বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আইটি খাতে বাংলাদেশের অবস্থান

আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২০, ১০:১৭

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে যে বিষয়গুলো বা খাতগুলো, তার মধ্যে একটি আইটি সেক্টর। পোশাক ও সেবা খাতের সঙ্গে আগামী দিনে এই আইটি খাতকেই প্রতিযোগিতায় দেখা যাবে এমনটাই প্রত্যাশা। আর এ দেশেই রয়েছে আইটি খাতের অপার সম্ভাবনা ও সুযোগ, প্রয়োজন শুধু সামান্য উদ্যোগের।

সরকার আইটি খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এবং এর অগ্রযাত্রা আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে দিতে বিভিন্ন সময়োপযোগী উদ্যোগ নিচ্ছে, যা প্রশংসনীয়। অনেক আগে থেকেই আইটি খাত নিয়ে আশার স্বপ্ন দেখছে সরকার। আইটি খাতের উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে সরকার ২০২৪ সাল পর্যন্ত আইটি খাতের সব ট্যাক্স মওকুফ করে দিয়েছে। যেমন কেউ সফটওয়্যার রপ্তানি করলে ১০ শতাংশ প্রণোদনা পাবে। দেশি সফটওয়্যার ব্যবহারে করপোরেট ট্যাক্স যাতে কমিয়ে দেওয়া হয় এবং বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারে যাতে ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়া হয়, সে বিষয়ে নীতি প্রণয়নে উচ্চপর্যায় চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো যে ক্রমবর্ধমান আইটি খাতকে এগিয়ে দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিশ্লেষকদের মতে, এখন আইটি খাত বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি। অফিশিয়াল রেকর্ড অনুযায়ী আইটি খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে ২০১৮ সালেই। আবার আইটি খাতের সম্পন্ন রপ্তানির পরিমাণ হিসাব করা যায় না। কেননা, অনেক অনানুষ্ঠানিক রপ্তানি যা সরকারি হিসাবে আসে না। তাই বলা যেতে পারে, এই খাতে উপার্জন তার থেকেও বেশি। আমরা আশা রাখতে পারি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের প্রযুক্তি খাতের রপ্তানি গার্মেন্টস খাতকে অতিক্রম করবে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে আইটি-আইটিএস সেবা দেওয়া হচ্ছে।

বলা হয়ে থাকে, পোশাক খাতের পর আইটি খাতই দেশের অর্থনীতিতে আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান এভারেস্ট গ্রুপের একটি সাম্প্রতিক গবেষণামতে, বাংলাদেশে ৯০ কোটি থেকে ১১০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৯ হাজার কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ তা প্রায় ৪৮০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সফটওয়্যার রপ্তানি বাড়ছে। এখন বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং দেশ।

প্রযুক্তির কল্যাণে ব্যাংকিং সেবা বদলে গেছে। এখন টুইটার, ভাইভার ও হোয়াটসঅ্যাপেও ব্যাংকিং কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রমে পুরো ব্যাংকিং সেবা এখন হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরকে দেশীয় সফটওয়ার ব্যবহারের জন্য উত্সাহিত করা এবং দেশীয় সফটওয়ার ও যথাযথ উপযোগী করে গড়ে তোলার চেষ্টা চলমান আছে।

গত ১১ বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫৬ লাখ থেকে ১০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। সরকার আইটি খাতে আগামী পাঁচ বছরে নতুন করে ১০ লাখ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে বলে জানিয়েছে সরকার। এরই উদ্দেশ্যে নীলফামারীতে হাইটেক পার্কের জন্য ১৫ একর আর শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, যা অনেকটা আইটি খাতের জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো। বাংলাদেশের হাইটেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগসহ আইসিটি খাতে আগামী দিনগুলোতে যৌথভাবে কাজ করার জন্য সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনায় বসছে। হাজারো তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন এসব সেন্টারে। বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বর্তমানে দেশে সাড়ে ছয় লাখ আইটি ফ্রিল্যান্সার আছেন, যারা অনলাইনে বিভিন্ন মার্কেট প্লেসে কাজ করছেন। তারা শত শত মিলিয়ন ডলার আয়ও করছেন।

আইটি খাতের এত এত সাফল্যও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এর সামনে রয়েছে শুরু থেকেই অনেক বড় বড় বাধাবিপত্তি। আইটি খাতে সাফল্যের জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন কানেক্টিভিটি, সেই কানেক্টিভিটির পথে সমস্যা হিসেবে দেখা যায় ধীরগতিসম্পন্ন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাকে, যার কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় যথাযথ এমনকি একান্ত প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক অনুপস্থিতি আইটি খাতের প্রধান উদ্দেশ্যকে সমস্যায় ফেলছে। হিসাবমতে, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪০ হাজার বিভিন্ন পর্যায়ের স্নাতক এবং প্রকৌশল ও আইটি খাত থেকে ১০ হাজার স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থী বের হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, তারা আইটি বিষয়ে যতটুকু দক্ষতা অর্জন করার কথা তা পারে না, যার কারণে তাদের পুনরায় ট্রেনিং নিতে হচ্ছে। এসবের কারণ হিসেবে দায়ী করা যায় ব্যাবহারিক শিক্ষার অভাব ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমির মধ্যে একটি যোগসূত্র তৈরি না হওয়া, তাই এসব দিকে দৃষ্টি দিতে হবে, যাতে এ খাতের প্রয়োজনের দিকে নজর রেখে কারিকুলাম তৈরি করা যায়।

বর্তমান আধুনিক সভ্যতার উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি নির্ভর করছে তথ্য ও প্রযুক্তির ওপর। আজকের বিশ্বের সম্পদ হিসেবে যেহেতু তথ্যকে বিবেচনা করা হয়, সেহেতু তথ্যের আধুনিক ব্যবহার, যাতে প্রযুক্তির সংযোগ থাকবে সর্বোত্তমভাবে এবং এই তথ্যপ্রযুক্তি বা আইটি সম্পদ যথাযথভাবে কাজে দেবে। বর্তমানে আমরা এমন একটি সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যা সম্পূর্ণভাবে আইসিটিনির্ভর। আর এই আইসিটি গঠিত হয়েছে হার্ডওয়্যার, সফ্টওয়্যার, নেটওয়ার্ক ইত্যাদির সমন্বয়ে। আর সবকিছুর সমন্বয় শুধু তথ্যের ব্যবহারকে কেন্দ্র করে। আইটি খাতকে বর্তমান যুবসমাজ খুবই আগ্রহের সঙ্গে নিচ্ছে এবং যথাযথ সাফল্যও অর্জন করতে পারছে।

সুতরাং, বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর করার জন্য এবং যথাযথ সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে সবার এগিয়ে আসার মধ্য দিয়েই আমরা হতে পারব আইটিসমৃদ্ধ এক জাতি। সেই সঙ্গে সমৃদ্ধ হবে আমাদের অর্থনীতি থেকে শুরু করে সব প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্র।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন