শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাংলাদেশি ব্র্যান্ড জগতে একজন মাস্টারমাইন্ড ইশরাক ঢালি

আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:৫৩

আপনি যদি ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সেক্টরে কাজ করে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই ‘ব্রুজো’ শব্দটি শুনে থাকবেন। স্প্যানিশ ভাষায় ‘ব্রুজো’ শব্দের মাধ্যমে উইচ ডাক্তারদের বোঝানো হতো যাদের আরেক নাম শামান। তাহলে ‘#bandbuo’ শব্দ দিয়ে কী বোঝানো হয়? একটি ব্র্যান্ডের ডাক্তার বা একজন শামান? যে কিনা ব্র্যান্ডের সব ভালো দিকগুলোর দাবিদার। বাংলাদেশি ব্র্যান্ড জগতে এমনই একজন মাস্টারমাইন্ড ইশরাক ঢালি।

অসাধারণ বাচনভঙ্গী এবং ব্যক্তিত্বের অধিকারী ইশরাক ঢালি নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য এক অবস্থানে। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে অ্যাডভার্টাইজিং ইন্ডাস্ট্রিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। অল্প কিছু কথায় তার এই যাত্রার কথা বলে শেষ করা সম্ভব নয়।

ইশরাক ঢালির স্কুল জীবন অস্ট্রেলিয়াতে শুরু হলেও পরে তিনি ঢাকার সেন্ট জোসেফ হাই স্কুল এবং নটর ডেম কলেজে পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি পাড়ি জমান সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং মনোনিবেশ করেন থিয়েটারে।

কিছু বছর পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে তার অ্যাডভার্টাইজিং ইন্ডাস্ট্রিতে যাত্রা শুরু করেন একজন কপিরাইটার হিসেবে। সময় যাওয়ার সাথে সাথে তিনি উপলব্ধি করতে থাকেন কোন বিজ্ঞাপন তৈরি করার থেকে মানুষের কাছে কোন বিজ্ঞাপন সেল করাটা বেশি চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। তখন তিনি এজেন্সি বিজনেসে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট সেক্টরে মনোনিবেশ করেন এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিংয়ে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

তার কাছে তার কর্মজীবন, কেন তার অ্যাডভার্টাইজিং ইন্ডাস্ট্রিতে আসা, তার কিছু প্রোজেক্টের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তার উত্তরের প্রতিটি অংশে অ্যাডভার্টাইজিং ইন্ডাস্ট্রির প্রতি ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়। তার মতে, কোন কিছু তৈরি করা সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো, কেননা পৃথিবীতে নতুন কিছু আনার মতো অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি আর কোনকিছুতে নেই। কারও কোন কাজ পাবলিশ হতে দেখার মতো সুন্দর আর কিছু হতে পারে না। তার অসংখ্য কাজের মাঝে যেগুলো তার মনের খুব কাছের সেগুলো হলো- বি এন্ড এইচ অ্যাম্পফেস্ট ২০০৫ যা ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম এবং সর্ববৃহৎ স্টেডিয়াম কনসার্ট এবং ২০১০-এ বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও ব্র্যাকের ‘দি গ্লোবাল রিব্র্যান্ডিং অফ ব্র্যাক’। এই দুই কাজের প্রত্যেকটিই তাকে এনে দিয়েছে অসংখ্য পুরস্কার।

আরো পড়ুন: বাবার পিস্তলের গুলিতে পুলিশের ডিসির ছেলের মৃত্যু

অ্যাডভার্টাইজিংয়ের ধরণ, মান সবকিছুই খুব দ্রুত সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ‘ডিজিটাল নেটিভস’ এর ধরণ বোঝাটা সেক্ষেত্রে খুব জরুরি। ইশরাক ঢালি বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নতুন নতুন টেকনোলজির মাধ্যমে কিভাবে গ্রাহকদের তাদের জীবনযাত্রা পরিবর্তিত হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করেন। তথ্য ও যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বর্তমানে চিরাচরিত ও মূলধারা থেকে সরে এসেছে কিন্তু ইশরাক ঢালি এই পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করে কাজ করে চলেছেন।

২০১৯-এ তিনি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সেক্টরকে আরও নতুনভাবে সাজাতে যোগ দেন ম্যাগনিটো ডিজিটালে। ম্যাগনিটো ডিজিটালের অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট টিমকে নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে ডিরেক্টর অফ অ্যাকাউন্টস এন্ড সার্ভিসিং পদে যোগ দেওয়ার জন্য জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উৎসাহের সাথে নতুন এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সম্মতি জানান। ট্রাডিশনাল অ্যাডভার্টাইজিংয়ের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্টের আর্ট এবং সায়েন্স - দু’টোই নিজের মধ্যে ধারণ করেন। এখন তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন স্ট্র্যাটেজি তৈরির লক্ষ্যে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন ডিজিটাল মার্কেটিং অঙ্গনে।

ম্যাগনিটো-তে কাজের পরিবেশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে, পুরুষ এবং নারী উভয়কেই  চাকরিক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন তিনি। যেকোনো মানুষের দক্ষতা ও মেধা বিকাশের জন্য তার কাজের পরিবেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুরুষ এবং নারীকে চাকরিক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়ার বিষয়ে ম্যাগনিটো একটি দারুণ উদাহরণ।

ইশরাক ঢালি বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ফায়ার স্পিনার এবং তিনি তার গ্রুপ NAUR-এর মাধ্যমে সামনে থেকে এই ট্রেন্ডকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফায়ার স্পিনিং তার অন্যতম প্রধান একটি শখ। এই শিল্পে অসংখ্য আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ ও অনুপ্রেরণা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি দেশে এবং দেশের বাইরে অসংখ্য আমন্ত্রণে ফায়ার স্পিনিং শো-তে পারফর্ম করেছেন। পুরো সপ্তাহ কাজের শেষে, ছুটির দিনগুলোতে তিনি তার পরিবারকে সময় দিতে ভালোবাসেন। 

তার মতে, কিছু কিছু সময় কাজ থেকে দূরে থাকা মন ও মানসিকতার জন্য খুব জরুরি। তিনি মনে করেন অ্যাডভার্টাইজিং-এর ক্ষেত্রে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই যা নিজের মেধা বিকাশকে আরও ত্বরান্বিত করে থাকে। আশা করা যায়, অ্যাডভার্টাইজিং জগতের সফল কাজগুলোর পিছনে আমরা তাকে আরও দেখতে পাবো।

ইত্তেফাক/বিএএফ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন