শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মিরপুরের উইকেটে রানের জোয়ার

আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:০৬

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) আসলেই আতশী কাচের নিচে চলে আসে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট। স্লো, লো বাউন্সের উইকেট হিসেবেই পরিচিত ছিল শেরেবাংলার উইকেট। টি-২০ ফরম্যাটে রান দেখতে চান দর্শকরা। ব্যাটসম্যানদের ধন্ধুমার ব্যাটিংই বিনোদিত করে সবাইকে। গেল কয়েক বছরে শেরেবাংলার উইকেট দর্শকদের প্রত্যাশা মেটাতে পুরোপুরি সক্ষম হয়নি। তাই তো বিপিএলের সময় প্রায় প্রতি বছরই সমালোচনার তোপে পড়ে উইকেট। ক্রিকেটার, কোচ, কর্মকর্তাদের অভিযোগ লেগেই থাকতো উইকেট নিয়ে।

বঙ্গবন্ধু বিপিএল তথা টুর্নামেন্টের সপ্তম আসরের প্রথম পর্ব গত শনিবার শেষ হয়েছে। এই পর্বে নিশ্চিতভাবেই অতীতের বদনাম অনেকটা ঘুচিয়ে ফেলেছে শেরেবাংলার উইকেট। রান প্রসবা হিসেবেই ধরা দিয়েছে উইকেট। সেঞ্চুরি না হলেও বিস্ফোরক গতির বেশ কিছু ইনিংস দেখা গেছে। এবার উইকেট নিয়ে অভিযোগ তেমন একটা শোনা যায়নি। বরং সবাই রায় দিয়েছেন উইকেট ভালো ছিল। আবার কেউ কেউ বলেছেন, উইকেট অবাক করেছে। কারণ এত ভালো উইকেট আশা করেননি কেউই।

শেরেবাংলায় এবার দুটি উইকেটে খেলা হয়েছে। ৩ ও ৭ নম্বর উইকেটে রান এসেছে ভালোই। চার দিনে ৮টি ম্যাচ হয়েছে প্রথম পর্বে। একটি ম্যাচ ছিল লো স্কোরিং। যেখানে একশো রানই হয়নি। আরেকটি ম্যাচে রান তাড়া করতে গিয়ে ৬৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল রংপুর রেঞ্জার্স। এটিই আসরের সর্বনিম্ন স্কোর। তাছাড়া প্রতিটি ইনিংসই একশোর বেশি ছিল। সর্বোচ্চ ১৮২ রান তুলেছিল ঢাকা প্লাটুন, সিলেটের বিপক্ষে গত শনিবার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮০ রানও ঢাকার গড়া।

আট ম্যাচের ১৬ ইনিংসে রান উঠেছে ২৩০৭ রান। যদিও ইনিংস প্রতি রানের গড়টা স্বাস্থ্যবান দেখাচ্ছে না, ঐ লো স্কোরিং ম্যাচটার কারণে। মিরপুর স্টেডিয়ামে প্রথম পর্বে প্রতি ইনিংসে ১৪৪.১৮ গড়ে রান উঠেছে।

ঢাকা প্লাটুনের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন অবাক হয়েছেন এত ভালো উইকেট দেখে। শনিবার সিলেটের বিপক্ষে জয়ের পর শেরেবাংলার উইকেট নিয়ে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘আমি যদি জানতাম যে ঢাকার উইকেট এমন হবে তাহলে আমার দল আরেকটু অন্যরকম হতো। আমি আসলে বেশ বিস্মিত এবং এটা আসলে প্রশংসার দাবি রাখে যে এমন উইকেট টি-টোয়েন্টিতে পাচ্ছি এবং খুব ভালো রান হচ্ছে। সত্যি কথা বললাম, যদি এমন উইকেটের কথা জানতাম তাহলে আমার কৌশল পরিবর্তন হয়ে যেত। কারণ আমার কাছে এখন মনে হচ্ছে অন্য ধরনের ক্রিকেটার নিলে আরো ভালো হতো। যাই হোক, যেটা হয়ে গেছে সেটা গেছে। তবে এই ধরনের উইকেটের প্রশংসা করতেই হবে। এমন উইকেট আমরা অনেক বছর ধরে পাইনি।’

শনিবার প্রথম ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়কও তুষ্ট উইকেটের আচরণে। মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, ‘আমি তো একটা ম্যাচ খেললাম। আজকের (শনিবার) উইকেটটা অসাধারণ উইকেট ছিল। ব্যাটিং করার জন্য দারুণ ছিল। স্পিনারদের জন্য আহামরি খুব একটা সুবিধা ছিল না কিন্তু আপনি যদি হার্ড লেংথে হিট করতে পারেন আপনার জন্য বাড়তি বাউন্স বা সিম মুভমেন্ট পেতে পারেন। উইকেটের কথা বললে এটা খুবই ভালো উইকেট।’

রান পেয়েছেন জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানরা

বঙ্গবন্ধু বিপিএলের প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে শনিবার। জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনকই ছিল। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা রান পেয়েছেন। তবে বোলারদের পারফরম্যান্স কিছুটা হতাশ করেছে। মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদরা এখনো ছন্দ খুঁজে পাননি। জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু অবশ্য এখনই পারফরম্যান্সের বিচারে যেতে চান না। গতকাল তিনি বলেছেন,‘মাত্র দু-তিনটি ম্যাচ গেছে। এটা নিয়ে আপনি বিচার করতে পারবে না কে কেমন খেলছে। মিডল অব দ্যা টুর্নামেন্টে না যাওয়া পর্যন্ত আপনি আঁচ করতে পারবেন না পারফরম্যান্সটা কোন্ দিকে যাচ্ছে।’

ব্যাটিংয়ে সেরা পাঁচে আছেন জাতীয় দলের চার ব্যাটসম্যান। ইমরুল কায়েস ১১৭, মোহাম্মদ মিঠুন ১১২, তামিম ইকবাল ১১০, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১০৯ রান করেছেন। ষষ্ঠ স্থানে আছেন ১০০ রান করা এনামুল হক বিজয়। সবাই তিনটি করে ম্যাচ খেলেছেন। নাঈম শেখ ৯৫, লিটন দাস ৮৩, সৌম্য সরকার ৬১ রান করেছেন। তারা খেলেছেন দুটি করে ম্যাচ। এক ম্যাচ খেলে মুশফিক অপরাজিত ২৮ রান করেছেন। দুই ম্যাচ খেলে ২৩ রান করা সাব্বির রহমান ব্যাট হাতে ফ্লপ।

বোলিংয়ে নজর কাড়তে পারেননি জাতীয় দলের বোলাররা। প্রথম পর্ব শেষে সেরা পাঁচে আছেন বাংলাদেশের তিন বোলার। অলক কাপালি, সৌম্য চারটি করে, ফরহাদ রেজা তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন। মাশরাফি, আল-আমিন, রুবেল হোসেন তিনটি করে উইকেট পান। আবু হায়দার রনি, নাঈম হাসান, আবু জায়েদ রাহী, এবাদত হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান দুটি করে উইকেট নেন। তাইজুল, শফিউল, আমিনুল বিপ্লবরা পেয়েছেন একটি করে উইকেট।

প্রথম পর্ব শেষে সেরা ব্যাটসম্যান

ব্যাটসম্যান দল রান

ইমরুল কায়েস চট্টগ্রাম ১১৭

ওয়ালটন চট্টগ্রাম ১১৭

মিঠুন সিলেট ১১২

তামিম ঢাকা ১১০

মোসাদ্দেক সিলেট ১০৯

 

প্রথম পর্ব শেষে সেরা বোলার

বোলার দল উইকেট

থিসারা পেরেরা ঢাকা ৫

অলক কাপালি রাজশাহী ৪

সৌম্য কুমিল্লা ৪

গ্রেগরি রংপুর ৪

ফরহাদ রেজা রাজশাহী ৩