শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিসিবি চিকিত্সকের কোয়ারেন্টাইন জীবন

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২০, ০২:৩২

খুব ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় তাকে। একদম দম ফেলার সময় নেই। কোনো দরকারে ফোন করলে, মিনিট খানেকের মধ্যে সব কাজের কথা বলে ফোন রেখে দেন। অথচ, এখন তার অখণ্ড অবসর। কারণ, অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন থাকতে হচ্ছে তাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান চিকিত্সক তিনি ডাক্তার দেবাশীষ চৌধুরী।

গত নয় মার্চ তিনি ইনজুরিতে আক্রান্ত দুই ক্রিকেটার সাদমান ইসলাম ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে নিয়ে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়, অস্ত্রোপচার করাতে। ছয় টেস্ট খেলা সাদমানের ইনজুরি ছিল কবজিতে। আর মৃত্যুঞ্জয়ের ইনজুরি ছিল কাঁধে। সফল অস্ত্রোপচার শেষে তারা দেশে ফিরেন ১৭ মার্চ, মঙ্গলবার। আর দেশে ফেরামাত্রই তিন জনকেই নিয়ম মাফিক সেলফ কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কেমন কাটছে ডাক্তার দেবাশীষের কোয়ারেন্টিনের জীবন? জানালেন, দৈনন্দিন রুটিনে বড়ো পরিবর্তন এলেও এটাকে ‘সুযোগ’ হিসেবে দেখছেন তিনি, ‘আমাদের সবারই রোজকার একটা নিয়ম থাকে একটা রুটিন থাকে। সেটা থেকে বের হয়ে আসতে হয়েছে। অবশ্যই খুব কঠিন ছিল আমাদের জন্য। নতুন একটা ব্যাপারে অভ্যস্ত হতে হয়েছে আমাদের। তবে, এটাকে একটা অ্যাডভানটেজ হিসেবে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’

এই সময়ে ডাক্তার হিসেবে পড়াশোনা করে নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করার চেষ্টায় আছেন তিনি। বললেন, ‘এই সময়টা কাজে লাগানোই ভালো। আমাদের যাদের লেখাপড়া করতে হয়, তারা এখন তো আর খুব একটা পড়ার সময় পাই না। তাই আমি নিজের জন্য বলব, লেখাপড়ার জন্য বাড়তি সময় পাওয়া গেছে।’

বিসিবির এই ডাক্তার আরো বলেন, ‘আমি কিছু অনলাইন কোর্স করছি, নিজের কিছু শর্ট কামিংসকে ঠিক করার চেষ্টা করছি। আমার সাবজেক্টে আমার যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। আমি তো আসলে সময় পাই না খুব বেশি। এখন তো অজস্র সময়। সেটাকেই কাজে লাগাচ্ছি।’

কোয়ারেন্টাইন থাকাটা ক্রিকেটারদের ইনজুরির ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও জানান তিনি। বরং দুই ক্রিকেটারের ইনজুরির যা অবস্থা তাতে নিজের কাজ তারা নিজেরাই করতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘ওরা বাড়িতে থাকে, সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকবে। ওদের তো নিজের কাজ করতে কোনো রকম সমস্যা হচ্ছে না। এক হাতে সার্জারি আছে, আরেকটা হাত দিয়ে কাজ করতে পারবে। অস্ট্রেলিয়ায় সার্জারির পর যে ক’টা দিন ছিলাম, খাওয়া-দাওয়া, জামা-কাপড় পরা কোনোটাতেই কোনোরকম সমস্যা হয়নি। ওদের আমরা চার সপ্তাহ বিশ্রামে রাখব। এরপর উন্নতি পর্যবেক্ষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’

কোয়ারেন্টাইন জীবনের বাস্তবতা বুঝেছেন ডাক্তার দেবাশীষ। তিনি মনে করেন, দুই ক্রিকেটারও এই বাস্তবতা বোঝার মতো পরিপক্ব। বললেন, ‘বিষয়টা ওদের (সাদমান ও মৃত্যুঞ্জয়) দু’জনকেই বোঝানো হয়েছে। বাদ বাকিটা তো পুরোটাই ওদের নিজের সচেতনতার ওপর নির্ভর করবে। ওরা বড় হয়েছে, পরিপক্ব হয়েছে। ওরা সবই বুঝে। আশা করি, ওদের যা যা বোঝানো হয়েছে তার সব কিছুই ওরা মেনে চলছে।’

দুই ক্রিকেটারকে নিয়ে ডাক্তার দেবাশীষ অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন কয়েক দিন। সেখানে পনেরো শতাধিক মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। সেখানকার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরছিলাম, তখন পর্যন্ত অবস্থা ততটা খারাপ ছিল না। ওরা তখন পরিকল্পনা করছিল, কীভাবে কী করবে সেসব নিয়ে কাজ করছিল। আমরা আসার ঠিক আগের দিন ভিক্টোরিয়া রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। তবে, সাধারণ মানুষের চলাফেরায় কোনো রকম সমস্যা চোখে পড়েনি।’

ইত্তেফাক/এসআই