শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ডিজিটাল ‘জায়ান্ট’ পরিবার!

আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৫:৪৯

বৃহত্ মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো চার বছর ধরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সহযোগীদের তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। যদিও এতে খুব বেশি ফল হয়নি। হোয়াইট হাউজ থেকে ট্রাম্পের বিদায়ের সময় যখন ঘনিয়ে এসেছে এরকম এক মুহূর্তে টুইটার তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। কেবল টুইটার না ফেসবুক ও গুগলের মতো জায়ান্টগুলো ট্রাম্প-সমর্থকদের প্ল্যাটফরমগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। 

মূলত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প-সমর্থকদের হামলার পর দেশে ও বিদেশে নতুন করে নিন্দিত হয়েছেন ট্রাম্প। ফেসবুক, গুগল ও অ্যাপল ট্রাম্প-সমর্থকদের কয়েকটি নেটওয়ার্ক ভেঙে দিয়েছে। রেডইট, টিকটক, স্ল্যাপচ্যাট ও পিনটেরেস্ট ট্রাম্প-সমর্থকদের বিষয়ে আরোপ করেছে কিছু বিধিনিষেধ। এ ঘটনাগুলো দেখিয়ে দিয়েছে টেক কোম্পানিগুলো কীভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভাগ্য নির্ধারণীর ভূমিকায় যেতে পারে। দেশটির রাজনীতির গতিপ্রকৃতি বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে কোম্পানিগুলো। বৃহত্ টেক কোম্পানিগুলোর টুটি চেপে ধরার জন্য রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টি অনেক দিন ধরে সক্রিয় ছিল। 

ট্রাম্প প্রশাসনের অ্যান্টি ট্রাস্ট (একচেটিয়া বিরোধী) পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ যার সর্বশেষ নজীর। এ ঘটনায় বৃহত্ কোম্পানিগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। ট্রাম্পের সমর্থক এবং নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীগুলোও মনে করে বড় কোম্পানিগুলোর এককভাবে এত ক্ষমতা থাকা উচিত নয়। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের সিনিয়র কাউন্সিল কেউট রুয়ান সম্প্রতি বলেন, ‘ফেসবুক ও টুইটারের মতো কোম্পানিগুলো একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। কোটি মানুষের মতপ্রকাশের জায়গাগুলো তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।

আরও পড়ুন: গুগলের হুমকি পাত্তা দিচ্ছেন না অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় বাম ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সমর্থকরা উল্লাস প্রকাশ করেছে। অধিকার গ্রুপ কালার অব চেঞ্জের প্রধান রাশাদ রবিনসন বলেন, ‘ট্রাম্প ও তার অনুসারীরা দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ উসকে দিতে সোশাল মিডিয়াকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে।’ তিনি বিষয়টিকে একটি ‘বিশাল অগ্রগতি’ বলে মন্তব্য করেন। প্রতিনিধি পরিষদের ইন্টেলিজেন্স কমিটির প্রধান ও ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্য অ্যাডাম শিফ টুইট বার্তায় বলেন, ‘বর্ণবাদী বিদ্বেষ প্রচারের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অনেক দিন ধরে ব্যবহূত হয়ে এসেছে। প্রতিকারের জন্য আরো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

টেক কোম্পানিগুলোর প্রতি ডেমোক্র্যাটরা এতদিন ক্ষোভ পুষে রাখলেও কিছু করতে পারেনি। সিনেটে সমতা আসার পর পুরো কংগ্রেসে এখন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে। ধারণা করা যায় আগামী দিনগুলোতে ওয়াশিংটন ডিসি ও সিলিকন ভ্যালি পরস্পর মুখোমুখি অবস্থানে চলে যেতে পারে। এটিও প্রত্যাশিত যে বাইডেন প্রশাসন বৃহত্ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলাগুলো সচল করবে। নাগরিক অধিকারকর্মী বনিতা গুপ্তকে বাইডেন বিচার দপ্তরের ৩ নম্বর কর্মকর্তা হিসেবে বাছাই করেছেন। 

ফেসবুক বিরোধিতার জন্য বনিতার পরিচিতি রয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা বিলগুলো পাশ করাতে রিপাবলিকানদের কাছ থেকে তীব্র বিরোধিতার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ বিলগুলো আইনে পরিণত হলে বৃহত্ কোম্পানিগুলো আকার ছোট করতে বাধ্য হবে। রিপাবলিকানরা যে এই কোম্পানিগুলোর রাশ টেনে ধরে ইচ্ছুক নয় তবে তাদের অবলম্বন হলো সেন্সরশিপ ও বিধিনিষেধ আরোপ করা। বাম ঘরানার দৃষ্টিভঙ্গী এক্ষেত্রে ভিন্ন। তাদের কথা বৃহত্ কোম্পানিগুলো যদি আরো প্রতিযোগিতার মুখে থাকলে তারা আরো দায়িত্বশীল আচরণ করতো।

আরও পড়ুন: মোবাইল সেবায় ক্ষুব্ধ বিটিআরসি, নজরদারিতে নেমেছে মাঠে

বিষয়টি মার্কিন রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের ইস্যু তৈরি করতে পারে। কানেক্টিকাট থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থাল এবং দলটির সাবেক কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর জেনিফার পালমেরি সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্ণবাদী প্রচারণা ছড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহযোগী ভূমিকা পালন করেছে বৃহত্ টেক কোম্পানিগুলো। সামাজিক যোগাযোগ কোম্পানিগুলো এতই প্রভাবশালী যে তারা যে কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করতে বা সেখান থেকে অপসারণ করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে বর্ণবাদ ও জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংকুচিত করার চেষ্টা করেছে গত চার বছর ধরে তার ক্ষতিকর দিকটি হালকা করে দেখিয়েছে। 

গত বছর শুরুর দিকে করোনা বিস্তৃতি শুরু হয়। গত প্রায় এক বছর ধরে ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চায়নি। এই কাজে প্রশাসনের পাশে থাকে টুইটার ও সিলিকিন ভ্যালি কোম্পানিগুলো। তারা ধরে নেয় যে মহামারির ভয়াবহতার কথা বেশি করে জনমনে আতঙ্ক বাড়তে পারে। নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে যাওয়ার পর সোশাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো নড়েচড়ে বসে। ট্রাম্প বিরোধী তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে তারা ক্রমেই শিথিল হয়। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পপন্থিদের আকস্মাত্ হামলায় পাঁচটি প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর টেক কোম্পানিগুলো বোধদয় ঘটে যে সহিংসতায় উসকানি রোধে তাদেরও ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।


ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন