বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

স্বাস্থ্যবিধিতে কঠোর না হলে সামনে ভয়াবহ বিপদ

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২১, ১৫:৫৩

কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে করোনা ভাইরাস নিয়ে ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা। তারা বলেন, করোনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এখন থেকে দুই মাস সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। অর্থনীতির চাকা সচল রেখে জনসমাগম, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ অপ্রয়োজনীয় সবকিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

স্বাস্থ্যবিধি মানতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা। এদিকে স্বাস্থ্যবিধি না মানার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ফের ২ হাজার ছাড়িয়ে ২ হাজার ১৮৭-তে দাঁড়িয়েছে, দৈনিক শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর আগে সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের তথ্য দিয়েছিল, সেদিন ২ হাজার ২০২ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। দৈনিক শনাক্তের হার সর্বশেষ এর চেয়ে বেশি ছিল গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর। সেদিন পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এরপর কমতে কমতে তা ৩ শতাংশের নিচেও নেমেছিল। তবে মার্চের শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শনাক্তের হারও বাড়তে থাকে। জানা গেছে, কক্সবাজারসহ যেখানে জনসমাগম বেশি, সেখানে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি। আর আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘গত ১৫ দিনে অন্তত ২০ লাখ লোক কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটিতে ঘুরেছে। কেউ মাস্ক পরেনি। মাস্ক ছাড়া বিয়েশাদিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর হতে হবে।’ গতকাল একটি অনুষ্ঠানে বেড়ানো প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এখনো বেড়ানোর সময় হয়নি। আরেকটু ধৈর্য ধরুন। বেঁচে থাকলে সবাই বেড়াতে পারবেন। করোনায় দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১২টি পরামর্শ দিয়েছে।’ এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা চাই দেশের অর্থনীতি ভালো থাকুক। করোনা যাতে বৃদ্ধি না পায়, তা-ও চাই। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে কাজ করতে হবে। টিকা নেবেন। লকডাউন আমরা করতে পারব না। এটা সরকারের সব সংস্থা মিলে সিদ্ধান্ত নেবে। আগামীতে দেখব কী সিদ্ধান্ত হয়। আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড জোরদার করছি।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। নইলে ভবিষ্যতে কী দিন অপেক্ষা করছে, তা বলা যাচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমানে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, এটা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ হিসেবে আশঙ্কা করছি। এর থেকে বাঁচতে হলে প্রতিকার ও প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করতে হবে। বিনোদনকেন্দ্রসহ সব ধরনের মিছিল-মিটিং আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’ স্বাস্থ্যবিধি মানতে আইনের কঠোর প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় জনসাধারণকে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব রক্ষাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিশেষ কর্মসূচি নিয়ে আগামী রবিবার থেকে মাঠে পুলিশ নামছে বলে জানিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে ২১ মার্চ বিশেষ কর্মসূচি শুরু করবে পুলিশ।

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশে এসেছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা উচিত। স্বাস্থ্যবিধি মানতে যা যা করণীয় তা-ই করতে হবে। কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, ‘মাস্ক পরলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানলে করোনা থেকে নিরাপদে থাকা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে কেন আমরা উদাসীনতা দেখাই? করোনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। নইলে করোনা আপনাকে ছাড়বে না, জীবন কেড়ে নেবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীন ভাব দেখালে জীবন চলে যেতে পারে।’ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি সব অনুষ্ঠান দুই মাস বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ না করলে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অর্থনীতির চাকা ঠিক রেখে অপ্রয়োজনীয় সবকিছু দুই মাস বন্ধ রাখা উচিত।

এদিকে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত এক দিনে আরো ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে মৃতের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ হাজার ৬২৪ জনে। বাসা ও হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আরো ১ হাজার ৫৩৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫২৩ জন হয়েছে।
ইত্তেফাক/এমএএম