আন্তর্জাতিক ম্যাচ না থাকায় বাংলাদেশের ফুটবল ঘরের মধ্যে আটকে ছিল। এবার এশিয়ান কাপে ছয় ম্যাচ পাওয়ায় সেই ঝড় উঠছে না। আবার সুযোগ এসেছে আগামী বছরটা আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ে মেতে থাকার। বাফুফে এই সুযোগটা লুফে নিয়ে কাজে লাগাবে কি?
কোপা আমেরিকা আর ইউরো কাপের জমজমাট আসর চলাকালীন এই সময় বাংলাদেশের ফুটবল স্ট্যান্ডার্ড পাল্লায় ওজন করার সময় নেই দর্শকের। কাতার বিশ্বকাপ বাছাই শেষ করে ঘরে ফিরেছে বাংলাদেশের ফুটবলাররা। এখন তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে ভাবার সময় নেই। চোখ খুললে নান্দনিক ফুটবলের সুবাস পাচ্ছেন টিভির দর্শক। সেখানে ভুল পাস, অপরিকল্পিত ফুটবল, গোল মুখে শট করতে না পারার চরম ব্যর্থতা, মাঠে নেমে খেলোয়াড়দের দম হারিয়ে যাওয়ার আলোচনা ঠাঁই পাচ্ছে না টেবিলে। এখন সার্জিও রামোস কোথায় যাচ্ছে, মেসি, নেইমার কেমন খেলছে, এমবাপে কত স্পিডে দৌড়াচ্ছেন, ফুটবলের এসব নানা আলোচনায় মুখরিত ফুটবল ভক্তদের চায়ের টেবিল। অথচ এই মানুষরা একই বিষয়ে তখনই আবেগ আপ্লুত হন যখন বাংলার ফুটবলাররা সামান্য একটু ভালো খেলে। ই গ্রুপে বাছাইয়ে ৮ ম্যাচের মধ্যে ২ ম্যাচ ড্র করে বাকি সব ম্যাচ হেরেছে।
কাতার গিয়ে এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে পিছিয়ে থেকে গোল শোধ করেছিল। ম্যাচ ড্র (১-১) হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ খেলল ভারতের বিপক্ষে, ওমানের বিপক্ষে খেলল। ম্যাচ হারলেও। কিন্তু পারফরম্যান্স কেমন হলো। সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
করোনার কারণে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি। নেপালের টুর্নামেন্ট আর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নেপালের বিপক্ষে খেলা এই ছিল প্রস্তুতি। কাতার গিয়ে প্রমাণ করেছে করোনার আগে বাংলাদেশের ফুটবলাররা কতটা ভালো খেলেছে আর করোনার পর কতটা মন্দ খেলেছে।
ঢাকায় কাতারের বিপক্ষে ২-০ গোলে হারলেও বাংলাদেশের খেলা ভালো হয়েছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হারলেও সেই ম্যাচও ভালো খেলেছিল। ২০১৯ সালে ১৫ অক্টোবর কলকাতায় ভারতের বিপক্ষে ৫০ হাজার দর্শকের সামনে বাংলাদেশ গোল করে এগিয়ে থাকল, সেই ম্যাচে ভারত ড্র করে নিজেদের বাঁচিয়েছিল। এর পর করোনায় ফুটবলের দুয়ার বন্ধ হয়ে গেল। আবার যখন খুলল বাংলাদেশের সব প্রতিপক্ষের পারফরম্যান্স যতটা উজ্জ্বলতা ছড়াল তার ধারে কাছে যেতে পারল না বাংলাদেশ। উধাও হয়ে গেল দেড় বছর আগের পারফরম্যান্স। প্রশ্ন উঠল বাংলাদেশ কোথায় ছিল। কাতারে গিয়ে হতাশ করেছে।
এশিয়ান কাপের প্লেঅফ ম্যাচ খেলার সুযোগ ছিল কিন্তু সেখানে সরাসরি বাছাইয়ে খেলার সুযোগ এসেছে। বাংলাদেশ আরো ছয়টি মাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে।
বাংলাদেশ কি পারবে এই ছয় ম্যাচ উতরে যেতে? জেমি ডে ঢাকায় ফিরে জানিয়েছেন তিনি আগে দেখতে চান প্রতিপক্ষ কারা হচ্ছে। ইনজুরি আর হলুদ কার্ডের ঝামেলায় বাংলাদেশ শেষ দিন ম্যাচে পুরো দলকে পায়নি সেটাও বলছেন কোচ জেমি। গুরুত্বপূর্ণ অনেক খেলোয়াড় দলে ছিলেন না। এটা দলের জন্য অনেক ক্ষতিকর। সংবাদমাধ্যমকে জেমি বলেছেন, ‘আগস্টে আমরা জানতে পারব এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের প্রতিপক্ষের নাম।’ জেমির কথা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভালো করতে হলে খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে।’
মনে থাকার কথা, রাশিয়া বিশ্বকাপ এবং এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের প্লেঅফ ম্যাচ খেলতে গিয়ে ভুটানের কাছে হেরে বাংলাদেশের ফুটবলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। আন্তর্জাতিক ম্যাচ না থাকায় বাংলাদেশের ফুটবল ঘরের মধ্যে আটকে ছিল। এবার এশিয়ান কাপে ছয় ম্যাচ পাওয়ায় সেই ঝড় উঠছে না। আবার সুযোগ এসেছে আগামী বছরটা আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ে মেতে থাকার। বাফুফে এই সুযোগটা লুফে নিয়ে কাজে লাগাবে কি? না কি আবার ভুটান ম্যাচের সমালোচনায় ফিরে আসবে। টালমাটাল করে দেবে ফুটবল।
ইত্তেফাক/জেডএইচডি