শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাধা চক্রবর্তীর সঙ্গে আলাপচারিতা

আপডেট : ২২ জুলাই ২০২১, ১৬:১৪

রাধা চক্রবর্তী, আমাদের অনেকের কাছে আমরা যে অনুবাদ সাহিত্যসমূহ পাঠ করি –তথা বাংলা সাহিত্যের প্রধান প্রধান সাহিত্যিক যথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং মহাশ্বেতা দেবীর সাহিত্যকর্মের দুর্দান্ত অনুবাদ – তারই  সমার্থক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাশ্বেতা দেবীর রচনা, নারী সাহিত্য, দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য, সমাজের অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের লেখকদের রচনা এবং তুলনামূলক সাহিত্য অনুবাদে বিশেষ দক্ষতা অর্জনকারী এই প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ তাঁর অনুবাদক, সমালোচক এবং লেখক হিসেবে বেড়ে ওঠার সময়ে অর্জিত বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা নিয়ে একান্ত এই বৈঠকে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। 

আপনি একজন বিশিষ্ট অনুবাদক, সম্পাদক, সমালোচক এবং লেখক। কীভাবে আপনি এই যাত্রা শুরু করেছিলেন?

এগুলি পৃথক হলেও এদের ভূমিকা পরস্পর সংযুক্ত, চলার পথ আলাদা হলেও শব্দের জগতের সাথে আমার সম্পৃক্ততা মূলত: একই অর্থ বহন করে।  শৈশবকাল থেকেই আমার লেখালেখি শুরু, তবে অনেক বছর পরে যখন পত্রিকার সম্পাদকরা আমার কবিতা প্রকাশের জন্য অনুরোধ করতে শুরু করেছিলেন তখন আমি আমার সৃজনশীল কাজগুলো প্রকাশের ব্যাপারে ভাবতে শুরু করি।  আমার কবিতাগুলি এখন ভারতের এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুস্তক ও পত্রিকায় পাওয়া যাবে। এই অতিমারিকালে অবদান রাখার জন্য পুশকার্ট পুরস্কার ২০২০ এর জন্য মনোনীত একটি বিশ্বব্যাপী গণমানুষের কবিতা (মিউজ পাই প্রেস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ছিল দুর্দান্ত এক যৌথ অভিজ্ঞতা।

সমালোচক হিসেবে আমার কাজ গবেষণার সাথে জড়িত থাকার মাধ্যমে বিকশিত হয়েছিল।  এক্ষেত্রে বলা যায়, ফেমিনিজম এন্ড কনটেমপোরারি উইমেন রাইটারস (রাউটলেজ, ২০০৮) শীর্ষক রচনাটি আমার ডক্টরাল গবেষণা থেকে উঠে এসেছিল, এটি ছিল মহাশ্বেতা দেবী, অনিতা দেশাই, ডরিস লেসিং, টনি মরিসন, মার্গারেট আতউড এবং বুচি এমেচেতার মতো লেখকদের নিয়ে একটি সংমিশ্রিত সাংস্কৃতিক গবেষণা। নভেলিস্ট টেগোর (রাউটলেজ, ২০১৩) বইটিতে ঠাকুরের উপন্যাসগুলিতে বর্ণিত লিঙ্গ (জেন্ডার) ও আধুনিকতার উপর আমার গবেষণামূলক কাজ ঠাঁই পেয়েছে।  আমার প্রবন্ধ এবং পর্যালোচনাগুলি ঠাকুর সাহিত্য, নারীদের রচনা, দক্ষিণ এশীয় গবেষণা, তুলনামূলক সাহিত্য এবং অনুবাদ গবেষণাসহ আমার বিশেষায়িতে কাজের ক্ষেত্রগুলো থেকেই উঠে এসেছে। 

আপনি মহাশ্বেতা দেবীর কাজ অনুবাদ দিয়ে শুরু করেছিলেন। কখন এবং কেন আপনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনুবাদ শুরু করলেন? 

এই শতকের শুরুতে, আমি সমসাময়িক বাংলা কল্পসাহিত্যের ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের ইংরেজি অনুবাদ করার চ্যালেঞ্জে নিমগ্ন ছিলাম। ক্রসিং: স্টোরিস ফ্রম বাংলাদেশ এন্ড ইণ্ডিয়া (২০০৩), ছিল কুড়িজন জীবিত লেখকের গল্প নিয়ে আমার প্রথম প্রকাশিত অনুবাদ গ্রন্থ। পাশাপাশি, আমি ইন দ্য নেম অফ দ্য মাদার নিয়ে কাজ করছিলাম, যেটিতে আমার অনুবাদ করা মহাশ্বেতা দেবী রচিত মাতৃত্ব বিষয়ক কিছু শক্তিশালী, অসাধারণ গল্প ছিল । ক্রসিং- এর অব্যবহিত পরেই এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল।

এরই মধ্যে, আমি রানি রায়ের কাছ থেকে আকস্মিক ফোন কল পেলাম –একদা আমার শিক্ষক, এখন একজন বন্ধু, পরামর্শদাতা এবং অনুপ্রেরণাকারী - আমাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখের বালি একটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ অবহেলিত রচনা অনুবাদ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।  সেই মুহূর্তে আমি যে ধাক্কা ও ভীতি অনুভব করেছিলাম তা মনে আছে। আমি প্রতিবাদ করেছিলাম এই বলে যে আমি ততটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশেষজ্ঞ নই, তাঁর কাজকে আমি যতটা ভালবাসি এবং প্রশংসা করি, কিন্তু রানি দি অনড় ছিলেন। "আমি মনে করি তুমি এই উপন্যাসটি অনুবাদ করার জন্য সঠিক ব্যক্তি," তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন। আমি যথেষ্ট আশাবাদী হয়ে উঠলাম যে আমি চেষ্টা করবো। আর এভাবেই একজন ঠাকুর অনুবাদক হিসাবে আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে তাঁর রচনাগুলির যে অনুবাদ করেছেন সে সম্পর্কে আপনার মতামত কি? 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের কাজের ইংরেজি অনুবাদগুলি তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছিল এবং নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী করেছিল। তবুও তিনি তাঁর নিজের ইংরেজি বিষয়ক জ্ঞান  সম্পর্কে সংশয়ী ছিলেন এবং তাঁর অনুবাদগুলির গুণমান সম্পর্কে অনিশ্চিত ছিলেন। এগুলির মধ্যে কয়েকটি অনুবাদ প্রায় সেকেলে এবং বলা চলে বাগাড়ম্বরপূর্ণ একটি ধরন যা সময়ের পরীক্ষায় খুব ভালভাবে উতরে যায়না। সাফল্যের প্রাথমিক উচ্ছ্বাসের পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আন্তর্জাতিক খ্যাতিতে যে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটেছিল তার জন্য এগুলি আংশিকভাবে দায়ী বলে আমি মনে করি। সুনিশ্চিতভাবেই, এগুলি মূল বাংলা রচনাগুলির অবিকল অনুলিপি নয়, বরং এগুলি ভিন্ন ভাষায় পুনঃসৃজনকৃত রচনা ভিন্ন পাঠকদের জন্য। 

অনুবাদ নিয়ে কাজ করার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনও কখনও অপ্রচলিত সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।

আমরা অবশ্যই ইংরেজি অনুবাদগুলি সম্পর্কে জানি, তবে এটি মনে রাখা দরকার যে ঠাকুর প্রায়শই সারগ্রাহী উৎসগুলি থেকে এবং মূল রচনার ভাষা ও সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পর্কে অধিক জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের সহযোগিতার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ভাষায় রচিত অসংখ্য প্রাক-আধুনিক কবিতাও বাংলা ও ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। আমি সম্প্রতি মধ্যযুগীয় কবিতার উপর ঠাকুরের অনুবাদ সম্বলিত একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছি, যেখানে আমি যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে এগুলি অবশ্যই পাঠ করা উচিত, আক্ষরিক রূপে নয়, নিখুঁত তরজমা যা মূল রচনার কাছাকাছি নিয়ে যেতে চায় বরং ট্রান্সক্রিয়েশন রূপে যা প্রাথমিক পর্যায়ের এই রচনাগুলিকে নতুন, অপরিচিত এক অনুষঙ্গে পুনঃস্থাপিত করে। উদাহরণস্বরূপ, ভক্তি কাব্যগ্রন্থে তাঁর অনুবাদগুলিতে দেখা যায় নানাবিধ ইতিহাস ও ভৌগলিক এলাকা জুড়ে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের এক মেলবন্ধন ঘটেছে। 
 
অনুবাদকৃত কোন বিষয় থেকে একই ভাষায় কি অনুবাদ করা যেতে পারে? এ ধরনের পরিমার্জনা কি  মানসম্পন্ন হবে?

অনেক সাহিত্য সংস্কৃতিতে আন্তঃভাষা অনুবাদের দেখা পাওয়া যায়। কখনও কখনও কোনও ভাষার আনুষ্ঠানিক অথবা শাস্ত্রীয় সংস্করণের রচনাগুলিকে একটি আধুনিক, কথ্য ভাষা রীতিতে অনুবাদ করা হয় ভিন্ন ভিন্ন সময়ের বিপুলসংখ্যক পাঠকসাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। প্রায়শই এগুলিকে গণতান্ত্রিকীকরণের পদক্ষেপ হিসেবে পাঠ করা যেতে পারে, শক্তিশালী ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন থেকে উঠে আসা যা সামাজিক ও ভাষাগত শ্রেণিবিন্যাসের প্রশ্ন নিয়ে আসে। এই ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে "উচ্চ" এবং "জনপ্রিয়" সংস্কৃতির মধ্যেকার ব্যবধান ঘুচানোর প্রচেষ্টা করা যেতে পারে । এই অনুবাদগুলি পুরনো গ্রন্থগুলির জন্য একটি নতুন ও বদলে যাওয়া ‘পরবর্তী জীবন’ প্রদানের মাধ্যমে নতুন পাঠকে পরিণত করার স্বপ্ন দেখে। বাজারও এগুলির মধ্যে কিছু বিষয় নির্ধারণ করে, বিশেষত: স্থায়ী রচনাগুলিকে আধুনিক ভাষান্তরে উন্নীত করা বিষয়টি আসে, যেগুলি উচ্চশ্রেণির রচনা হিসেবে বিবেচিত। আন্তঃভাষা অনুবাদ, অনুবাদ ও অভিযোজনের মধ্যেকার সীমারেখা অস্পষ্ট করে দিতে পারে।      


 
একজন লেখক দ্বারা বিভিন্ন ভাষার রচনা ইংরেজিতে অনুবাদ করার বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখবেন? 
 
এই প্রশ্নটি মহাশ্বেতা দেবীর রচনার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, যেখানে আমরা হিটারোগ্লোসিয়া (একটি একক ভাষার মধ্যে স্বতন্ত্র উপাদানের সহাবস্থানকে বর্ণনা করে) এবং বহুভাষিকতার অসাধারণ উদাহরণ খুঁজে পাই, বাহ্যত একবচনীয় গ্রন্থে। ’ধ্রুপদী’-এর মতো একক গল্পে আমরা শুচিতা ও কথ্য বাংলা, সাঁওতাল গান, হিন্দি শব্দ ও বাক্যাংশ খুঁজে পাই এবং ইংরেজি শব্দসমষ্টি পাশাপাশি বিভিন্ন উৎস থেকে উদ্ধৃতি পাই। এ জাতীয় গ্রন্থগুলি একবচনীয় দৃষ্টান্তকে চ্যালেঞ্জ জানায় এটি নির্দেশিত করতে যে আমাদের সাংস্কৃতিক নীতিমালা এবং আমাদের সংবেদনশীলতা  আগে থেকেই সবসময়েই বহু ভাষিক।  নাট্যরূপ দেয়া, রচনার কথায়, বিভিন্ন ভাষা এবং ভাষাগত নিবন্ধগুলির গতিশীল মিথস্ক্রিয়ার ক্ষেত্রে "খাঁটি" ভাষার ধারণাটি অস্থিতিশীল। সামাজিক ও রাজনৈতিক শ্রেণিবিন্যাস, যা ভাষার এই পারস্পরিক ক্রিয়ার অধীন, পাঠ্যের আড়ম্বরপূর্ণ ভাষার মাধ্যমে পুরোভাগে চলে আসে। এই ধরনের উদাহরণের ক্ষেত্রে অনুবাদককে দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, বিশেষভাবে ইংরেজির সাথে, চিহ্নিত ভাষা হিসেবে যেটিকে দক্ষিণ এশিয়ার ভাষাগত সংস্কৃতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি অনুবাদকের কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা পরীক্ষা করে এবং মূল রচনার চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় উপযুক্ত কৌশলগুলি তলব করার ক্ষমতা দাবি করে। 

এই সমস্ত লেখকের কাজ অনুবাদ করা কি আপনার নিজের লেখা এবং সমালোচক হিসাবে আপনার চিন্তাপ্রক্রিয়াকে কি প্রভাবিত করেছে? 

সমালোচক হিসাবে, একজন বাইরে থেকে একটি বই পড়েন, যেমনটি ছিল। এটি হচ্ছে বিশ্লেষণমূলক কর্মদক্ষতা, যা মন দিয়ে পড়ার পরে সামনে আসে। অনুবাদ করার সময় আলাদা কিছুই ঘটে। সাহিত্য সমালোচনার মতো অনুবাদেও নিবিড় পাঠ, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং প্রাসঙ্গিকতা জড়িত। তবে অনুবাদ করার আসল প্রক্রিয়া যৌক্তিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অনুষঙ্গকে ছাড়িয়ে আরও অনেক দক্ষতার সাথে সংযুক্ত। ভাষার জন্য অনুভূতির প্রয়োজন, আবেগের একটি জায়গা থাকতে হবে এবং কৌশলগুলি খুঁজে পেতে সৃজনশীল ক্ষমতা থাকতে হবে যা নতুন একদল পাঠকের জন্য একটি নতুন ভাষায় রচনাটি পাঠযোগ্য করে তুলবে। গুরুতর ব্যবধানের জন্য সংগ্রাম করার পরিবর্তে কেউ পুনর্লিখন বা পুনর্নবীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূল রচনার দিকে আকৃষ্ট হয়। অনুভূতিকে নাড়িয়ে দেয়া উপাদানগুলি এবং রচনার আনন্দ অনুবাদ প্রক্রিয়াকে প্রাণবন্ত করে তোলে। সমালোচনা পাঠ্যকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের জন্য একটি স্থিতিশীল সত্তা হিসাবে বিবেচনা করে, যেখানে অনুবাদ ‘মৌলিক’ স্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলে এবং এর সম্ভাব্য পরিবর্তনশীলতা সম্পর্কে আমাদের সচেতন করে তোলে। একজন শিক্ষানবীশ অনুবাদক হিসেবে আমি মনে করি আমি ওই রচনাগুলির ‘লেখকীয়’ দিকটির প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়েছি যেগুলি আমি সমালোচক হিসাবে পাঠ করেছি। আমি আরও স্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছি কীভাবে অনুশাসনগুলি লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং সেই পদ্ধতি যেখানে অনুবাদ প্রভাব বিস্তারকারী সাহিত্য ও ভাষাগত শ্রেণিবিন্যাসে রূপান্তর ঘটাতে পারে। 

আপনি একাডেমিক কাজ, অনুবাদ এবং লেখালেখির এই দোলাচলের মধ্যে কীভাবে সময় খুঁজে পান?

এটি শক্ত করে টাঙ্গানো কোন দড়ির উপর হাঁটার মতো বলতে পারেন। কিন্তু যদি কোনকিছু পরিমাণে যথেষ্ট হয়ে যায় তাহলে কেউ তার জন্য সময় বের করার চেষ্টা করে। সর্বদা সময়ের বিরুদ্ধে দৌড়নো ভাবনার বিরুদ্ধে হয়ে থাকে।  অনেক কিছু করার আছে এবং খুব অল্প সময়। একটি জীবনকালও অনেক ছোট। 

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? আমাদের জন্য নতুন কিছু আছে কি?

আমি শব্দের সাথে বিভিন্ন রোমাঞ্চকর অভিযানে নিজেকে নিমগ্ন থাকতে দেখি। বর্তমানে, আমি দ্য টেগোর ফেনোমেনা (অ্যালেন লেন, আসন্ন) নিয়ে কাজ করছি, একটি বিপুল রচনাসমগ্র, যা ঠাকুরের কাজগুলিকে একজন পলিম্যাথ হিসেবে উপস্থাপন করে যার সাহিত্য সম্ভারে জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ, শিক্ষা, সামাজিক সমস্যা, প্রকৃতি এবং পরিবেশ, আধ্যাত্মিকতা, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও চারুকলা, গ্রামীণ পুনর্গঠন, ধর্ম, দর্শন এবং মানবতাবাদসহ অসাধারণ সব বিষয় রয়েছে। ঠাকুরের শেষ উপন্যাস চার অধ্যায়-এর একটি নতুন অনুবাদ কাজ চলছে। 

সীগাল খুব শিগগীরেই প্রকাশ করতে যাচ্ছে আমাদের শান্তিনিকেতন, মহাশ্বেতা দেবীর শান্তি নিকেতনে বিদ্যালয়ের ছোট্ট ছাত্রী হিসেবে কাটানো দিনগুলোর স্মৃতিচারণমূলক রচনা নিয়ে আমার ইংরেজি অনুবাদ। ১৯৩০এর দশকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাঞ্জল উপস্থিতিতে শান্তিনিকেতনের জগতকে আবাহন করে এই স্মৃতিচারণায় একটি পুরো তত্ত্ব, একটি অতীত হয়ে যাওয়া যুগ জীবন্ত হয়ে ফিরে আসে। মহাশ্বেতা দেবী: রাইটার, এক্টিভিস্ট, ভিশিওনারি, একটি সম্পাদিত খণ্ড, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে লেখিকার জীবন, কর্ম এবং সমালোচনামূলক সংবর্ধনা তুলে ধরে গবেষণামূলক নিবন্ধ এবং অনুবাদগুলিকে একত্রিত করবে। আমি কাজী নজরুল ইসলামের নির্বাচিত প্রবন্ধগুলিও অনুবাদ করছি, যার গদ্য এ পর্যন্ত যতটা পেয়েছে তার চেয়ে বেশি মনোযোগের দাবিদার।

পাশাপাশি, আমার কবিতা ছাপার আকারে বিভিন্ন ফোরামে প্রকাশিত হচ্ছে। আমার কবিতার অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছে। আমার কবিতাগুলিকে একত্রিত করে একটি সংকলন খণ্ডে প্রকাশিত করা একটি দীর্ঘ বিলম্বিত প্রকল্প, যা হওয়ার অপেক্ষায়…

ইত্তেফাক/এসআই