বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে শেখ হাসিনা সরকার

আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২১, ০১:৩৯

বাংলাদেশ বিশ্বে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এর মূল কারণ রাষ্ট্রের মূলনীতি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং প্রধানমন্ত্রীর অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচালনায় বাংলাদেশ আজ জঙ্গিমুক্ত দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের শতভাগ মূলোৎপাটন না করতে পারলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।

বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে তারা অপতত্পরতায় লিপ্ত হয়েছে। তাদের সঙ্গে ইসলামিক স্টেট বা আইএসএর যে কোনো সম্পৃক্ততা নেই, আমরা তা প্রমাণ করতে পেরেছি। বাংলাদেশে তত্পর জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সবই এই দেশের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদী। তারা কখনো জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), কখনো হরকাতুল জিহাদ, কখনো আল্লাহর দল ইত্যাদি নাম ধারণ করেছে। ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে, সিলেটের আতিয়া মহলসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে তাদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ জঙ্গিদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। মা তার জঙ্গি ছেলেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন। আত্মীয়স্বজন জঙ্গিদের মৃতদেহ নিতে পর্যন্ত আসেনি। আমাদের দেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। এই সত্য বারবার প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে অভূতপূর্ব নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক আদর্শে বিশ্বাস এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়, সুদক্ষ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের গুণে বাংলাদেশ আজ সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে।

বৈশ্বিক ও জাতীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এবং প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতাদর্শের অনুসারী এদেশীয় নব্য জেএমবির সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালায়। বিশ্লেষণ-পর্যালোচনায় বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে আইএসের উদ্দেশ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিদের তত্পরতার বেশ ফারাক দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে আইএসের সঙ্গে এদেশীয় জঙ্গিদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ গোষ্ঠীগুলো যতটা না দেশকে ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তার চেয়ে বেশি চায় দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। দেশকে অস্থিতিশীল করাই যেন এদের মূল উদ্দেশ্য। তারা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বাংলাদেশে বসবাসরত অথবা এ দেশের উন্নয়নকাজের অংশীদার বিদেশি নাগরিকদের ‘টার্গেট কিলিং’ শুরু করে। কোথাও কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটলে কিংবা হামলার চেষ্টা হলেই রিটা কাটস নামের এক ইহুদি নারীর সাইট ইন্টেলিজেন্স নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে ঘোষণা করা হয় যে এটা আইএস করেছে। কিন্তু তা সত্য নয়। আসলে এসব অপতত্পরতা একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশে উন্নয়ন ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত করার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অপচেষ্টা।

তারা গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে হামলাসহ বেশ কিছু হামলা চালিয়েছে। এসব জঙ্গিগোষ্ঠী কিছুদিন পর পর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে, কিন্তু গোয়েন্দাদের তত্পরতার কারণে সক্ষম হয় না। তাদের ছোট ছোট স্লিপিং সেল মাঝেমধ্যে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেওয়ার চষ্টা করে। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শূন্য সহিষ্ণুতার নীতির ফলে বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন সহজ হয়েছে। আমাদের সুদক্ষ ও চৌকশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সফলভাবে দমন করেছে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলার আকস্মিকতা পর্যালোচনায় সরকার জঙ্গিদের দমনে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয় বলেই তারা এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। জঙ্গিরা এখন বিভিন্ন স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করছে, যাতে তাদের অস্তিত্বের জানান দেওয়া সহজ হয়।

সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন রোল মডেল। সন্ত্রাসবাদ আঞ্চলিক সমস্যা নয়, একটি বৈশ্বিক সংকট। উগ্রবাদের বিস্তার ও জঙ্গিবাদ দমনে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শূন্য সহিষ্ণুতা নীতির ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে।

সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে শেখ হাসিনা সরকার

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিবাদ বিস্তারের নেপথ্যে ছিল বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকার। আমরা জঙ্গিবাদের উত্থানের আলামত প্রথম উপলব্ধি করি ১৯৯২ সালে। ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’—এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উত্থান ঘটে ১৯৯২ সালে। তারা রাষ্ট্রীয় মদতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে ২৪ জন নিহত হন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকাতায় হামলাকারীদের অনেকে দেশ ত্যাগ করে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সশস্ত্র জঙ্গিবাদের উত্থানের সর্ববৃহত্ আলামত দৃশ্যমান হয় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমবির ৬১টি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে। জঙ্গিদের মদত দেওয়ার কাজে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করারও অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। কিন্তু সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে আমরা উলটো চিত্র দেখি। তিনি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস ও জঙ্গি তত্পরতা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেশের জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার আহ্বানে শিক্ষক-ছাত্র, শ্রমিক, ইমাম-পুরোহিত, সব ধর্মের গুরু থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ এগিয়ে এসেছেন। জনগণ সহযোগিতা করেছে বলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিদের দমন করতে পেরেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সর্বস্তরে জনবল নিয়ে প্রতিটি বিভাগে জঙ্গিবিরোধী মহাসমাবেশের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পেরেছিলাম যে এ দেশের মানুষ জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে না; সন্ত্রাসীদের ঘৃণা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ করা হয়; মসজিদে জঙ্গিবিরোধী সচেতনতামূলক আলোচনা করা হয়। এতে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

বাংলাদেশের জনগণ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। তারা ধর্মান্ধ হলে পাকিস্তান থেকে দেশকে স্বাধীন করত না। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে শোষিত দেশটি ধর্মের মায়াজাল ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন হয়েছিল। পেয়েছিল একটি নতুন সংবিধান, যার শুরু হয়েছিল অসাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে। সুতরাং এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা তথা জঙ্গিবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় কখনো দেয়নি এবং দেবে না। জনগণের জঙ্গিবিরোধী মানসিকতার কারণেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে জঙ্গিবাদ দমনের কাজ সহজ হয়ে যায়।

জঙ্গিবাদ দমনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আধীন নিরাপত্তা বহিনী, বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশ ও র্যাব এবং তাদের গোয়েন্দা ইউনিটগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হলি আর্টিজানে হামলার ব্যাপকতা লক্ষ করে প্রথমে জঙ্গি প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সব ইউনিটকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার জন্য একত্রিত করতে নির্দেশনা দেন। এই প্রচেষ্টা বেশ কার্যকর হয়। র্যাব, পুলিশ, এনটিএমসি, সাইবার টিম সবার পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জঙ্গিদের মনোবল ভেঙে দেওয়া হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এসব কাজ করি।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জঙ্গি দমনে পুলিশে নতুন দুটি ইউনিট প্রস্তুত হয়েছে। এখন পুলিশের অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিট, ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেন্টার, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ল’ফুল ইন্টারসেপশন উইনিট জঙ্গি দমনে সরাসরি কাজ করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত জেএমবি, শাহাদাত-ই আল হিকমা, জেএমজিবি, হিজবুত তাহরির, হুজিবি, এবিটি, আনসার আল ইসলাম ও আল্লাহর দল নামে আটটি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে কাজ করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গিদের ডেরায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের আস্তানা ধ্বংস করা হয়। আক্রমণের মুখে তাদের অনেকেই আত্মহত্যা করে; প্রায় ৭ হাজার ২০০ জঙ্গি গ্রেফতার হয়। সিলেট, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ৮০ জন জঙ্গি নিহত হয়। এসব অভিযান চালাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ পর্যন্ত পুলিশের ছয় জন, র্যাবের এক জন ও ফায়ার সার্ভিসের এক জন শাহাদত বরণ করেন। গুরুতর আহত হন কমপক্ষে ৬২ জন সদস্য।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্পরতা ও কাউন্সেলিংয়ের ফলে বেশ কিছুসংখ্যক জঙ্গি সরকারের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। বিভিন্ন মামলায় বাংলাভাই, শায়খ আবদুর রহমান, মুফতি হান্নান, আসাদুজ্জামান পনিরসহ অনেকের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। শুধু জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনই নয়, শেখ হাসিনার সরকারের আরো সফলতা হলো চরমপন্থী, মাদক চোরাকারবারি ও বনদস্যু দমন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর দেশের শ্বাসতন্ত্র বলে খ্যাত সুন্দরবনকে বনদস্যুমুক্ত এলাকা ঘোষণা করেছেন। বনদস্যুরা যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে, সে লক্ষ্যে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিশেষ সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তারা প্রায় সবাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।

জঙ্গিদের আস্তানায় অভিযানের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিন্তু ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। অভিযানে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের কারাগারের ভেতরে জঙ্গিবাদী ভাবাদর্শ থেকে সরিয়ে আনা বা ডির্যাডিক্যালাইজেশনের মাধ্যমে তাদের বোঝানো হয় যে তারা ভুল করছে বা ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছে। কারাগারে তাদের কাউন্সেলিং করা হয়। তা ছাড়া স্কুল-কলেজে লিফলেট-ফেস্টুন বিতরণ; বেতার, টেলিভিশন, পত্রিকায় ফিলার-অ্যাড, সচেতনতামূলক প্রচার উল্লেখযোগ্য।

পাশাপাশি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ সোয়া এক লাখ আলেমকে নিয়ে জঙ্গিবিরোধী যে ফতোয়া দেন, সেটিও ব্র্যান্ডিং করা হয়। সেটি ছিল একটি যুগান্তরকারী পদক্ষেপ। বিনা প্রয়োজনে একটি গাছের পাতা ছেঁড়াও যে ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ, তা প্রচার করা হয়। তা ছাড়া জঙ্গিদের দ্বারা ধর্মের অপব্যাখ্যায় মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয়, সে জন্য স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকেও দেশের মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ইমাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই ধর্ম বিনা কারণে মানুষ হত্যা সমর্থন করে না, সেটা বোঝানো হয়। সরকার এভাবে মানুষকে সচেতন করতে পেরেছে বলেই আজ জঙ্গিরা কোণঠাসা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কোনো জঙ্গি মারা গেলে তাদের নিকটাত্মীয়রা এমনকি মা-বাবাও তাদের লাশ গ্রহণ করছে না। এসব দেখে অনেক জঙ্গি নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। তবে এখনো আত্মতৃপ্তির কোনো কারণ নেই, আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে দেশে জঙ্গিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্মের পর থেকেই ষড়যন্ত্র চলছে: ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে অসংখ্য দেশপ্রেমিক প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অবরোধের নামে নাশকতা চালায়। ক্ষমতার লোভে মানুষ কতটা হিংস্র ও বর্বর হতে পারে, বাংলাদেশের মানুষ তা দেখেছে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল জুড়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের মধ্যযুগীয় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও তাণ্ডবলীলায়। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে চলন্ত বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, পশু পুড়িয়েছে। রাস্তায় গাছ কেটে মধ্যযুগীয় কায়দায় কুপিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। এমনকি একজন জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে আদালতের রায় ঘোষণার পর সারা দেশে সহিংসতা চালানো হয়। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমন করতে গিয়ে কর্তব্যরত অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৫ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনিপুণ পরিচালনায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমন করা হয়েছে। জনগণ এসব সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রমকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

টেকসই গণতন্ত্র ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন টেকসই শান্তি; আর টেকসই শান্তির জন্য দরকার টেকসই নিরাপত্তা। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক সব উন্নয়নের নেপথ্যে রয়েছে দেশের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের মাধ্যমে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে পেরেছেন বলেই এখন পৃথিবীর এক অপার বিস্ময়ের নাম বাংলাদেশ। মানুষের জীবন হয়েছে নিরাপদ। জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার পাশাপাশি হয়েছে শান্তিময়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উদার স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তারই উত্তরসূরি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল ২০২১ অনুযায়ী ২০৩৫ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহত্ অর্থনীতির দেশ। অর্থনীতির এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত দেশ গড়তে হবে। এটা সম্ভব শেখ হাসিনার মতো দূরদর্শী নেতা দ্বারা দেশ পরিচালিত হলে।

লেখক: মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

ইত্তেফাক/জেডএইচডি