বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনায় বেড়েছে প্রযুক্তিনির্ভরতা

আপডেট : ২৬ জুন ২০২০, ০৫:১১

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশে প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ঘর থেকেই চলছে অফিস, বাচ্চাদের স্কুলের ক্লাস। শুধু তা-ই নয়, এই করোনা পরিস্থিতি মেনে নিয়ে বদলে গেছে মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতিও। 

হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা, মুখে মাস্ক দেওয়া, মুখে হাত না দেওয়া, মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা—এই চার মাস আগেও আমরা এসবের কিছুই মানতাম না। আর এখন প্রতিদিনের জীবনযাপনের অংশ এই সতর্কতা। বিশ্ব জুড়েই এই করোনাকালকে বলা হচ্ছে ‘নিউ নরমাল লাইফ’। 
নতুন এই জীবনে মানুষের মৌলিক চাহিদার মতো প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে একটি মোবাইল সেট আর উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ। ঘরবন্দি এই সময়ে জীবনকে গতিশীল রেখেছে প্রযুক্তির স্পর্শ।

ইমেইল, ফেসবুক, ইউটিউবের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে প্রযুক্তি এখন জীবনযাপনের অন্যতম অবলম্বন হয়ে উঠেছে। জুম, গুগল মিট কিংবা ফেসবুকের মেসেঞ্জারে গ্রুপ চ্যাটে চলছে মিটিং। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশে মিটিং করছেন। 

মন্ত্রীর ব্রিফিং, সংবাদ সম্মেলন সবকিছুই চলে এসেছে অনলাইনে, প্রযুক্তির আওতায়। শুধু কি তা-ই, গানের অনুষ্ঠান, বিশেষজ্ঞদের বাজেট ভাবনা—এসব কিছুও আলোচনা হচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। এমনকি টেলিভিশনের টকশোগুলোতে সবাই অংশ নিচ্ছেন যার যার ঘরে বসেই। করোনাকাল সারাবিশ্বের মানুষকেই নতুন পৃথিবীর সামনে, নতুন জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

করোনাকালের ‘নিউ নরমাল লাইফে’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে টেলিমেডিসিন। করোনা আক্রান্ত যারা হাসপাতালে ভর্তি হননি, তারা এই চিকিত্সকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক টেলিফোনে যোগাযোগ রেখেছেন। পেয়েছেন চিকিত্সা সেবা। এদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা চিকিত্সা সেবা নিয়েছেন টেলিফোনে। এছাড়া করোনাকালে সাধারণ রোগীরাও নির্ভরশীল এই টেলিমেডিসিনের ওপর।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি—বিডার আয়োজনে ‘এন্ট্রাপ্রেনিওরশিপ অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে’র ক্লাস চলছে দেশজুড়ে। আগে প্রশিক্ষকরা জেলায় জেলায় গিয়ে এ প্রশিক্ষণ দিতেন। এখন করোনাকালের সাবধানতা মেনে সেই ক্লাস হচ্ছে অনলাইনে। 


এই ট্রেনিং প্রোগ্রামের রিসোর্স পারসন তানজিবুল আলম বললেন, ‘প্রত্যন্ত গ্রাম উদ্যোক্তারা অংশ নিচ্ছেন এ কোর্সে। আমরা ঢাকায় বসে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি। আর গ্রামের অনেক নবীন উদ্যোক্তা এতে যুক্ত হচ্ছেন। করোনাকালের এই বদলে যাওয়া সময়ে মানুষ বাধ্য হয়েই প্রযুক্তিবান্ধব হয়ে উঠছে। এমন শিক্ষার্থীও যুক্ত হয়েছেন, যিনি বাসার রান্না করার ফাঁকে আমাদের ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন। আবার এমন শিক্ষার্থীও পেয়েছি, যিনি ঢাকায় চাকরি করতেন। এখন অফিস বন্ধ থাকায় গ্রামে ফিরে গেছেন। তিনি চাইছেন নতুন কিছু করতে।’

সময়ের প্রয়োজনেই বদলে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা সব ব্যবস্থা, মানুষের আচরণ। বদলে যাচ্ছে অফিস-আদালতে স্বাভাবিক নিয়মকানুন। পুরোনো নিয়মকানুন বদলে নিউ নরমাল যুগের নিয়মই হয়ে উঠছে স্বাভাবিক। সময়ের দাবি বদলে দিচ্ছে সবকিছু। শারীরিকভাবে যখন কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই, তখন ডিজিটাল প্ল্যাটফরমই সবাইকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। নিয়ে এসেছে একেবারে হাতের নাগালে। দূরে থেকেও সবাই আছে কাছাকাছি।

সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ শেষ হওয়ার পর পৃথিবী এই সময়টাকে ‘নিউ নরমাল’ যুগ হিসেবেই বর্ণনা করবে। নিউ নরমাল বলতে তারা বোঝাচ্ছেন, মানুষের আচরণগত যোগাযোগের নতুন কৌশল। আর সেজন্যই এখন যতটা সম্ভব ঘরে থেকে পুরো দুনিয়াকে নিয়ে আসতে হবে ল্যাপটপের স্ক্রিনে, নয়তো মোবাইল সেটের টাচ স্ক্রিনের ভেতর।

বাংলাদেশেও কিন্তু সেই সময় পুরোপুরিই চলে এসেছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তাকে। আর সে কারণেই যতটা সম্ভব ঘরে থাকাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর অফিস, ব্যবসা, ব্যাংকিং, স্কুল-কলেজের ক্লাস সবকিছুই নিয়ে যাওয়া হয়েছে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে। বেড়ে গেছে অনলাইনে যোগাযোগের মাত্রা। শুধু আধুনিক অফিস নয়, শহরের গণ্ডি পেরিয়ে মফস্সল ছাড়িয়ে তা পৌঁছে গেছে গ্রামের ছোট্ট কুটিরে।

এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ইত্তেফাককে বলেন, এই যে নিউ নরমাল লাইফের কথা বলা হচ্ছে। আর দেশের মানুষের মাঝে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা গেছে, তা সম্ভব হয়েছে সরকারের সময়োযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে। এই যে মানুষের মোবাইল-নির্ভর জীবন—এটা নিশ্চিত করতে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ ও টেলিকম খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি জানান, বর্তমানে দেশের ৯৮ শতাংশ এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায়। আর ১৬ কোটি মোবাইল সংযোগ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১০ কোটি সংযোগ চালু রয়েছে। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে ১০ কোটি।

মন্ত্রী বলেন, এই চাহিদা দিন দিন আরো বাড়বে। সে লক্ষ্যে সরকার গ্রামপর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ১ হাজার ২০০ ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সুবিধা পৌঁছে গেছে। আরো ৭০০ ইউনিয়নে এবছরই পৌঁছে যাবে। এভাবে সারাদেশকেই ব্রডব্যান্ডের আওতায় আনা হবে। কারণ ব্রডব্যান্ড ছাড়া ইন্টারনেটের উচ্চগতি পাওয়া সম্ভব নয়। 

আর যেসব দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ব্রডব্যান্ডের লাইন যাওয়া সম্ভব নয়, সেসব ৪০টি দ্বীপ ও চরাঞ্চলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি কম দামে স্মার্ট ফোন মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে যেতে সরকার বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।

ইত্তেফাক/জেডএইচ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন