শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আমিরাতে বাংলাদেশ-পাকিস্তানকে পাল্লা দিচ্ছে আফ্রিকানরা

আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২১, ০৭:৪৭

গন্তব্য আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম। বুধবার সকাল ১০টায় শারজাহ থেকে আল জুবেইল বাস স্টেশনে পৌঁছে দিল ছোট ভাই আশিকুর রহমান। শারজাহ কাসিমিয়া এলাকায় মোবাইল ফোন-এক্সেসরিজের ব্যবসা আশিকের। জুবেইল বাস স্টেশনের পাশেই একটা খেজুর গাছের নিচে বসে আছেন কয়েক পাকিস্তানি।

কিছুটা নিচু স্বরেই তাদের একজন ডাকছিলেন, ‘আবুধাবি, আবুধাবি’।

শুনেই আশিক এগিয়ে গেলো। কথা বলে এসে জানাল, এদের গাড়িকে বলা হয় ‘পুছপুছি’। যেটা আসলে শেয়ারিং ক্যাব, ট্যাক্সি নয়। একটি প্রাইভেট কারে তিন জন চড়তে পারে। তাদের নিয়েই গাড়িটা আবুধাবি যাবে।

বাসের তুলনায় অনেক আগে পৌঁছানো যাবে। বাস সাধারণত ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলে। প্রাইভেটকার ১২০-১৪০ কিলোমিটার গতিতে চলে। তাই সময় কম লাগে। বাসের তুলনায় কিছুটা বেশি ভাড়া গুনতে হয়। আশিকের কথা শুনে ‘পুছপুছি’তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

আমিসহ যাত্রী দু'জন হয়ে গেছে। এক জনের জন্য অপেক্ষা। পাশেই শারজাহর বড় মাছ-মাংসের বাজার। তৃতীয় যাত্রী পাওয়ার আগে ড্রাইভার আশফাকসহ বাকিরা বড়-বড় রুটি এনে টক দই দিয়ে নাস্তা করলো। এক ঘণ্টা মতো অপেক্ষার পর একজন যাত্রী পাওয়া গেলো। তারপরই আবুধাবি যাত্রা শুরু।

তৃতীয় যাত্রী কলকাতার মানুষ, মুসলিম। কলকাতা, বাংলাদেশ নিয়ে অনেকক্ষণ আলাপ হলো তার সঙ্গে।

যাত্রা পথে ড্রাইভার আশফাক, আমার গন্তব্য এবং আমিরাতে আসার উদ্দেশ্য শুনে ব্যাপক উদ্বেলিত। নিজ দেশ পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ আশফাক। বাবর আজমরা এবার বিশ্বকাপ জিতবে এমনটাই তার আশা। বলছিল, ‘ইয়ে ওয়ার্ল্ড কাপ তো, হাম লোগোকা। আপ দেখো, পাকিস্তান হি জিতেগা ওয়ার্ল্ড কাপ।’

আশফাক এক নিঃশ্বাসে বলে যায়, ‘হামারা টিম তাগড়া হ্যয়। কিয়া সাব প্লেয়ার হ্যয়। শোয়েব মালিক, হাফিজ কা লাস্ট ওয়ার্ল্ড কাপ। ইমরান খান নে ইয়ে টিম চুনা। কই গাদ্দারি, রুপিয়া কি ধান্দা নেহি। অ্যায়সা হুয়া তো কাট দেঙ্গে।’

ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে জয়ে সেমিতে এক পা বাড়িয়ে রেখেছে পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে জয়ে আশফাকরা বেশি খুশি। যেন ঈদের আনন্দ।

কথার মধ্যেই আশফাককে জিজ্ঞাসা করলাম, আমিরাতে এখন এত আফ্রিকান কেন? আগে তো দেখিনি।

আশফাক জানায়, করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তান থেকে আমিরাতে ফ্লাইট বন্ধ ছিল। আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ফ্লাইট চালু ছিল। আমিরাতের শ্রমবাজার অনেক বড়। শ্রমিকও প্রয়োজন প্রচুর। করোনার এই সুযোগ বাংলাদেশ-পাকিস্তানে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা আসতে পারেনি। সেই জায়গাটা নিয়েছে আফ্রিকানরা। উপমহাদেশের দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে এখন আফ্রিকা।

উগান্ডা, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন থেকে হাজারো শ্রমিক এসেছে আমিরাতে। তারাই এখন বিভিন্ন স্থানে চাকরি পেয়েছে। দুবাই, শারজাহ, আবুধাবি সর্বত্রই পথ চলতে প্রতিনিয়ত চোখে আফ্রিকানদের। ২০১৮ সালে এশিয়া কাপ কাভার করতে এসে এত সংখ্যক আফ্রিকান চোখে পড়েনি। এবার উল্লেখযোগ্য হারেই তাদের উপস্থিতি দেখলাম। অবশ্য সম্প্রতি ফ্লাইট চালু হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকেও মানুষ আসতে শুরু করেছে আমিরাতে।

পরে রাতে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ শেষে বাসে শারজাহ ফেরার সময়ও সহযাত্রী হিসেবে পেলাম এক আফ্রিকান মেয়ে। উগান্ডার মেয়ে বান্দ্রা আবুধাবিতে এসেছে ছয় মাস। স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে শারজাহ যাচ্ছে সে। বান্দ্রাও বলছিল, করোনাকালেই আফ্রিকা থেকে শ্রমিকরা দলে-দলে এসেছে আমিরাতে।

সরকারি বাসে শারজাহ ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে ১১টা বেজে যায়। বাংলাদেশের হারে বিষণ্ন মন, শরীরে ততক্ষণে ভ্রমণের ক্লান্তিও চেপে বসেছে।

ইত্তেফাক/টিএ