বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অনিশ্চয়তায় ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ রাজনীতি

আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ০৬:৪৯

২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন রাজনীতি না করেও একজন ধনকুবের কীভাবে প্রেসিডেন্ট হলেন তা নিয়ে আলোচনা ছিল। ব্যবসায় তার যোগ্যতা নিয়েও প্রশংসা পেয়েছিল। এখন সেই ট্রাম্প আগামী দিনের মার্কিন রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়েই পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা চলছে। এসব আলোচনায় এটা সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। তবে এটা নির্ভর করছে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ওপর।

অভিশংসনের জটিলতা

যখন ক্ষমতাসীন অবস্থায় কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ ওঠে তখন তাকে অভিশংসন করা যায় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্যাপিটল হিলে হামলা চালাতে সমর্থকদের উত্সাহিত করে বিদ্রোহে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদ তাকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত করেছে। কিন্তু ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা ছাড়ার আগে সিনেটে এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না। ট্রাম্প সিনেটে দোষী সাব্যস্ত হলে আইনপ্রণেতারা আরেকটি ভোটের মাধ্যমে ২০২৪ সালে ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণে ট্রাম্পের পথ বন্ধ করে দিতে পারেন। বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা অ্যান্থনি জুরকার বলছেন, অনেক রিপাবলিকান ট্রাম্পের বিপক্ষে গেলেও তাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করাটা কঠিন। কারণ প্রতিনিধি পরিষদের ভোটই প্রমাণ করেছে, রিপাবলিকানদের বিরাট একটা অংশ এখনো তার পক্ষে। আবার করোনা মোকাবিলা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিন মন দিতে চান জো বাইডেন, সেখানে অভিশংসনের জটিল প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকা তার সূচনালগ্নকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। এছাড়া আমেরিকায় ঐক্য প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছেন বাইডেন। অভিশংসন প্রক্রিয়া বরং বিভক্তি আরো বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা জুরকারের। তার মতে, ২০২৪ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবেন এমন বাস্তব সম্ভাবনা খুবই বেশি।

জুরকার বলেন, দলের মধ্যে ট্রাম্পবিরোধীরা ট্রাম্পের এই কোণঠাসার সুযোগ নিয়ে রাজনীতি থেকে সরাতে তাকে শেষ ধাক্কাটা দেবেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। ব্রিটেনের পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেনডেন্টে লেখা নিবন্ধে সাংবাদিক চান্তাল ডি সালভা জানিয়েছেন, গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ১৮৮৪ সালে ২২তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার প্রার্থিতার ক্ষেত্রে তার রিপাবলিকান দলে বেঞ্জামিন হ্যারিসনের কাছে হেরে যান। কিন্তু ১৮৯২ সালে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ক্লিভল্যান্ড।

ট্রাম্পকে রাজনীতি থেকে সরানো সম্ভব?

ট্রাম্পকে অভিশংসন করতে হলে সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট লাগবে। আবার তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে তাকে অভিশংসন করা যাবে কি না, তা নিয়ে মতবিরোধ আছে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। হার্ভার্ড ল স্কুলের প্রফেসর এমিরেটাস লরেন্স এইচ ট্রাইব ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবন্ধে ট্রাম্পকে রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করার বিভিন্ন উপায় বাতলে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সেকশন-৪-এর আর্টিকেল-২-এ বলা হয়েছে, কোনো প্রেসিডেন্ট বা সরকারি কর্মকর্তা সিনেটে অভিশংসিত ও দোষী সাব্যস্ত হলে সরকারি অফিস থেকে তিনি অপসারিত হবেন। এ ধারা প্রসঙ্গে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন মত দিয়েছেন। বিশেষ করে সাবেক মার্কিন ফেডারেল আপিল কোর্টের বিচারক মাইকেল লুতিগের মতে, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের ক্ষমতা কাজে লাগানো যাবে না। মার্কিন সংবিধানে ছয় স্থানে ‘অভিশংসন’ শব্দটি থাকলেও এ বিষয়ে সঠিক উত্তর দেওয়া হয়নি। তবে লরেন্স এইচ ট্রাইব উদাহরণ দিয়ে বলেন, ১৮৬২ সালে সিনেটে বিচারক ওয়েস্ট হামফ্রেসের অভিশংসন এবং ১৯৩৬ সালে অপসারিত বিচারক হলস্টেড রিটারের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টারি তদন্ত হয়েছিল। ঐ সময় সিনেটের সঙ্গে আদালত একমত পোষণ করেছিল যে, সরকারি কর্মকর্তা অফিসে না থাকলেও তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া চালানো যাবে।

লরেন্স এইচ ট্রাইব আরেকটি উদাহরণ দিয়েছেন, তাহলো ব্রিটেনের সাবেক উপনিবেশ ভারতের গভর্নর ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। তিনি দায়িত্ব ছাড়া পরও তাকে অভিশংসিত করেছিল ব্রিটেনের পার্লামেন্ট। আর যুক্তরাষ্ট্রের অভিশংসনের ক্ষমতা মূলত ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকেই এসেছে বলে জানান লরেন্স এইচ ট্রাইব। সেক্ষেত্রে অফিস থেকে বিদায় নেওয়ার পরও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা যায়। অফিস থেকে বিদায় এবং অভিশংসন সেই প্রশ্ন প্রথম উঠেছিল ১৭৯৭ সালে সিনেটর উইলিয়াম ব্লাউন্টকে অভিশংসনের সময়। তত্কালীন হাউজ প্রসিকিউটর জেমস বেয়ার্ড এবং ব্লাউন্টের আইনজীবী একমত হয়েছিলেন যে, কেউ পদত্যাগ করলেও তাকে অভিশংসিত করা যাবে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামস কংগ্রেসম্যান থাকাকালে বলেছিলেন, ‘সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় যদি অপরাধ করি তাহলে আমার নিঃশ্বাস থাকার পূর্বপর্যন্ত এ নিয়ে আমার বিচার করা যাবে’। দু্ই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়ে লরেন্স এইচ ট্রাইব জানান, ১৮৭৬ সালে মার্কিন যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী উইলিয়াম বেকনাপ প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের কয়েক মিনিট আগে পদত্যাগ করেছিলেন। প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হওয়ার পর তা সিনেটে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে ৩৭-২৯ ভোটে পাশ হয়েছিল অভিশংসনের প্রস্তাব। অর্থাত্ প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট উভয়ই একমত হয়েছিল যে, অপরাধের জন্য সাবেক সরকারি কর্মকর্তাকে অভিশংসন এবং তার বিচার করা যাবে।

ইত্তেফাক/টিআর