বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘দেশের বাইরে জিততে চাই’

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৩:২৮

অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকের পর থেকে একটার পর একটা পরাজয় দেখছিলেন মুমিনুল হক। অবশেষে সেই বৃত্ত ভাঙলো তার দল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে জিতল বাংলাদেশ। এই জয়ের পর দলের অবস্থা, দলের বৃহত্তর লক্ষ্য, নিজের অধিনায়কত্বের লক্ষ্য; এসব নিয়ে খোলামেলা কথা বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মুমিনুলের একান্ত সাক্ষাত্কার নিয়েছেন দেবব্রত মুখোপাধ্যায়


অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্ট জিতলেন। এটা স্বস্তি দিল একটু?

ঠিক, স্বস্তি বলবো না। ভালো লাগছে। যে কোনো সময়ই ম্যাচ জিতলে ভালো লাগে। অধিনায়ক হিসেবে আমি খুশি যে, আমি গত কিছুদিন যে ব্যাপারগুলো নিয়ে কাজ করছিলাম টিমের ভেতর, সেগুলোতে উন্নতি দেখা যাচ্ছে। আমি নিজে অত বেশি রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড না। আমার চিন্তা হলো, আমার দল ঠিক প্রসেসে এগোচ্ছে কিনা।

তারপরও অধিনায়ক হওয়ার পর একটার পর একটা পরাজয়। ফলে রেজাল্ট নিয়ে একটা দুশ্চিন্তা ছিল না?

না। আমি প্রসেস নিয়ে ভাবছিলাম। আমার চিন্তা ছিল, আমরা কাজগুলো ঠিকমতো করছি কিনা। সবকিছু ঠিকমতো করলে, রেজাল্ট তো আসবেই। সেটা এসেছেই। অনেক সময় সব ঠিক করার পরও রেজাল্ট আসবে না। তাই রেজাল্ট নিয়ে না ভেবে নিজেদের কাজ নিয়ে ভাবতে হবে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনেই আপনাকে খুব আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছিল। সেটা কী প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে বলে, নাকি এই আপনার কাজ ঠিকমতো হচ্ছে বলে?

আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম; অতি আত্মবিশ্বাসী না। অবশ্যই সেটা টিমের উন্নতি দেখে আত্মবিশ্বাসটা এসেছিল। আমি যেটা চাচ্ছিলাম যে, সবাই যার যার রোলটা বুঝতে পারুক এবং সেই অনুযায়ী পারফরম করার জন্য তৈরি হোক। সেটা বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা দল হিসেবে করতে পারছি। টিমের সবার অ্যাটিচিউড থেকে শুরু করে অনুশীলনের ধরন; সবকিছুতেই আমি পজিটিভ কিছু দেখছিলাম। তাই একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল।

সেই বিশ্বকাপের পর থেকে কোনো ফরম্যাটে বাংলাদেশের কেউ সেঞ্চুরি পাননি। এই টেস্টের আগে আপনি বললেন, কথা দিলাম কেউ না কেউ ১০০ বা ২০০ বা ৩০০ করবে। পরে আপনি সেঞ্চুরি করলেন, মুশফিক ডাবল সেঞ্চুরি করলেন। এই বিশ্বাসটা কিভাবে তৈরি হয়েছিল?

আসলে ঠিক কথা দেইনি। আমি আসলে ওটা বলে ফেলেছিলাম। সতীর্থদের আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য ও রকম কিছু বলা দরকার ছিল। বলে ফেলেছি, হয়ে গেছে। এটা লটারির মতো লেগে গেছে। এরপর থেকে আরো বেশি বেশি বলতে হবে, মনে হচ্ছে।

একটু দলীয় কৌশলের দিকে যাই। জিম্বাবুয়ের মতো উপমহাদেশের বাইরের দলের বিপক্ষে আমাদের পরিচিত কৌশল ছিল তিন-চার স্পিনার খেলানো, টার্নিং উইকেট বানানো। সেটা থেকে আপনারা এবার বলে-কয়ে সরে আসলেন...

হ্যাঁ, কোচ এটাকে বলেছেন, এটা সত্যিকারের টেস্ট সংস্কৃতি তৈরি করা। আর এটা নিয়েই আমি এখন কাজ করছি বলতে পারেন। আমরা এভাবে ঘরের মাটিতে শুধু স্পিনের ওপর নির্ভর করে ম্যাচ জিতলেও লম্বা মেয়াদে এর ভালো ফল পাব না। তাই এটা পরিবর্তন করতে চাই। আমার কাছে এখন বেশি জরুরি হলো, দেশের বাইরে টেস্ট জেতা। সেটা করতে গেলে আপনার সব ডিপার্টমেন্টকে ভালো করতে হবে।

এই দল নিয়ে আপনার এখন লক্ষ্যটা কী?

আমার লক্ষ্য সোজা। দেশের মাটিতে যার বিপক্ষেই খেলি, টেস্ট সিরিজ জিততে হবে। বিচ্ছিন্ন একটা টেস্ট জয় নয়; সিরিজ জিতে রাখতে হবে। আর দেশের বাইরে ম্যাচ জিতে আসা, ম্যাচ ড্র করা; এগুলো করতে হবে। এর মানে এই না যে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ আছে, ওটাই জিতে ফেলবো। আমরা চেষ্টা করবো। কিন্তু এগুলো হতে সময় লাগবে।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শেষে দলকে কোথায় দেখতে চান?

আমি এখনই কোনো টার্গেট ঠিক করছি না। আমি চাই পুরোটা সময় ধরে আমরা একটা ভালো সংস্কৃতিতে টেস্ট নিয়ে কাজ করে যাই। কাজ ভালো করলে এক দুই ধাপ আগাতে পারব হয়তো। টেস্টের জন্য সেটাই অনেক বড়ো ব্যাপার।

কিন্তু দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও কী আমরা এরকম স্পোর্টিং উইকেট বানানোর সাহস পাব?

সেটা তো আসলে সময় বলবে। ঐ পরিস্থিতি, ঐ সময়ের ওয়েদার; সব মিলিয়েই ঠিক হবে। এত আগে তো আমি প্লান ফাঁস করে দিতে পারি না।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই জয়ের ফলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটায় ভালো কিছু আশা করা যায়?

অবশ্যই। আমরা এখন সেদিকেই তাকাচ্ছি। আমি এই ম্যাচের পরই বলে দিয়েছি, এটা এখানেই শেষ। এই ম্যাচের পজেটিভগুলো আমরা মনে রাখব। কিন্তু এর কারণে আমরা ভেসে যাব না। এখানকার পজেটিভ ব্যাপারগুলো আমাদের পাকিস্তানের বিপক্ষে কাজে লাগাতে হবে।

ইত্তেফাক/বিএএফ