বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে ওষুধ প্রতিরোধী নতুন সুপারবাগ। ফলে মহামারির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ক্যানডিডা অরিস’ হচ্ছে ওষুধ প্রতিরোধী ফাঙ্গাস বা ছত্রাক। ১০ বছর আগে এটি আবিষ্কার হয়েছিলো। হাসপাতালে থাকা অণুজীবের মধ্যে এখন বিশ্বের সবচেয়ে আতঙ্কজনক নামগুলোর মধ্যে এই ক্যানডিডা অরিস।
এই ফাঙ্গাসের আক্রমণে বিশ্বজুড়ে মহামারি দেখা দেয়ার উপক্রম হয়েছে। গবেষণা বলছে, তাপমাত্রা বাড়ার কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এর সংক্রমণের হার।
ক্যানডিডা অরিস কী?
ক্যানডিডা অরিস বা সি. অরিস হচ্ছে এক ধরনের ইস্ট বা ফাঙ্গাস। যা মানব দেহে সংক্রমণ তৈরি করতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশিরভাগ সময়ই ক্যানডিডা ছত্রাক আমাদের ত্বকে কোন ধরনের ক্ষতি না করেই বসবাস করে। তবে আমরা যদি অসুস্থ হই, কিংবা সংবেদনশীল কোন স্থান, যেমন রক্তস্রোত বা ফুসফুসে চলে গেলে এটি সংক্রমণ তৈরি করতে পারে।
২০০৯ সালে জাপানের টোকিও মেট্রোপলিটন গেরিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর কানের ভেতর প্রথম পাওয়া যায় ক্যানডিডা অরিস ছত্রাক।
এর সংক্রমণ বেশ মারাত্মক। সারা বিশ্বে যারা ক্যানডিডা অরিসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ৬০ ভাগই মারা গেছেন। এই ছত্রাক সাধারণত ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ায় এর সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন।
আরো পড়ুন: বেয়ার গ্রিলস কিভাবে বুঝলেন হিন্দি, রহস্য ফাঁস করলেন মোদি
ওষুধ প্রতিরোধী অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে অনেক দেশে গবেষণা চলছে। গবেষণায় বলা হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যানডিডা অরিস মানব দেহে রক্তপ্রবাহে সংক্রমণ তৈরি করে। এছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ এবং ত্বকেও সংক্রমণ তৈরি করতে পারে। অনেক সময়ই এই সংক্রমণকে অন্য কোন অসুস্থতা বলে ভুল করা হয়। ফলে দেওয়া হয় ভুল চিকিৎসা।
এক গবেষণায় পাওয়া গেছে, বেশিরভাগ ছত্রাকই কম তাপমাত্রায় মাটিতে বসবাস করতে পছন্দ করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্যানডিডা অরিস ছত্রাক বেশি তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে। ফলে মানুষের দেহে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় তাদের জন্য মানব দেহে বেঁচে থাকা সহজ।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ক্যানডিডা অরিসের সংক্রমণ সচরাচর খুব একটা হয় না। তবে আপনি যদি দীর্ঘ দিন ধরে হাসপাতাল কিংবা নার্সিং হোমে থাকেন। চিকিৎসার কারণে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয়, তাহলে ক্যানডিডা অরিসের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ ক্যানডিডা অরিসের সংক্রমণরোধী ভালো ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলে অ্যান্টিবায়োটিক।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি বলছে, এর ঝুঁকি কমাতে হলে ক্যানডিডা অরিসের সংক্রমণের শিকারে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কারা রয়েছে সেটা বের করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর জানিয়েছে, ধীরে ধীরে বিশ্বের অনেক দেশেই ক্যানডিডা অরিসের সংক্রমণের খবর মিলছে। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই এই ছত্রাকের সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। সবশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে গ্রিসে এই সংক্রমণের খবর মেলে।
রোগ নিয়ন্ত্রণ প্র্যাকটিশনার ও ইউসিএল ক্লিনিক্যাল লেকচারার ডা. এলাইন ক্লাউটম্যান-গ্রিন বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু হাসপাতালে এই ছত্রাকের সংক্রমণ মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। এ জন্য পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের কাছে সহায়তা চাওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালের পরিবেশে বেঁচে থাকে এই ছত্রাক। তাই একে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।’
ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় সংক্রমণ পরিসেবা বিভাগের মেডিক্যাল অণুজীববিজ্ঞানী ডা. কলিন ব্রাউন বলেন, ‘ক্যানডিডা অরিসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশেষজ্ঞ মতামত ও সংক্রমণ প্রতিরোধী নানা ব্যবস্থা নিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে।’
ইত্তেফাক/জেডএইচ