বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শেখ সালাহ্উদ্দীন-এর একগুচ্ছ কবিতা

আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২০, ১১:১৭

অর্ধেক নেব না 
(রাশিয়ান কবি ইভগেনি ইভ্তুশেঙ্কো এর একটি কবিতার ভাবানুবাদ) 

 

না, কোন কিছুর অর্ধেক নেব না আমি 
দাও পূর্ণ  আকাশ সুদূর নিক্ষিপ্ত ধরণী  
সমুদ্র তটিনী পর্বত অথবা হিমানিপ্রপাত     
এর সবই আমার-
কম কিছুই নেব না আমি!         

না, হে জীবন! আমায় তুমি 
আংশিক দিয়ে অনুগ্রহ করো না-   
হোক সেটা সম্পূর্ণ অথবা শুন্য- তাও মেনে নেবো   
আধাআধি সুখ আমার চাই না   

তবে ওই বালিশটা ভাগাভাগিতেও আমি রাজি       
যেখানে একটি গাল কোমলভাবে চেপে ছিল   
এক নিরবলম্বি স্খলিত তারার মত 
আর ছিল তোমার আংটির অস্পষ্ট স্মারকচিহ্ন-      
 


ক্ষত 


এক টুকরো জ্বলন্ত অঙ্গার-ধরণ    
ভালবাসা কে জানে কখন   
দিয়েছিলে হাতে  
আহা কী উত্তাপ ছিল তাতে!  

দীর্ঘদিনের অযত্ন, অপরিচর্যায়    
আজ তা নিভন্ত প্রায়;   
 
আমি সেই ভালবাসার অঙ্গার 
একাকী ফুঁ দিয়ে জ্বালিয়ে রাখার  
নেব দায়ভাগ? একদিন নিভে যাবে      
সবকিছু চললে এভাবে-  
রয়ে যাবে একটুখানি দহন ক্ষত 
আজীবন বয়ে বেড়ানোর মত।   

 

অনুষঙ্গ 

 
দূরবীনের আওতায় জনপদ
চেনামুখ ভীষণ অচেনা 
মুখোশ ঢেকেছে আনবিক বোমা   
যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ!  

দস্তানার অভ্যন্তরে লুকায়িত সব        
দানবের সুচালো নখর  
সন্দেহের তীরে এফোঁড় ওফোঁড় 
বস্তুত নিরীহ পরস্পর;    
অশুভ ছায়ারা ধাবমান    
চতুর্দিকে নৈঃশব্দ্যের উদ্বাহু নৃত্য-   
 
জল-সাবানের সফেদ বুদ্বুদে 
চিত্রকর্মের প্রাণান্ত চর্চা 
অব্যর্থ জীবাণু হন্তারক   
আজ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। 

 

প্রজনন 


ফুলেরা যখন ঝরে যায় 
তাদের ঐ মৃত্যু থেকে আসে
নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা 
কুঁড়িরা প্রতীক্ষারত আত্মপ্রকাশের, 
নাহলে কবেই পৃথিবীটা পুষ্পশূন্য হয়ে যেত!  

নতুন ফুলের আগমনে আমোদিত 
প্রাচীন পৃথিবী;  অতঃপর ফল থেকে বৃক্ষদল         
ধরণীকে সবুজ করার সুখে ফের মেতে ওঠে।    
বৃক্ষের কঙ্কাল পায় মাটির ঠিকানা  
এভাবেই পৃথিবী এগোয়-  

উচ্ছল তরুণ শোণিতে ধারণ করে 
প্রয়াত পিতার সবটা অধরা স্বপ্ন,   
ধারালো তরুণী যেন ভ্রূকুটিতে জননীর চেনা সংস্করণ
সৃষ্টির বিনাশ এত সহজে কি হয়?    

বহুযুগ আগে লেখা একটি কবিতা 
নিভৃত প্রায়ান্ধকার কোনো গৃহকোণ 
অথবা আলোকোজ্জ্বল নগরীর অভিজাত কক্ষে 
পাঠকের সামনে অনন্য দৃশ্যপট তুলে আনে  
কোন কবি যা কখনো এঁকেছে প্রগাঢ় মমতায়  
চিরায়ত সৃষ্টির নেশায় মগ্ন থেকে;

এভাবেই বহুকাল বেঁচে থাকে কবি, বৃক্ষ অথবা মানুষ  
সৃষ্টির সম্ভাবনাহীন সৃষ্টির মূল্য আসলে অতি নগণ্য।

 

লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]