শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২১, ১০:০৭

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলাতে। মা-বাবা, বোন—তিন জনই করোনা আক্রান্ত। ছয় মাসের একটি সন্তান আছে তার। তাই তার পক্ষে হাসপাতালে তিন জনকে রেখে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। বাবার অবস্থা বেশি খারাপ বলে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী বাড়িতেই অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা করছেন। 

তবে অক্সিজেন কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা তিনি জানতেন না। ইউটিউব দেখে শিখে নেন। শুরুতে একটু ভয় ভয় লাগলেও এখন তা সহজ হয়ে গেছে। চিকিৎসক তাকে বলেছেন, অক্সিজেন লেভেল ৯৪/৯৫ থাকতে হবে। তবে লেভেল বাড়ানো-কমানো ছাড়া আর বেশি কিছু তিনি জানেন না।

মাহবুবুরের মতো করোনা আক্রান্ত অনেক পরিবারেই এখন রোগী বাঁচাতে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবহার বাড়ছে। হাসপাতালে শয্যার অভাবে অক্সিজেনের প্রয়োজন আছে এমন গুরুতর রোগীকেও বাসায় রেখে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। কিন্তু বাড়িতে অক্সিজেন ব্যবহারে কিছু অব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে। সঠিকভাবে অক্সিজেন ব্যবহার করতে না পারলে বিস্ফোরণ ঘটার ঝুঁকি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অক্সিজেন ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গণমাধ্যমে এটির ব্যবহারের নিয়ম ও বিধিনিষেধ প্রচারসহ এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা জরুরি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল ক্যামিস্ট্রি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শাহ্ এমরান বলেন, ‘বাড়িতে কীভাবে অক্সিজেন ব্যবহার করতে হবে তা প্রচার মাধ্যমে শুরু থেকে ধাপে ধাপে বারবার দেখিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিত্সক বা অভিজ্ঞ নার্স দিয়ে কাজটি করতে হবে। এটি একটি গ্যাস, বেশি তাপমাত্রায় রাখলে বিস্ফোরণ হতে পারে। তাই রোদে না রেখে ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। আবার শিশুদের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে। যেহেতু বাড়িতে এর চাহিদা বেড়েছে তাই ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য সরকারের দিকনির্দেশনা অবশ্যই থাকতে হবে। একে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় এনে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে।’

অক্সিজেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, ‘সিলিন্ডারটি ভারী ও দাহ্য পদার্থ। সঠিক নিয়মে এর ব্যবহার করা প্রয়োজন। তাই বাড়িতে যাতে সঠিক নিয়মে অক্সিজেন ব্যবহার করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।’

অক্সিজেন ব্যবসায়ী মগবাজারের নাঈম এন্টারপ্রাইজের মালিক নাঈম জানান, ২০১৯ সাল পর্যন্ত কিছু গর্ভবতী মা ও হার্টের রোগীর জন্য বাড়িতে অক্সিজেন ব্যবহার হতো। সে সময় দৈনিক পাঁচটা সিলিন্ডার রিফিল ও দুই-তিনটি নতুন সিলিন্ডার বিক্রি হতো। এখন মহামারি কালে রিফিল সংখ্যা ৩০টি এবং নতুন অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি ৮-১০টিতে দাঁড়িয়েছে।

করোনা ভাইরাস চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে ইত্তেফাককে বলেন, ‘রোগী ও চিকিত্সককে অক্সিজেন ব্যবহারের বিষয় সচেতন হতে হবে। এটি একটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই অবশ্যই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জেনে নিতে হবে ও অন্যকে জানাতে হবে।’

দেশের প্রবীণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি নতুন বলেই আমাদের প্রস্তুতি নেই। এমন কোনো সংস্থাও নেই যেখানে বিষয়গুলো জানা যায়। তাই আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অক্সিজেনের ব্যবহার ও বিধি-নিষেধ সম্পর্কে নীতিমালা করা প্রয়োজন।’

প্রসঙ্গত, গত বছর এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে ব্যাপক হারে অক্সিজেন বিক্রি বেড়ে যায়। নিরাপত্তার জন্য মানুষ অপ্রয়োজনেও অক্সিজেন কিনে বাড়িতে রাখতে শুরু করেন। বিক্রেতারাও ইচ্ছামতো দামে অক্সিজেন বিক্রি করেন। তখন পুলিশ অনেক ব্যবসায়ীকে আটক করে। পরে পুলিশ নির্দেশ দেয় চিকিত্সকের ব্যবস্থাপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নির্দিষ্ট মূল্যে অক্সিজেন বিক্রি করতে হবে।


ইত্তেফাক/এমএএম