চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের আমের বাজার দেশের সবচেয়ে বড় আমের হাট। গত বৃহস্পতিবার এ হাটে আম বিক্রি করতে এসে বিপদে পড়েন জেলার চককীর্তি ইউনিয়নের চককীর্তি গ্রামের মাইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, এক ভ্যান কালীভোগ আম এনেছি। দাম চেয়েছি ১ হাজার টাকা মণ। পাইকার বলছে সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। গতবার আমের দাম অনেক ভালো পেয়েছি। গত চার বছরের মধ্যে এ বছর আমের ফলনও বেশি। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বাইরের আড়তদার কম। তাই দাম উঠছে না। তিন বছর মেয়াদে ৮০টি আমগাছ ৫ লাখ টাকায় কিনেছি। যে পরিস্থিতি খরচ উঠবে কি না সন্দেহ। অসহায়ের মতো কথাগুলো বলছিলেন মাইনুল ইসলাম।
মাইনুলের মতো উত্তরাঞ্চলের আমের জেলা হিসেবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁর আমচাষি ও বাগান লিজ গ্রহীতারা প্রায় সবাই ক্রেতার অভাবে বিপদে পড়েছেন। করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় লকডাউনের কারণে তারা এখন লোকসানের মুখে। আর এই সুযোগ নিচ্ছেন আড়তদার ও ফড়িয়ারা। এমন বাম্পার ফলনের পরেও খরচের টাকা ঘরে তুলতে পাবেন কি না, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এ তিন জেলার আমচাষিরা।
এদিকে করোনায় হাটে আমের দাম কমলেও লকডাউনের কারণে অনলাইনে আম বিক্রিতে জোয়ার এসেছে। জেলা শহরগুলোতে রাতারাতি অনেক অনলাইন আম ব্যবসায়ী সৃষ্টি হয়েছে। যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমের অর্ডার নিয়ে পাঠাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়।
এবার আমের ফলন ভালো হলেও করোনায় দরপতনে চাষিদের মুখে হাসি ফোটেনি। আমচাষিদের অভিযোগ, করোনার কারণে বাইরের ক্রেতার অভাবে আমের বাজার ও বিপণন নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় আড়তদার ও ফড়িয়ারা। এতে করে অনেক কৃষক আমের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে আমচাষিদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। তাদের ভাষ্য, ‘হাটে আম আছে, ক্রেতা নেই।’
গত কয়েক দিনে এই তিন জেলার বিভিন্ন আমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কম দামে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। এদিকে, অনেকেই অনলাইনে আম কেনা-বেচা করছেন। অনলাইনের বিক্রেতারা জানান, করোনায় পাইকারি ক্রেতারা জেলায় আসতে না পারায় দিন দিন অনলাইনে আম কেনা-বেচা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
রাজশাহীর বৃহত্তম আমের হাট বানেশ্বরে গিয়ে দেখা যায়, হাটে আসা শত শত ব্যাটারিচালিত ভ্যান ভর্তি আম। চাষিরা বাগান থেকে ভ্যানে করে আম নিয়ে হাটে এসে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু আমের সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা অনেক কম।
বানেশ্বর হাটে আসা চারঘাটের আমচাষি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, কিছু ক্রেতা আমের দাম বললেও তিনি আরো দামের আশায় অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, হাটে বাইরের ক্রেতা না থাকায় আমের দাম কম বলা হচ্ছে। অথচ সাধারণ সময়ে বাগান থেকে হাটে আম আনার পথেই ক্রেতারা কিনে নিয়ে যেতেন। আবার হাটে আসতেই ব্যবসায়ীরা আম কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু, এবার আম নিয়ে হাটে বসে থাকতে হচ্ছে।
নওগাঁর সবচেয়ে বড় আমের হাট সাপাহার উপজেলা। সেখানে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। আমের সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা অনেক কম। তাই স্থানীয় আড়তদাররা দাম কম বলছেন। আমচাষি মকবুল হোসেন জানান, সকালে পোরশা, পত্নীতলা, নিয়ামতপুর ও সাপাহারের শত শত আমচাষি আম বিক্রি করতে আসেন। এ সময় আড়তদার ও ফড়িয়ারা সিন্ডেকেটের মাধ্যমে সকালে আম কম দামে কেনা-বেচা করছেন। বিকালে আমের সরবরাহ কম থাকায় তখন একটু বেশি দামে আম কেনা-বেচা হয়।
স্থানীয় আম ব্যবসায়ী মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, লকডাউন ও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে বাইরে থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা কম আসছেন নওগাঁতে। যার কারণে আমরা চাষিদের কাছ থেকে বেশি আম কিনতে পারছি না। ব্যবসায়ীরা যদি পুরোদমে নওগাঁ আসতে শুরু করেন তাহলে বাজারে আম বেচা-কেনা বেশি হবে এবং চাষিরাও ভালো দাম পাবেন।
ইত্তেফাক/কেকে