শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আলীম হায়দারের ‘স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস’ (৪)

আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২১, ২১:৫০

স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস ১৬

আষাঢ়ের আকাশ ভরা 
ঝকঝকে নক্ষত্র
চুলের ঢেউয়ে ঢেউয়ে 
মিহি বাতাস
গায়—
রূপালী গায়ত্রী মন্ত্র;

মেঘের বাতায়ন খোঁজে
তিনমানুষ গুড্ডি,
তারায় তারায় ওড়ে—
সাঁঝের দীপালি;  
সড়কে-চাতালে
অন্ধকারে নাটাই টানে 
নিঃসঙ্গ পাইলট;
উতলা অনিলে
ঝিকিমিকি ভাসে
লাল নীল ঘুড়ি;

হৃদয়ের কারাগারে 
ক্লান্তি নামে,
ভ্র থেকে ওড়ে গাঙচিল; 
বুক ফেটে বের হয়—
দম ফেরানো দীর্ঘশ্বাস,

ঘুড়ির মিছিলে মেঘ ঘেঁষে
স্তব্ধ জীবন উড়ে চলে... 

********************************************

স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস ১৭

সাম্রাজ্যবাদী চাঁদ, বেদখল হয়ে যায় মধ্যবিত্ত রাত
সওদাগরী মেঘে ওড়ে পাল পাল বখিল বাতাস—
দাপুটে জোছনাখেলায় দোল খায় সফেদ আকাশ

উথালপাতাল রাজপথে কান—শুনি মৌন শ্লোগান
বামপন্থী কর্মীটির চোখের কোণে চিল্কায় ভোগবাদ

তুমুল চাঁদে যে বুক ডাকে না মনুষ্যজন্ম ব্যর্থ তার

একপৃথিবী ভ্রমণপথের দৈর্ঘ্য ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস
বুকের ভেতর শূন্যতলে হাজার হাজার আকাশ—

*********************************************

স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস ১৮

আমার হলুদ আকাশ—কমলা নদী
কালচে বরণ গাছগাছালি—
জলদ শূন্যতাদের মেলোডি আঁকা নকশিকাঁথায়
জনারণ্যের তীব্রতারা রচে যায় শব্দহীনতার সন্ধি।
হৃদয়টা কার আর নিলাম ডাকে কে!
কোন দেহের খোলসে বসে যাপন করি কার জীবন?
ঘুলঘুলিতে চোখ ফেলে কী খোঁজে অঙ্গার মন?
প্লাটফর্মে শুয়ে শুনি কাঠের ট্রেনের শঙ্খভেঁপু।
রাত্রির মধুর হাওয়ায় নেচে চলে নক্ষত্ররাজি
তবুও একেকটা জীবন মানে মেঘচন্দ্র লুকোচুরি 
আর প্রেম হলো চৈত্রের হঠাৎ বিজলি।

********************************************

স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস ১৯

লাল আর নীল
হয়ে গেলো মিল
গোধূলিতে।

তুমি আমি দুই জন দুই দিকে
পথহারা
ঠিক যেনো দিন আর রাত
মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ
তবু থাকে অন্তমিল
কবির লেখা।।   

********************************************

স্বপ্নলোকে সন্ত্রাস ২০

তোমার ঠোঁটের তিলে ঠোঁট রেখে শতবর্ষ ছুঁবো
চোখের গভীরে রাখো চোখ, আরো গভীরে যাবো
অন্তহীন ছুটে চলা থামো, পা রাখো হালকা ব্রেকে 
অবিরত ঝরো তুমি চিবুক চুয়ে মধুর মদিরা হয়ে 

বন্ধ করো আঁখি—সেগুনের অন্ধকারে ডুব দাও
ধ্যানমগ্ন হও ‘গাছ—পাখি—নদী ও মেঘে’র প্রেমে 
মগ্নতার স্বরলিপি রচে যাও হৃদয়ের ভরা নিভৃতে 
 
চোখের ঝর্ণা থেকে টুপ করে নামো বুকের কুয়ায়
ঢেউয়ে ঢেউয়ে প্রভঞ্জনে বিষাদ খেলাও জোছনায়

নির্জনতাই নিপাট জীবন, হুল্লোরে ক্ষয়ে যায় মন 
তবুও অনন্ত পথের যাত্রাই অনাদিকালের ঐতিহ্য
আজও আমাদের ধমনীর কম্পনে খেলা করে স্বপ্ন
কেউ চাইছে বলেই বেঁচে আছি, নয়তো মরে যাবো