বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চাকরি ছেড়ে বিনিয়োগকারী

আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:১৭

সায়মা রহমান। বর্তমানে দেশিয় স্টার্টআপ কমিউনিটিতে তিনি একজন সক্রিয় বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত। তবে, তিনি একজন অভিজ্ঞ টেলিকমিউনিকেশন প্রফেশনাল। বাংলাদেশে গ্রামীনফোন ও টেলিনর গ্রুপে শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে একজন। ২০১৬ সালে তিনি পরিচিতি অর্জন করেন একজন ‘টপ প্রগ্রেসিং উইমেন লিডার ইন বাংলাদেশ’হিসেবে। এমনকি ওই বছরই বার্সেলোনায় জিএসএমএ মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসেও তার কাজ প্রশংসিত হয়। 

ইরাকের বাগদাদে জন্ম নেওয়া সায়মা রহমান বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন। ২০০৭ সালে দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীনফোনে যোগ দেন মোবাইল মিউজিক পোর্টফলিও ম্যানেজার হিসেবে। এরপর তিনি গ্রামীণফোনের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

গ্রামীণফোনের হেড অব রিটেইল পার্টনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চলতি বছরের জুন মাসে হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দেন। নিজেকে মুক্ত করে নিলেন করপোরেট দুনিয়া থেকে। ঢুকে পড়লেন স্টার্টআপ দুনিয়ায়। হয়ে উঠলেন বিনিয়োগকারী। একই সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বেশ কিছু স্টার্টআপেরও। সায়মা তার প্রফেশনাল ক্যারিয়ার ছাড়াও শিশুদের শিক্ষা নিয়ে আগ্রহী। এরই অংশ হিসেবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের পড়ালেখায় সহায়তা দিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি ইত্তেফাক অনলাইনের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় উঠে আসে এই স্বপ্নবান-উদ্যোক্তার গল্প।

No description available.

ইত্তেফাক : চাকরি ছাড়লেন কেন?
সায়মা রহমান :
বেশ কয়েক বছর ধরে পরিকল্পনা করছিলাম, চাকরি ছেড়ে অন্য কিছু করবো। কিন্তু কী করবো, তা ঠিক করতে পারছিলাম না। কিন্তু আমি অনেক বছর ধরে স্টার্ট-আপদের নিয়ে কাজ করেছি। তাই এই দিকেই ঝোঁকটা বেশি ছিল।  আর করোনা মহামারির মুহূর্তে আসলে এই সিদ্ধান্তে আসায় অনেক বড় একটি প্রভাব পড়ে। কারণ, হোম অফিস করার পর অবসর সময় কাজে লাগানো যায়। যেটা আসলে আমাদের করপোরেট কালচারে সম্ভব নয়। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম, স্টার্ট-আপ সেক্টরের দিকে আগাবো। এরপর ২০২০ সালের পুরো বছরটাই নিজেকে তৈরি করেছি চাকরি ছাড়ার জন্য। আমার অনেক প্রজেক্ট ছিল, যেগুলোকে অন্যদের কাছে হস্তান্তর করতেও অনেক সময় লেগেছে। এরই মাঝে একটা বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করি, সেই আয়কে নিশ্চিত করি। এরপরেই  চাকরি ছাড়ি।

ইত্তেফাক: বিনিয়োগের সময় স্টার্ট-আপের কোন জায়গাটাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়?
সায়মা রহমান:
নতুন কোনো স্টার্ট-আপে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম যেই বিষয়টা দেখি, সেটা হচ্ছে সেটি কোন ইন্ডাস্ট্রির। এরপর এই স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা কে, তার আইডিওলজি কী? এছাড়া ব্যবসার পরিকল্পনা, তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী,  তাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখি।

ইত্তেফাক: বিনিয়োগকারীদের চোখে কোন ইন্ডাস্ট্রিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়?
সায়মা রহমান:
বাংলাদেশে এখনো অনেক জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে। কারণ, আমাদের দেশের শিক্ষায়, ফিনটেক, কৃষিখাত, মানসিক স্বাস্থ্য খাত, ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিসহ এমন আরও অনেক গ্রিনজোন আছে, যেখানে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে।

No description available.

ইত্তেফাক:  আরও কেউ যদি আপনার মতো চাকরি ছেড়ে আসতে চায়, তাদের কী বলবেন?
সায়মা রহমান:
আমার পরিচিত এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা আমার মতো করপোরেট চাকরি ছেড়ে স্টার্ট-আপে যোগ দিয়েছেন। আমি প্রায়ই এমন অনেক মানুষের কল বা এসএমএস পাই, যারা আমার কাছে সাজেশন চান, তারা কি করবে। কারণ, আমরা যারা অনেক বছর ধরে চাকরি করি তাদের কাছে ইনভেস্টমেন্ট মানে ছিল সঞ্চয়পত্র কেনা কিংবা আরও কিছু বেশি টাকা জমিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট কি না। এখন তো বিনিয়োগের অনেক জায়গা। এগুলো আমাদের মতো মানুষের এক্সপ্লোর করা উচিত। কারণ, আমরা যারা নিজেদের বিনিয়োগ করতে চাওয়া অর্থ ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারি না, তারা যদি বিনিয়োগের সুন্দর করে একটা পরিকল্পনা করে নেই, তাহলেই বিনিয়োগটা সফল হবে। যেখানে শর্ট টাইম ইনভেস্টমেন্ট যেটা হচ্ছে অনেক তারাতারি লাভ পাওয়া যাবে, আরেকটা হচ্ছে লং টার্ম ইনভেসমেন্ট যেমন প্রপার্টি সেক্টরে বিনিয়োগ করা।

এরকম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ডাইভার্সিফিকেশন রাখতে হবে। আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, যারা নির্দিষ্ট পরিমাণ ভালো আয় করেন কিংবা নিশ্চিত আয় যাদের আছে, তাদের সবার আসলে ইনভেস্টমেন্ট পোর্টফোলিও থাকা উচিত। যে কেউ চাইলেই এখন নিরাপদ বিনিয়োগ করতে পারেন, যেমন সরকারের সঞ্চয়পত্র কিনে রাখতে পারেন। আবার কেউ চাইলে সেই নিরাপদ বিনিয়োগের পাশাপাশি একটু রিস্কি ইনভেস্টেমেন্ট যেতে পারেন, যেমন স্টার্টআপে বিনিয়োগ করতে পারেন। আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি, যারা অলরেডি ক্রিপ্টোকারেন্সিতেও বিনিয়োগ করছেন।

ইত্তেফাক: আপনার অনুপ্রেরণা কে?
সায়মা রহমান:
আমার অনুপ্রেরণার জায়গায় অনেকেই আছেন, যাদের মধ্যে আমাদের দেশের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সোনিয়া বশির কবির আপা। কারণ,  একসময় তার করপোরেট ক্যারিয়ার ছিল। সেখান থেকে তিনি এখন পুরোপুরি বিনিয়োগকারী হয়ে গেছেন। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। অনুভব করেছি, তিনি যদি করতে পারেন, তাহলে আমিও পারবো। কারণ বিদেশে তার মতো এমন অনেক মানুষ খুঁজে পেলেও, বাংলাদেশে আসলে এরকম  উদাহরণ খুব কম। সুতরাং তিনি শুধু আমার নন, পুরো দেশের জন্যও অনুপ্রেরণা।

ইত্তেফাক: ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
সায়মা রহমান :
অবশ্যই আমি আমার বিনিয়োগগুলো চালু রেখে আরও নতুন কিছু বিনিয়োগ চলমান রাখতে চাই। তবে আমার ইচ্ছা আছে আমি একটি কনসালটেন্সি ফার্ম করব। কারন আমি যেহেতু মার্কেটিং, ডিজিটাল, প্রোডাক্টসহ অনেকগুলো সেক্টরে ১৪ বছর কাজ করেছি। আমার যে অভিজ্ঞতা আছে, সেটা  কাজে লাগাতে চাই। অদূর ভবিষ্যতে সোনিয়া আপুর মত আমিও একটা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি করতে চাই।


ইত্তেফাক/আরকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন