বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মুসলিম ফুটবলারদের জন্য ইংল্যান্ডে নতুন নীতিমালা

আপডেট : ২৫ জুন ২০২১, ১৯:১৯

সম্প্রতি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে সংবাদ সম্মেলনের সময় টেবিল থেকে হেইনিকেইনের বোতল সরিয়ে রাখেন ফ্রান্সের তারকা ফুটবলার পল পগবা। তার এমন কাণ্ডে সারাবিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়। 

মদ্যপান কিংবা এর প্রচারণা চালানো ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে পগবা মনে করেন, অ্যালকোহল জাতীয় পণ্যটির প্রচারণা থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।

তার এমন কাণ্ডের পর আবারো নড়েচড়ে বসেছে ইংলিশ ফুটবল।

ইংল্যান্ডে ফুটবল নিয়ে কাজ করা সংস্থা নুজুম স্পোর্টসের প্রধান নির্বাহী এবাদুর রহমান বলেন, পল পগবার বিয়ারের বোতল সরিয়ে রাখার ঘটনাটি আবারো সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে, ফুটবলারদের ধর্মকর্ম নিয়ে ভাবা দরকার। 

এর ফলে মুসলিম খেলোয়াড়দের জন্য আলাদা নীতি প্রনয়নের দীর্ঘদিনের যে দাবি ছিল, সেটি আবারো উঠে এসেছে আলোচনায়। জানা গেছে, ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ কর্ণধাররা এই নীতিতে সম্মতি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এমন নীতি মুসলিম ক্রীড়াবিদদেরকে আরো উদ্বুদ্ধ করবে। 

মুসলিম সনদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দশটি পয়েন্ট, যেমন অ্যালকোহল গ্রহণ না করা, নামাজ পড়ার উপযুক্ত জায়গার ব্যবস্থা করা, হালাল খাবার এবং রমজানে রোজা রাখার অনুমতি দেয়া ইত্যাদি।

এ বিষয়ে বিবিসি স্পোর্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রহমান বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে কাজ করার সুবাদে আমি জানি, নিজের ধর্ম পালন করায় কতো ধরণের সমস্যায় পড়তে হয়। 

তিনি আরো বলেন, খেলোয়াড় এবং ক্লাবগুলোর সঙ্গে গভীরভাবে পর্যালোচনার পর আমরা মনে করেছি যুক্তরাজ্যে মুসলমানদের জন্য আলাদা একটি নীতি প্রনয়ন করার এটাই সঠিক সময়। আমার মনে হয় এধরণের উদ্যোগ এটিই প্রথম। ক্লাব এবং সংগঠনগুলো আমাদের দাবিতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। প্রতিটি ক্লাবই তাদের মুসলিম ফুটবলারদের অবদান স্বীকার করে। 

প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর সম্মতি

নুজুম স্পোর্টস জানিয়েছে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগসহ শীর্ষ ৪টি লিগ এবং অন্যান্য একাডেমিগুলোতে অন্তত ২৫০ জন মুসলিম ফুটবলার খেলছেন। এরমধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পল পগবা, লিভারপুলের দুই তারকা মোহামেদ সালাহ ও সাদিও মানে এবং চেলসির চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী এনগোলো কান্তে এবং অ্যান্তোনিও রুডিগার বেশ নামডাক কামিয়েছেন। 

জানা গেছে, মুসলিম সনদ প্রনয়নেরও আগে এটিকে সমর্থন দিয়েছে প্রিমিয়ার লিগের ৫টি ক্লাব এবং ইএফএলের ১৫টি ক্লাব। ফুটবল সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনগুলোও এটিকে সমর্থন জানিয়েছে। 

ব্রেন্টফোর্ডের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ব্রিটেনে মুসলিমরা হচ্ছেন দ্বিতীয় শীর্ষ কমিউনিটি এবং বেশ দ্রুততার সঙ্গে তাদের হার বাড়ছে। কমপক্ষে ৭০ জন মুসলিম ফুটবলার এখন প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোতে খেলছেন। তারা যেন ক্লাবে এবং ঘরে সবধরণের সাপোর্ট পান সেটির দিকে নজর রাখতে হবে। তাদের সমর্থন দেয়া দরকার এবং ক্লাবগুলো কর্তৃক এটিকে অনুমোদন দেয়া উচিত।

প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ওয়াটফোর্ডের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই সনদটির মাধ্যমে আমাদের মূল দল, নারী দল এবং একাডেমি প্লেয়ারদের বেশ উপকার হবে বলে আমরা মনে করছি। 

নুজুম স্পোর্টস চায় প্রতিটি ফুটবলার তাদের প্রতিদিনকার ধর্মকর্ম পালন করবে। একইসঙ্গে তাদেরকে সঠিক ধর্মীয়জ্ঞান প্রদানের জন্য প্রয়োজনে ইসলামিক স্কলারদের পরামর্শ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হবে। 

গেইমচেঞ্জার সনদ

নুজুম স্পোর্টস গেল রমজানে ৯২টি ক্লাবে গিফট পাঠিয়েছিল। এরমধ্যে গিফট গ্রহণ করা এএফসি উইম্বলডনের ১৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার আইউব আসাল জানান, এই সনদটি গেইমচেঞ্জার হবে। 

নিজের ১ম মৌসুমে ১৬ ম্যাচে ৪ গোল করা আসাল বলেন, মুসলিমদের লাইফস্টাইল পুরোপুরি আলাদা। এখানে কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। যেমন প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। অনেক কিছুই আপনি করতে পারবেন না, যেমন মদপান করতে যাওয়া। এই সনদটির মাধ্যমে সবাই ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে কারণ এটি মুসলমানদের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। তারা হালাল খাবারদাবার পাবে। ক্যান্টিনে যাওয়ার আগে তাদেরকে ২বার ভাবতে হবে না এবং কি খাবে না খাবে সেসব নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এমনকি পৃথিবীর চেয়েও ধর্ম আমাদের কাছে বড়।  

ওয়েস্টহ্যাম নারী দলের মিডফিল্ডার হাওয়া সিসোকো বলেন, আমার মনে হচ্ছে এখন আমার একটি কমিউনিটি আছে যারা আমাকে সাপোর্ট করবে। আমি আর একাকীত্বে ভুগবো না। নুজুমের মাধ্যমে আমি একজন মুসলিম বন্ধু খুঁজে পেয়েছি। জানতে পেরেছি এখানে প্রচুর মুসলিম খেলোয়াড় আছেন। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করতে পারি। মুসলিম হিসেবে মানুষের কাছে সঠিক মেসেজটি পৌঁছে দেয়া আমাদের দায়িত্ব। আমি সবার প্রতিনিধিত্ব করছি। আমাকে সবসময় ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। 

 

ইত্তেফাক/এএএন