স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস ৬
গল্পের ভাঁজে ভাঁজে লুকোচুরি খেলে গোপন কবিতারা
জোছনা শেষ হলে রাতের কোলজুড়ে নেমে আসে তারা
বৈশাখের ভ্যাবসা কাটানো মধ্যরাত
থেকে থেকে মেঘে মাখে ঠান্ডা বাতাস
দূরে কোথাও জল ভাঙে আলো হারানো আকাশ
শুনশান নিস্তব্ধ চারপাশ
বুকের ককপিটে ঘাঁপটি মেরে থাকে দক্ষ গোলন্দাজ।
নীরব রাত অনেক কথা বলে: স্নায়ুকুঞ্জে গুঞ্জরিত হাট
নির্জনতার শব্দ প্রতিধ্বনি হয়, কলমিলতায় নড়ে ওঠে হাঁস
শব্দহীনতার আরাধ্য শক্তিকে জয় করতে শেখো
নিজের সাথে নিজের আরাধনা, একবার মুখোমুখি বসো—
করোনাক্লান্ত নববর্ষে দাপট দেখাতে পারেনি ইলশে কালচার
নগরে নগরে খাদ্যের বিক্ষোভ—‘পান্তা দে, ভাত না হোক’
দেশ ও দশের দোহাই দেওয়া চড়া দামের ব্রান্ডঅলাদের
খাই খাই বেড়েছে আরও—
কাফনের দাম চড়িয়ে দিয়েছে কিছুটা
ঘরবন্দি সময়ের সেঁলাই ছিড়ে লুকোচুরি খেলে কারখানা
লাশের মিছিল দেখার দাবিতে স্মারকলিপি লেখে কারা?
এদিকে কফিন ব্যবসায়ীদের প্রেস রিলিজ ভাইরাল হয়েছে
কাফনের দাম বাড়লে কফিনের দামও কিছুটা বাড়াবে তারা
এবার বৈশাখে হলো না মঙ্গল, হলো না শোভাযাত্রা,
আইসোলেশনের নীরবতা ভাঙে গোরখোদকের বেলচা—
*********************************************************
স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস ৭
নিরালা ঝাউবন ভেজানো সাগরের ঢেউঘেঁষা সন্ধ্যায়
আমি ডুবে যাওয়া গোধূলিপানে হেঁটে যাই
আর তুমি— আবছা অন্ধকারে
একটা নিখুঁত এনকাউন্টারের দৃশ্য আঁকো
এরপরও নগরপ্রথা টিকিয়ে রাখতে অনেকেই বেঁচে থাকে—
কপালের নিচে দুটি আর্দ্রগোলক আছে বলেই
একচোখে আলোর নাচন, অন্যটাতে আঁধার কালো
বাম নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার শব্দ ডান নাকে যায় না
শোনে দূরে থাকা দুটি কান—
আত্মিকতা একটি পৌরাণিক ধারণা
ডিজিটের হিসেব দিয়ে জীবনের সবকিছু হয় না।।
*********************************************************
স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস ৮
বৃষ্টির বেহালা বাজে
রাগ ভৈরবী
স্ফটিক
আঙিনার মাটি
কর্নিয়ায় চিলিক পাড়ে সরু বিজলি
বাজে নিনাদ, জলতরঙ্গ
ঝমঝম মুষলে ঝরি
বুকের ইন্দিরায় উছলে পড়ে বারি
ধ্যানমগ্ন ধারকান
কুচকানো কপালে তিলক পড়ায় পত্রপল্লবী
সরোদ বাজে জলজ বাতাসে
গুরু গুরু সন্ধ্যারাতে
গম্ভীর চকোরি
বজ্রশিখা খুঁজে ফেরে মেম্বারের বাড়ি
ত্রাণচোর নেতারা চেতনায় গর্ভবতী
এদের অ্যাবরশন করাতে হবে
শেষ হোক টাউটের রাজনীতি
জয় বাংলা মানে প্রাণের সিম্ফনি
আমি তুমি আপনি—
*********************************************************
স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস ৯
অন্তরীক্ষে নীলের সোপান
জলজ বুকে শৈবাল ভাসমান
আকাশজালে হই হই ভিড়
ঠোঁটের কোণে একা বিড়বিড়
ফেসবুকজুড়ে 'ব্যস্ত বাজার—
শপিং কমপ্লেক্স, ফুড কর্নার'
সচেতন স্বাস্থ্যবিধির ফল।
করতলে বেড়েছে নজর
টাচস্ক্রিনে বুড়ো আঙুল চঞ্চল
স্থির নিশানায় আইবল
এই তো চপল ভ্রূ, এই তো ছলছল,
বুক ভরা গুমোট হৃদয় টনটন
দীর্ঘশ্বাসে ভরে দম—
মনের ওয়াইফাই পিন জানা নাই
তবুও মোবাইলে হটস্পট অন
বেঁচে থাকাটাই সুখের কারণ
বোকারা অসুখী চিরন্তন—
*********************************************************
স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস ১০
ডালে ডালে গন্ধরাজ আর একটি ফিঙে পাখি
খুব ভোরে দুইটি কোকিল করে ডাকাডাকি
সুখতারা উঁকি দেয় ওই আকাশে
চোখের পাতার নিচে পাখা মেলে কে?
শিমের সময় শেষ, কাকরোল লতিয়ে উঠে মাচানে;
আতা গাছ ফাঁকা হলো, চালতা ভরবে ফুলে,
বৈশাখী ঝড় নামে কামরাঙ্গা বনে
জলের টঙ্কার চৌচালা টিনে
মনে মনে বকুলের মালা গাঁথি আমি
তোমারও কী আজ তবে একা যামিনি!
এই আঁধার কেটে যাবে, চাতক খেলবে মেঘে মেঘে;
কামিনীর সুবাসে ভরবে শ্মশানের বাতাস,
লাকডাউন খুলবে, তবু গোরস্থানে থাকবে ভয়াল নীরবতা—
রাতের রূপসীরা পাবে না খুঁজে কুটুমের ঠিকানা
জমজমাট পানশালায় ফিরবে না অনেকে আর
বিশ্বায়নের বিষদাঁত দেখিয়ে দিলো করোনাভাইরাস
ভেঙে পড়েছে সব পারিপার্শ্বিক মেকি বিশ্বাস
এই নৈর্ব্যক্তিক অবিশ্বাসের কালে
নিখাঁদ প্রেমের যাত্রা শুরু হলো তোমার আমার।
*********************************************************
ইত্তেফাক/জেএইচ