শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মোবাইল সেবা তলানিতে দুর্ভোগে গ্রাহকরা

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:২৩

কল ড্রপ, কল সেটআপ (একটি ফোন থেকে আরেকটি ফোনে যেতে যে সময় লাগে) টাইম, ইন্টারনেটসহ মোবাইল ফোনের সব ধরনের সেবার মান এখন তলানিতে ঠেকেছে। সেবার মান নিচে নামলেও মানুষের খরচ বেড়ে গেছে। কাঙ্ক্ষিত সেবা না মিললেও সমানে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরটিতে নতুন কোনো টাওয়ারই বসায়নি অপারেটররা। অবকাঠামো মেরামতে কোনো বরাদ্দই রাখা হচ্ছে না। তাই চরম সংকটের মধ্যে দিন কাটছে মোবাইল ফোনের গ্রাহকদের। প্রতিকার চেয়েও মিলছে না উত্তর।


নিরীক্ষা অডিটের পাওনা টাকা নিয়ে গ্রামীণফোন ও রবির সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন থাকায় মন্ত্রণালয়ও কোনো ভূমিকা নিতে পারছে না। তাই চেষ্টা করেও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না মন্ত্রণালয়।


টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ইত্তেফাককে বলেন, ‘কিছু বললেই অপারেটররা আদালতে চলে যায়। এতে বিষয়টি ঝুলে যায়। আমরাও বুঝতে পারছি, মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। মানুষ বিরক্ত হচ্ছে। তাদের অর্থের অপচয় হচ্ছে। এ কারণেই আমরা টেলিটকের নেটওয়ার্ক বিস্তারের চেষ্টা করছি। টেলিটককে দাঁড় করাতে পারলে তখন অনেক কাজই সহজ হয়ে যাবে। তাদের মনোপলিও ভেঙে যাবে।’


টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে যে সেবার মান, সেটা এতটাই নিম্ন পর্যায়ে, যা টেলিকমের ইতিহাসে ঘটেনি। গত ১১ মাসে সব অপারেটরের গ্রাহক বেড়েছে ৭৯ লাখ। ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়েছে ৭৭ লাখ। অথচ এই ১১ মাসে নেত্রকোনার খালিয়াজুড়িতে গ্রামীণফোনের একটি টাওয়ার বসানো ছাড়া দেশের কোথাও কোনো টাওয়ার বসানো হয়নি। বিদ্যমান টাওয়ারগুলোতেও সংস্কারকাজ ঠিকমতো হচ্ছে না।


২০১৮ সালের আগস্টে ভয়েসকলের ন্যূনতম রেট ৪৫ পয়সা করা হয়। এতে করে গ্রাহকের খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯ সালের পুরোটা সময় বেশি পয়সায় কথা বলতে হয়েছে গ্রাহককে। এতে অপারেটরের আয় বেড়েছে। গত বাজেটে ইন্টারনেটের ওপর ট্যাক্স বড়ানো হয়েছে। এতে করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর খরচও বেড়ে গেছে।


গ্রামীণফোন ও রবির কাছে নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দাবি করা সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ না করায় গত জুলাই থেকে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করছে বিটিআরসি। এই বিধিনিষেধের দোহাই দিয়ে এ দুই অপারেটর সেবাসংক্রান্ত সব ধরনের কাজ বন্ধ করে রেখেছে। পাশাপাশি বিদ্যমান সেবার দাম ৭ থেকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। কয়েক দিন আগে রবির সিইও মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ স্বীকার করেছেন, বিধিনিষেধের কারণে গ্রাহকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তারাও এ ব্যাপারে অসহায়।


এদিকে ২০১৮ সালের অক্টোবরে চারটি প্রতিষ্ঠানকে টাওয়ার কোম্পানির লাইসেন্স দিলেও তারা কাজ শুরু করেনি। আগে থেকেই শুরু করা ই-ডটকো শুধু কিছু টাওয়ার নিয়ে কাজ করছে। অন্যরা এখনো কোনো টাওয়ার নেয়নি। ফলে অপারেটররা নিজেদের টাওয়ার নিজেরাই ব্যবহার করছে। কিন্তু এর পেছনে কোনো খরচ করছে না।


বিটিআরসির এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত গ্রামীণফোনের কলড্রপ হয়েছে ৭৯ কোটি ৬ লাখ ৮৬ হাজারবার। কোনো গ্রাহকের দিনে দুইবারের বেশি কলড্রপ হলে সেগুলো ফেরত দেওয়ার নিয়ম। দিনে দুইবারের বেশি কলড্রপ হয়েছে ১৮ কোটি ১১ লাখ ৩৩ হাজারবার। এর মধ্যে গ্রামীণফোন ফেরত দিয়েছে ৬ কোটি ২২ লাখ ৪৯ হাজারবার। একইভাবে রবির কলড্রপ হয়েছে ৭৪ কোটি ৬৭ লাখ মিনিট। দুইবারের বেশি কলড্রপ হয়েছে ১৬ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজারবার। এর মধ্যে রবি ফেরত দিয়েছে ৭ কোটি ২৮ লাখ ৯১ হাজারবার। বাংলালিংকের কলড্রপ হয়েছে ২২ কোটি ৪ লাখ মিনিট। দুইবারের বেশি কলড্রপ হয়েছে ৭ কোটি ৮ লাখ ৯৬ হাজারবার। এর মধ্যে বাংলালিংক ফেরত দিয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজারবার।


এসব বিষয়ে অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিটিআরসি তাদের এনওসি বন্ধ করে রেখেছে। ফলে তারা যান্ত্রপাতি আমদানি করতে পারছে না। সেক্ষেত্রে সেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। ছাঁটাই করতে হচ্ছে জনবল। অনেকেই বেকার হয়ে যাচ্ছেন।

ইত্তেফাক/এএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন