শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তালেবানদের বিজয়ে বাংলাদেশের নেটিজেনরা কেন উচ্ছ্বসিত

আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২১, ২০:০৮

বিশ্বজুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আফগানিস্তান তথা তালেবানের ক্ষমতা দখল। গত কয়েকদিন ধরে আফগানিস্তানের একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নেওয়ার পর গত রবিবার (১৫ আগস্ট) দেশটির রাজধানী কাবুল দখলে নেয় তালেবানরা। 

পুরো আফগানিস্তান তালেবানদের দখলে যাওয়ার পরপরই ক্ষমতা ছেড়ে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যান দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি। আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অন্যান্য দেশের মতোই পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন বাংলাদেশের অনেকেই। কাবুল দখল করার পর থেকেই বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনকি মানবন্ধনেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ তালেবানদের এমন জয়ে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।

তালেবানদের বিজয়ে দেশে ঘাপটি মেরে থাকা উগ্রপন্থী অনেকেই এই সুযোগে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। যার প্রতিফলন ঘটেছে আফগানিস্তান তালেবানদের দখলে যাওয়ার পরপরই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  

                      

রাশেদ কাঞ্চন নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘নিজের মাতৃভূমিকে বিদেশি শক্তির হাত থেকে মুক্ত করতে তালেবানদের দীর্ঘ কুড়ি বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের প্রতি আমার ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা রয়েছে। আপনার?? আপনি হলে কি করতেন? লড়তেন না-দেশের জন্য? (তালেবানদের নিয়ে উপহাস করার আগে ভাবুন-কুড়ি বছরে পাহাড়-পর্বতে খেয়ে-না খেয়ে, গুহায়-জংগলে কত কষ্টের জীবন ছিলো তাদের। স্যালুট -দেশপ্রেম।’

নাট্যকর্মী ও সাংবাদিক পাভেল রহমান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরে, একটি বিমানের ভিতরের দৃশ্য এটি। দেশ ছেড়ে জীবন বাঁচাতে পালাচ্ছে। আহা! জীবন। রাজনীতি পুরো বিশ্বেই এখন বুর্জোয়াদের দখলে, পুঁজিপতিদের হাতে। রাজনীতি যখন অসুস্থ হয়, তখন দেশ ভালো থাকে না। নিজের দেশ ছেড়ে পালানোর মতো এমন দুর্ভাগ্য কারও না হোক। ক্ষমতার জন্য রাজনীতি নয়, মানুষের জন্য রাজনীতি হোক। প্রিয় বাংলাদেশ, শিক্ষা নাও; ভালো থেকো।’

                

সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে নিয়মিত লিখেন সিরাজুল এহসান। একই প্রসঙ্গে নিয়ে তিনি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন যে তালেবান বা জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকার বিকল্প আছে কি?

এদিকে আজ বুধবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আফগানিস্তানে মার্কিনপন্থী সরকার হটিয়ে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবানের দ্রুত সমর্থন দেওয়া ও সাহায্য করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

তার মতে, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে যেকোনো মুক্তির আন্দোলনকে সমর্থন দিতেন। এটা মনে রাখতে হবে যে তালেবানরাও মুক্তিযোদ্ধা। বিদেশি শক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। তারা যাতে কট্টরবাদী, ইসলামের নামে ধর্মান্ধতা না করে তার জন্য দ্রুতই তাদের সমর্থন ও সাহায্য করা প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক থাকলেও দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোন ধরণের সম্পর্ক নেই। নেই কোন ব্যবসায়ী সম্পর্কও। তাহলে আমরা কেনো এসব বিষয়ে নিয়ে হৈচৈ করবো। অনেকে দেশের বাইরে কিংবা দেশে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক কিছু লেখালেখি করছেন। পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। আমি বলবো আমাদের যেহেতু এদেশটির সঙ্গে কোন স্বার্থ জড়িত নয় সুতরাং এ বিষয়ে চুপ থাকাটাই উত্তম।’

               

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আরও বলেন, এসব বিষয়ে সরকার আগেই জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন এবং আমাদের দেশের অবস্থান কি হবে তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই পরিষ্কার করে দিয়েছে। আমি বলবো এদেশের মিডিয়া আফগান ইস্যুতে যেনো যথেষ্ট সতর্ক থাকে। এ ইস্যুতে বাংলাদেশকে জড়িয়ে লিখতে গেলে ভাবতে হবে। তানাহলে ভুল তথ্য বিশ্ব মিডিয়া গ্রহণ করবে। ফলে আমাদের নিজেদের ক্ষতি ছাড়া আর কিছু হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আরও জানান, কিছুদিন আগেই এক পুলিশ কর্মকর্তা এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি তালেবানদের সঙ্গে যোগ দিতে যারা বাংলাদেশ ছাড়ছেন তাদেরকে আর ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না কিংবা ঢুকলেই গ্রেফতার দেখাবে এমন কথা বলেছেন। আমাদের দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে আফগানিস্তান। সেখানে কীভাবে যাওয়া সম্ভব? সঠিক তথ্য ছাড়া কোনভাবেই এইরকম কথা বলা উচিত না। এতে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়বে। সেই ভুল তথ্যই বিশ্ব মিডিয়া গ্রহণ করবে।

                   

তবে গতকাল মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের তালেবান হামলা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন নয়, ঐ হামলার জেরে বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের কোনো আশঙ্কাও নেই। বাংলাদেশের গোয়েন্দা বাহিনী কঠোর নজরদারি করছে বলেন জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, আফগানিস্তান বাংলাদেশ থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরে, আর সে দেশের সাথে বিমান চলাচলসহ সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সুতরাং সেখানে বাংলাদেশ থেকে কারও যাওয়ার সুযোগ নেই। 

এদিকে, তালেবানরা আফগানিস্তানে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করায় বাংলাদেশে কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংস্থাগুলোতেও। বিশেষ করে তালেবানদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশের উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো নতুন করে সংগঠিত বা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে কি না; সে আশঙ্কা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।

ইত্তেফাক/এসআই