শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অঙ্গ সাজাতে ও জীবন বাঁচাতে তামা-পিতলের গহনা

আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১০:১৯

রাজধানীর কোল ঘেঁষা বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত গ্রামীণ জনপদ ভাকুর্তা। সাভার উপজেলার একটি ইউনিয়ন এটি। তামা ও পিতলের গহনা তৈরির শত বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলছে এ গ্রাম। এ এলাকার মানুষ কৃষি কাজ ছাড়াও অলংকার তৈরির কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এখানকার গহনার চাহিদা দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশেও। মূলত উত্সব ও বিশেষ কোনো দিবসকে কেন্দ্র করে এর চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু করোনা মহামারির সময় গহনা শিল্পীদের ব্যবসায় ভাটা পড়ে। বর্তমানে করোনার প্রভাব কমতে থাকায় তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার পেরোলেই তুরাগ নদের ওপর ছোট্ট একটি লোহার সেতু। সেখান থেকে ভাকুর্তা মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। এই ইউনিয়নভুক্ত গ্রামের সংখ্যা ৩৬। এখানকার প্রায় ৮ হাজার লোক গহনা তৈরির কাজে যুক্ত। নারী-পুরুষ মিলে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করেন গলার হার, হাতের চুড়ি, কানের দুল, ঝুমকা, চেন, পায়েল ও নূপুরসহ বিভিন্ন ডিজাইনের গহনা। এই গহনা তৈরি করে যেমন অন্যকে সাজতে সহায়তা করছেন, তেমনি একে অবলম্বন করে নিজেদের জীবনকেও সাজাচ্ছেন এখানকার মানুষ। রাজধানীর জুয়েলারি দোকানগুলোয় ভাকুর্তায় তৈরি অলংকারের চাহিদা স্বর্ণের চেয়েও বেশি। এখানকার গহনা সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গহনা তৈরির কাঁচামাল বিক্রির দোকানের মালিক ও কারিগর নিখিল চন্দ্র রাজবংশী। তিনি জানান, তিন প্রজন্ম ধরে তারা এই কাজ করছেন। গ্রামের প্রায় সবার পেশা গহনা তৈরি। এ কাজ আগে হিন্দুরা করতেন। এখন মুসলমানরাও একে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাদের তৈরি গহনাগুলো পাইকারের কাছে বিক্রি করা হয় ২০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। দাম ডিজাইন ও আকারের ওপর নির্ভর করে। এসব গহনার বেশির ভাগই অপরিশোধিত অবস্থায় বিক্রি হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে পরিশোধন করে যখন মার্কেটে খুচরা বিক্রি করেন, তখন এর দাম দেড় থেকে দুই গুণ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিন গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। আবু সিদ্দিক জানান, গহনা তৈরির কাঁচামাল তামা কেনা হয় ঢাকার তাঁতিবাজার থেকে। এছাড়া কিছু কাঁচামাল বগুড়া ও ভারত থেকে আনা হয়। নিজেদের দক্ষতা ও পরিশ্রম দিয়ে কাজ করেন কারিগররা। দিনে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করে আয় হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

মৌসুমী জুয়েলারি ওয়ার্কসপ ও বাজার কমিটির সভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান, ভাকুর্তা বাজারের বয়স দেড় শ বছরের কাছাকাছি। এ বাজারে দোকান রয়েছে ১২০টির মতো। আর ভাকুর্তা ইউনিয়নে কমপক্ষে ৩৫০-৪০০টি দোকান। তিনি বলেন, ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেসব ইমিটেশন গহনা বিক্রি হয় তার বেশির ভাগই এখানে তৈরি হয়। এ ছাড়া স্বল্পসংখ্যক বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। বেসরকারি সংস্থা সোস্যাল আপলিফটমেন্ট সোসাইটি (সাস)-এর নির্বাহী পরিচালক হামিদা বেগম জানান, ভাকুর্তার জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সমস্যা থেকে উত্তোরণ ও এ ব্যবসা প্রসারে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সহায়তা করছে। ভাকুর্তায় সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্টের আওতায় স্বাস্থ্যসম্মত ও কর্মবান্ধব ইমিটেশন জুয়েলারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

ইত্তেফাক/কেকে