শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

4K টিভি কেনার আগে আপনার যা জানা দরকার

আপডেট : ২২ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৫৫

বর্তমানে বাজারে এলসিডি ও এলইডি টেলিভিশনের মেলা বসেছে। শো-রুমগুলো সাজানো রয়েছে বাহারি টেলিভিশন (টিভি) দিয়ে। বড় বড় টিভির গায়ে 4K স্টিকার লাগানো রয়েছে। আগ্রহী ক্রেতারাও না বুঝে সাধারণ টিভির তুলনায় অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনে নিচ্ছে 4K টিভি।

আসেলে এই 4K টিভি বলতে এখানে কী বোঝানো হয়েছে? সাধারণ 4K স্টিকার থেকে কিছুই আন্দাজ করা সম্ভব নয়। অনেকেই রয়েছেন যারা 4K টিভি টার্মটি থেকে কনফিউশনের মধ্যে পরতে পারেন। আবার অনেকে মনে করেন, বেশি দামি জিনিস ভালো, তাই প্রয়োজন না বুঝেই হয়তো 4K টিভি কিনে ফেলেন বেশি টাকা খরচ করে।

4K বলতে যা বোঝায়

আপনি যদি অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং করে থাকেন, তাহলে দেখবেন যে বিভিন্ন টাইপের ভিডিও রেজুলেশন সম্পর্কে অপশন প্রদান করা হয়। ইউটিউব ভিডিও প্লে করার সময় ১৪৪পি, ২৪০পি, ৩৬০পি, ৪৮০পি, ৭২০পি ইত্যাদি নানান রেজুলেশন সেট করা যায়। এই রেজুলেশনগুলো ৪৮০পি বা ৭২০পি; আসলে ভিডিওতে কতগুলো পিক্সেল রয়েছে তার নম্বর রিপ্রেজেন্ট করে।

৪৮০পি ভিডিওতে ৮৫৮ বাই ৪৮০ পিক্সেল থাকে এবং ৭২০পিক্সেল ভিডিওতে ১২৮০ বাই ৭২০ পিক্সেল থাকে, ঠিক এভাবেই ফুল এইচডি রেজুলেশন বা ১০৮০ পিক্সেল ভিডিওতে ১৯২০ বাই ১০৮০ পিক্সেল থাকে। এখন আপনার প্রশ্ন জাগতে পারে, বেশি নম্বর সত্যিই কি কোনো মূল্য রাখে—হ্যাঁ মূল্য রাখে, যতবেশি পিক্সেল থাকবে ভিডিওতে ততবেশি ডেটেইলস আটানো সম্ভব হবে। যতবেশি রেজুলেশন হবে পিকচার কোয়ালিটি তত উন্নত হবে।

তো নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝেও গেছেন, এই 4K মানে আরেক রেজুলেশনকেই বুঝানো হচ্ছে, তাই না? যদি ৪৮০ পিক্সেল ভিডিওতে অনুভূমিক ভাবে ৪৮০টি পিক্সেল থাকে এবং ১০৮০ প্রিক্সেল ভিডিওতে ১০৮০টি অনুভূমিক পিক্সেল থাকে; তাহলে নিশ্চয় 4K টিভি তে ৪০০০ পিক্সেল থাকবে, তাই না—আসলে ব্যাপারটি এতটা সহজ নয়।

4K টিভি কেনার আগে

4K টিভি তখনই বেস্ট পারফরম করে যখন ভিডিও রেজুলেশনও 4K হবে। আপনি 4K টিভি ১০৮০পিক্সেল বা আরো কম রেজুলেশনের ভিডিও প্লে করতে পারবেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে 4K টিভি থাকার কোনো লাভ পাবেন না। একটা সাধারণ উদাহরণ নিন—আপনার খাটের চাইতে ডাবল সাইজের বিছানার চাদর কিনে কোনো লাভ আছে? ঘুরে ফিরে অর্ধেক ভাঁজ করে রাখতে হবে চাদরটির।

4K কন্টেন্ট বর্তমানে তৈরি হচ্ছে এবং সৌভাগ্যবশত অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো যেমন—নেটফ্লিক্স 4K কনটেন্ট অফার করে, কিন্ত দেখার ব্যাপার হচ্ছে, আপনি অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো ব্যবহার করেন কি না। আপনার ইন্টারনেট স্পিড যদি ভালো না হয় সেক্ষেত্রে 4K কনটেন্ট চাইলেও স্ট্রিম করতে পারবেন না। ৭২০পিক্সেল বা ১০৮০পিক্সেল কন্টেন্ট যতটা বেশি লভ্য, 4K এখনো ধারে কাছেও ততটা লভ্য হতে পারেনি। সাথে 4K কন্টেন্ট স্টোর করার জন্য চাই প্রচুর ডিস্ক স্পেস, যেটা আরেকটা অসুবিধার ব্যাপার হতে পারে।

যদি আপনার পছন্দের বেশিরভাগ ভিডিও গুলো 4K তে লভ্য হয়ে থাকে বা বাড়তি মাসিক খরচ করে যদি অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস + ফাস্ট ইন্টারনেট সাবস্ক্রাইব করে রাখেন সেক্ষেত্রে 4K টিভি কিনতে পারেন, এতে রিয়াল সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে। কিন্তু 4K টিভি কিনে যদি শুধু ক্যাবল অপারেটরের লাইন ইউজ করে ক্যাবল টিভি দেখেন সেক্ষেত্রে 4K টিভি কেনার কোনো যুক্তি নেই। আপনি ফুল এইচডি টিভি বা শুধু এইচডি টিভি দিয়েও কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। যেহেতু 4K টিভির দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে।

আপনার যদি বর্তমানে কোনো 4K টিভি না থাকে, সমস্যা নেই আপনি সামনের হয়তো ৩-৪ বছরেও এর প্রয়োজনীয়তা ফিল করবেন না। সামনের দিনে ধীরে ধীরে হয়তো 4K টিভির ডিম্যান্ড বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে যখন দাম অনেক কমে আসবে তখন কিনলেও কিনতে পারেন। তবে আপনার ভিউইং এক্সপেরিয়েনস যদি ইনস্ট্যান্ট পরিবর্তন করতে চান সেক্ষেত্রে 4K টিভি এখনই কিনতে পারেন, পাশাপাশি যদি আপনার কাছে 4K কন্টেন্ট মজুদ থাকে।

4K টিভিতে আপগ্রেড করার মাধ্যমে আরো বেটার কোয়ালিটি ভিউইং এক্সপেরিয়েনস পাওয়া সম্ভব, তবে সেটা এখনই আপগ্রেড করতে হবে এমনটা জরুরি নয়। মার্কেটে নতুন টিভি কিনতে গেলেন আর সেলস ম্যান 4K ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল, আর আপনি কিনেও ফেললেন এমনটাতে লস আপনারই হতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন