। তিনি (রায়ান) বুঝতে পারেন যে নোলানের প্লটের তিনিও একটি অংশ... অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পর রায়ান তার আবিষ্কৃত সত্যের কথা কাউকে বলেন না। তিনি তার বইটি বীরের মহিমার উদ্দেশ্যেই অঞ্জলি দেন; সম্ভবত: এটাও নোলানের পূর্ব পরিকল্পনার ভেতরেই ছিল।

হোর্সে লুইস বোর্হেস: (২৪ আগস্ট ১৮৯৯-১৪ জুন ১৯৮৬) আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক। ল্যাতিন আমেরিকান সাহিত্যের প্রধানতম একজন লেখক হলেন বোর্হেস। তাঁর মৃত্যুদিনে তাঁর এই গল্পটি ইত্তেফাক সাময়িকীর পাঠকের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হলো।

ইত্তেফাক/আরএ