শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এমএফএসের চার্জ কমিয়ে আনতে কাজ করবে প্রতিযোগিতা কমিশন

আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০৭

মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় (এমএফএস) সার্ভিস চার্জ আরো কমিয়ে যাতে জনগণের সাধ্য ও সামর্থের মধ্যে আনতে প্রতিযোগিতা কমিশন কাজ করবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির চেয়ারপার্সন মোঃ মফিজুল ইসলাম। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন কর্তৃক মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বাজার প্রতিযোগিতা সৃষ্টিতে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন। 

মফিজুল বলেন, ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় যেহেতু এ খাতে রেগুলেটরি তাই তাদেরকেই এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা দরকার। 

তিনি আরো বলেন, আমরা অনেক ভালো কাজ করি। কিন্তু বিষয়গুলি সবার নজরে আসে না। যেমন ইভ্যালির বিরুদ্ধে আমরা গত ৮ মাস আগে স্বপ্রণদিত হয়ে মামলা করেছি। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা রায় দিবো। গ্রাহক ও স্টেক হোল্ডারদের আমাদের কাছে এসে অভিযোগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশন আইন ২০১২ সালে হলেও আমরা কাজ শুরু করেছি ২০২০ সাল থেকে। আমাদের এখনও অনেক লোকবল ও কর্মযজ্ঞে অনেক ঘাটতি রয়েছে এ কথা সত্যি। মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় আমরা জানতাম দশটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা মাঠ পর্যায়ে সার্ভে করে দেখলাম যে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান মোট বাজারের ৮০ শতাংশ দখল করে রেখেছে। কমিশন দ্রুততার সাথে এই বিষয়ে কাজ করবে। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুভ্রত রায় মৈত্র বলেন, আমরা শুধু নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবা দিয়ে থাকি মোবাইল ব্যাংকিং খাতে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি করার সময় ১ জনের আইডি ব্যবহার করে অন্যজন সিম ব্যবহার করার কারণে কিছু অনিরাপত্তা এখনও রয়েছে। আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় সার্ভিস চার্জ আরো কমিয়ে আনা যায় কিভাবে সে ব্যাপারে প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সকলকেই ভেবে দেখার আহ্বান জানান।

ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ বলেন, ২০০৮ সাল থেকেই কমিশনের আইন প্রণয়নের সাথে আমি যুক্ত ছিলাম। কিন্তু কমিশনগুলি নিজেরা শক্তিশালী না হবার কারণে দাত, নখ বিহীন কমিশনে পরিণত হয়েছে। এক চিটিয়া বাজার আধিপত্ত রোধ করতে প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ভারতে যদি ২৫ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা কোন দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পায় সঙ্গে সঙ্গে ভারতের নাগরিকরা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে গ্রাহকদের ভিতর সমন্বয় না থাকায় বিভিন্ন কোম্পানীগুলি ও বাজারে মনোপলি ও মোনাফার খোররা তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ একটি কোম্পানী কিভাবে একক আধিপত্ত বিস্তার করলো এবং উচ্চ মূল্যের সার্ভিস চার্জ আদায় করলো এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কি তাও ভেবে দেখা দরকার।

কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজির হোসাইন বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা দ্রুত ফিরিয়ে আনা না গেলে এর পরিণতি হবে ই-কমার্সের মতো। বাজারে দ্রুত আধিপত্ত বিস্তারকারী প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার মধ্যে এনে সার্ভিস চার্জ কমিয়ে কিভাবে বাজারে প্রতিযোগিতা আনা যায় এবং ছোট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখা যায় এ ব্যাপারে প্রতিযোগিতা কমিশনকেই ভূমিকা পালন করতে হবে। 

এমএফএসের চার্জ কমিয়ে আনতে কাজ করবে প্রতিযোগিতা কমিশন

আবদুর রহিম হারমাছি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা অপারেটররাসহ আরো নতুন নতুন বিনিয়োগ এ খাতে আনা জরুরী। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন এক সময় বাংলাদেশে একটি মোবাইল অপারেটর ১০ টাকা সার্ভিস চার্জ নিতো। সেটি কমে এখন ৪৫ পয়সা হয়েছে। কেবল মাত্র অন্যান্য অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। তাই মোবাইল ব্যাংকিং খাতেও প্রতিযোগিতা আনা গেলেও এর সার্ভিস চার্জ দ্রুত কমে আসবে।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের দাবি ছিল প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণকে সুবিধা দিতে হলে সার্ভিস চার্জ কমিয়ে বাজার প্রতিযোগিতা সৃষ্টির বিকল্প নাই। তিনি আরো বলেন, মাননীয় তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা মহোদয়ের ক্যাশ লেস বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন করতে হলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় সার্ভিস চার্জ কমিয়ে আনা ও বাজার প্রতিযোগিতা সৃষ্টির বিকল্প নাই। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক। এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রান্তিক গ্রাহকসহ বিভিন্ন সুধিজন বক্তব্য রাখেন।

ইত্তেফাক/আরকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন