শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হেপাটাইটিসে দেশে প্রতি বছর মৃত্যু ২০ হাজার

আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২১, ১৩:১৯

হেপাটাইটিস এক নীরব ঘাতক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে প্রায় ১ কোটি মানুষ আক্রান্ত। বেসরকারি হিসাবে হেপাটাইটিসে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় দেশে। হেপাটাইটিস নিয়ে উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে সংক্রমিত ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানেন না যে তার শরীরে এই ভাইরাস আছে।

এছাড়া এই রোগে আক্রান্তরা অনেক ক্ষেত্রেই সুচিকিত্সা পান না। কারণ দেশের গ্রামাঞ্চলে হেপাটাইটিসে আক্রান্তদের একটা বড় অংশ ঝাড়ফুঁক, পানি পড়াসহ—এ ধরনের কবিরাজি চিকিৎসার আশ্রয় নেন। হেপাটাইটিস সংক্রমণ বাংলাদেশে জনসাধারণের মধ্যে জন্ডিস রোগ হিসেবে পরিচিত। প্রকৃত অর্থে হেপাটাইটিস হলো ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ। চিকিত্সাবিজ্ঞানে পাঁচ ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে। হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ স্বল্পমেয়াদি লিভার রোগ। এটি বিশ্রাম নিলে একপর্যায়ে সেরে ওঠে।

তবে প্রাণঘাতী হচ্ছে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসের সংক্রমণ। এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। দেশের প্রায় ৫ কোটি লিভার রোগীর চিকিত্সায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১০০ জন, যাদের বেশির ভাগই ঢাকার। ফলে সারা দেশে লিভার রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা অনেকটাই দুরূহ বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ‘এসডিজি’র ৩ নম্বর লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ নির্মূলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

দেশের এমন পরিস্থিতিতে আজ আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হবে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস-২০২১। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে অন্যান্যবারের মতো এ বছর দিবসটি পালনে ব্যাপক আয়োজন না থাকলেও বিভিন্ন সংস্থার ভার্চুয়াল সভা-সেমিনারের কর্মসূচি রয়েছে। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো বিশ্ব জুড়ে হেপাটাইটিস রোগ নির্ণয়, তার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সচেতনতা গড়ে তোলা।

নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গের হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আবিষ্কার করেন, এই রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষাব্যবস্থা উন্নত করেন এবং এই ভাইরাসের জন্য টিকাকরণ শুরু করেন। চিকিৎসাবিদ্যায় তার এই অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে ২৮ জুলাই তার জন্মদিনে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়।

বিশ্ব জুড়ে ৩২৫ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’তে আক্রান্ত। ফলে প্রতি বছর ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এইচসিভির সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।

কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বিভিন্ন দেশে নিরাপদ পদ্ধতিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবন করা হয় না। হেপাটাইটিস প্রতিরোধ, নির্ণয়, চিকিৎসা এমনকি সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। এইচএভি এবং এইচবিভি সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা দিতে হবে। রক্ত ও রক্তজাত পণ্যগুলোর মাধ্যমে সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবী বিনা মূল্যে রক্তদান ও সতর্কতার ওপর ভিত্তি করে রক্ত সরবরাহের প্রচার এবং স্বাস্থ্যসেবায় ইনজেকশনের নিরাপদ ব্যবহার করতে হবে। বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ২০২১ উপলক্ষ্যে আজ বুধবার একটি অনলাইন আলোচনাসভার আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল।

লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, হেপাটাইটিস বাংলাদেশে একটা নীরব ঘাতক, যা প্রতি বছরই অসংখ্য মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। জনগণের মধ্যে অসচেতনতা এবং রোগ সম্পর্কে জ্ঞানের কমতিই মূলত এই রোগ বিস্তারের কারণ।

ইত্তেফাক/এএএম