অডিট আপত্তির দাবিকৃত টাকা পরিশোধ না করায় গত ২২ জুলাই থেকে গ্রামীণফোন ও রবির এলসি বন্ধ করে রেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এলসি বন্ধ থাকলেও যন্ত্রপাতির কমপক্ষে পাঁচটি চালান গত নভেম্বরে খালাস করে নিয়েছে গ্রামীণফোন! নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় গ্রামীণফোনকে শোকজ করেছে বিটিআরসি। গত ১ জানুয়ারি তাদের শোকজ করে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে গ্রামীণফোনের জবাব দেওয়ার কথা। গ্রামীণফোনও আজ জবাব দেবে বলে জানিয়েছে।
অডিট আপত্তির অর্থ পরিশোধ না করে তালবাহানা করায় গত বছরের ৪ জুলাই গ্রামীণফোন ও রবির ব্যান্ডইউথ কমিয়ে দেয় বিটিআরসি। গ্রামীণফোনের ৩০ ভাগ এবং রবির ১৫ ভাগ ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দিতে ঐ দিনই কয়েকটি আইআইজিকে (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) নির্দেশনা দেয় বিটিআরসি। দুই অপারেটরের কাছে বিটিআরসির পাওনা সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের কাছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ও রবির কাছে ৮৬৭ কোটি টাকা। এরপর ২২ জুলাই ব্যান্ডউইথের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে অপারেটর দুটির এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) বন্ধের কথা বলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক ২২ জুলাই সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘আজ থেকে এলসি বন্ধ থাকবে। তবে তারা আগে যেসব যন্ত্রপাতি এনেছে সেগুলোও আর খালাস করতে পারবে না। তারা টাকা দিলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।’ এরপর উচ্চ আদালতে যায় গ্রামীণফোন। আদালত বিটিআরসির সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। এরপর বিষয়টি আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালত তিন মাসের মধ্যে তাদের ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলেছে। ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই টাকা পরিশোধের কথা গ্রামীণফোনের।
গত আগস্টে নিষেধাজ্ঞার আগে আনা যন্ত্রপাতি খালাসের অনুমতি চেয়ে বিটিআরসিতে চিঠি দেয় গ্রামীণফোন। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরে বিটিআরসির দুটি কমিশন বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও গ্রামীণফোনের আবেদনে সাড়া দেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর মধ্যেই গত নভেম্বরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে সেপ্টেম্বরের আদালতের নিষেধাজ্ঞার কপি জমা দিয়ে পাঁচটি চালান খালাস করে নেয়। যা আইনের লঙ্ঘন বলছে বিটিআরসি।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেছেন, ‘গ্রামীণফোন তো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করছে না। তারা যা ইচ্ছে তাই করছে। আমরা তাদের শোকজ করেছি। জবাব পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আইন ভঙ্গের অভিযোগ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোন বলছে, সুপ্রীম কোর্টের আদেশের ভিত্তিতে গ্রামীণফোন কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসির দেওয়া আগের এনওসির ভিত্তিতে কাস্টমস থেকে মালামাল ছাড় করা হয়েছে। সকল নিয়ম কানুন ও প্রক্রিয়া মেনে গ্রামীণফোন গ্রাহক স্বার্থ বজায় রাখতে মালামাল ছাড় করেছে। উলটো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে এ বিষয়ে বিটিআরসি কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে।
ইত্তেফাক/বিএএফ