শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ধারাবাহিক থ্রিলার

সাইকোপ্যাথ (পর্ব ৯ )

আপডেট : ২৮ জুন ২০২০, ২৩:০১

 সাত.

রিনি এক চুমুক দিয়ে বলল, পারফেক্ট! নাইস ব্লেন্ড। সো অলোকেশ, ইউ আর অ্যা রিয়েল কফি মেকার! আই লাইক ইট।

অমনি ফিক করে হেসে ফেললেন প্রাইভেট গোয়েন্দা অলোকেশ রয়।

হাসলে যে! চোখ নাচায় রিনি।

উর্বীও মুচকি হাসে। সে বুঝতে পারছে ব্যাপারটা। উর্বী বলল, ‘কফি মেকার’ নামে অলোকেশের একটা কাহিনি আছে। বইটার নামই কফি মেকার। ডিটেকটিভ স্টোরি। তুমি ওর খুব নরম জায়গায় ল্যান্ড করেছো কি না, তাই অলোকেশ হাসছে।

তা-ই? রিনির চোখের তারায় প্রশংসা। কফিটা কিন্তু সত্যি ভালো হয়েছে। দুর্দান্ত। রিনি ওর মতামত পুনর্ব্যক্ত করে। 

থ্যাংকস রিনি। অলোক ওর প্রশংসাটুকু চেটেপুটে খেলেন। বস্তুত, যশের মোহ কার না আছে! মিষ্টি কথায় কে না ভোলে! সত্যি বলতে, যশোলোভী মানুষ নারী-বাড়ি-গাড়ি সব ছাড়তে পারে, কিন্তু খ্যাতি বা যশের মোহ ছাড়তে পারে না।

কফি খেতে খেতে নম্বর টিপল রিনি। দু’বার রিং হতেই ওপাশ থেকে ফোন রিসিভড হলো।

লুসি দেয়ার? রিনি বলল।

ইয়েস, আপ কৌন হ্যায়?

আমি রিনি সেন, রিপোর্টার, দ্য এজ। স্পষ্ট বাংলায় বলল রিনি। কারণ সে বুঝে গেছে লুসি ইন্ডিয়ান। সে হিন্দি বলছে, অথচ তার কণ্ঠে কোলকাতার টান।

মিনিট দুয়েক কথা বলেই ওরা বেশ বন্ধু হয়ে গেল। ভিনদেশে এসে পাশের বাড়ির নয়, বরং দেশি কাউকে পেলে ভালোবাসার ছোঁয়ায় মনটা ভরে ওঠে।

তুমি এখন কোথায় আছো লুসি, একটু বলবে?

ভিউব্যাংক, লোয়ার প্লেনটি রোড। লুসি কাবেরি বলল।

ওহ হো, ভেরি ক্লোজ টু মি, লুসি। আমি এখন ওয়াটল ড্রাইভের কাছে চেরি স্ট্রিট। যদি তোমার খুব অসুবিধা না হয় একটু আসবে?

কেন বলো তো?

আছে, দরকার আছে। টনির বিষয়ে একটু কথা বলতে চাই। এলে তোমার মন্দ লাগবে না। বাংলাদেশি দুজন এখানে আছেন। তোমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবো।

এবার একটু সময় নেয় লুসি। যাবে কি যাবে না, তাই হয়তো ভাবছে। পরে কী মনে করে রাজি হয়ে যায়। লুসি বলল, ওয়েট, আই’ম জাস্ট কামিং।

ফোন রেখে অমায়িক হাসে রিনি সেন।

কী ব্যাপার? কিছু হলো?

ইয়েস, শি ইজ কামিং। তুমি বরং আরো এক মগ কফি বানাও ডিটেকটিভ রয়। তোমার মুরগি আসছে। জানো তো, ইটস টু কোল্ড টুডে। তাকে আগে কফি খাইয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাও, নইলে সে তোমাকে টনির ব্যাপারে বলবে কেন! খোশমেজাজে রিনি বলল। মেয়েটা খুব ভালো। ওর ‘সেন্স অব হিউমার’ উর্বী ও অলোকেশ দুজনকেই অপার ভালোলাগায় ভরিয়ে দেয়।

বেচারা টনির নাক কাটা গেল। সে নিজের পরিচয় ভুলে গেল, কিন্তু আসামি ধরা পড়ল না।

মিনিট দশেকের মধ্যেই অলোকের দরজায় ডোর বেল বাজে।

ওই তো, লুসি এসে গেছে। ছুটে গিয়ে দরজা খোলে উর্বী। কিন্তু না, লুসি কাবেরি নয়, দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন বেলফিল্ড থানার ইন্সপেক্টর গ্রোভার হুক।

মিস্টার রয় ইজ হিয়ার? জানতে চান গ্রোভার হুক।

কণ্ঠ শুনে অলোকেশ তাকে চিনতে পারলেন। আসুন মিস্টার হুক। একে নিশ্চয়ই আপনি চেনেন! মিস রিনি সেন। ক্রাইম রিপোর্টার, দ্য এইজ।

দরাজ হাসলেন ইন্সপক্টের হুক। একে কে না চেনে মিস্টার রয়? শি’জ সো পাওয়ারফুল!

মানে? ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না অলোকেশ। এখানে একজন রিপোর্টারের এত দাম!

সত্যি তার অনেক পাওয়ার, মিস্টার রয়। সিরিয়াস মুখ করে বললেন হুক। মেলবোর্ন চিফ পুলিশ কমিশনার গ্রাহাম অ্যাশটন একে বেশ ভালোই চেনেন, মানেনও।

সে কী! রিনি! তুমি এত ক্ষমতাধর আগে তো বলোনি! আমরাও বুঝতে পারিনি। এবার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে উর্বী। রিনিকে সে বাচ্চাদের মতোন ঘুরেফিরে দেখে। এইটুকুন চিকনা-পাতলা মেয়ের কী পজিশন!

আরে না, আমার কোনো ক্ষমতাই নেই। এসব দেশে প্রত্যেকে তার নিজ নিজ কাজ করে খায়। একটু পান থেকে চুন খসলেই অমনি তার গদি নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। সেই অর্থে চিফ কমিশনার অ্যাশটনের নিজেরই কোনো বিশেষ ক্ষমতা নেই। আমরা যাকে পাওয়ার বলি, এখানে তাকে দায়িত্ববোধ বলে, বুঝলে উর্বী।

রিনির কথাটা মন দিয়ে শুনলেন অলোকেশ। ইয়েস, পাওয়ার অ্যান্ড পজিশন! এই নিয়ে আমাদের অহংকারের শেষ নেই। অথচ উন্নত দেশে যেচে কেউ গদিতে বসতে চায় না। তাহলে গুচ্ছের দায়িত্ব এসে কাঁধে চাপে। মিছে পাছা গরম হয়, পশ্চাদ্দেশে কাঁটার খোঁচা লাগে, কিন্তু মনের শান্তি আসে না

(চলবে)


লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]