শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মনপুরায় বঙ্গবন্ধুর ‘চিন্তানিবাস’

স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল!

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:২৭

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কয়েক দিন পরেই ব্যাপক প্রাণহানিসহ লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া ভোলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরার মানুষের পাশে ত্রাণসামগ্রীসহ এসে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এসময় দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু অবকাশকালীন সময়ের জন্য মনপুরাতে ‘চিন্তানিবাস’ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন। এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল রামনেওয়াজ বাজার সংলগ্ন বড় দীঘির পাশে। স্থাপনাটি কয়েক বছর আগে মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। মনপুরায় বঙ্গবন্ধু যে চিন্তানিবাস গড়তে চেয়েছিলেন সে স্বপ্ন—আজও স্বপ্নই রয়ে গেল বলে হতাশার কথা জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

মনপুরা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার আব্দুল লতিফ ভুঁইয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভবত পাঁচ দিন পর বঙ্গবন্ধু ত্রাণসামগ্রীসহ লঞ্চ যোগে রামনেওয়াজ বাজারের উত্তরপাশে খরুলার খালপাড়ে (কাচারীর ডগি) এসে পৌঁছান। তখন আমি মনপুরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। মরহুম বসরতউল্যাহ চৌধুরীকে (সাহাজাদা মিয়া) বঙ্গবন্ধু নিজের গায়ের কোট এবং আমাকে তার গায়ের চাদর দিয়েছেন। প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে তিনি মনপুরায় একটি আবাসভূমি করার পরিকল্পনা করেন। এই আবাসভূমি বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাসের রূপ নেয়। চিন্তানিবাসটি করার জন্য নির্মাণসামগ্রীও পাঠিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। একতলাবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ হয়। সেই নিদর্শনটি এখন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

মনপুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এ কে এম শাহজাহান মিয়া বলেন, তখন আমি চরফ্যাশন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। ঘূর্ণিঝড়ের ঠিক পরেই সম্ভবত ১৬/১৭ নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু মনপুরা আসেন। লঞ্চে থেকে বঙ্গবন্ধু ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা ছিল এই দ্বীপে একটি আবাসভবন করার। পরবর্তী সময়ে এটির নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস। ভবনের কাজও শুরু হয়েছিল। সেই ভবন দীর্ঘদিন কালের সাক্ষী হিসেবে দাড়িয়েছিল। ভবনটি এখন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ বেতারের আঞ্চলিক মহাপরিচালক এম আর আক্তার মুকুল একটি বইতে লিখেছেন বঙ্গবন্ধু একদিন আওয়ামী লীগের সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আমি লুঙ্গি-গামছা নিয়ে মনপুরায় চলে যাব। এতে বুঝা যায় বঙ্গবন্ধু মনপুরার মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছেন। কিন্তু তার স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ছারেমুল হক হুমায়ন বলেন, বন্যা পরবর্তী সময় সম্ভবত ১৭ নভেম্বর হঠাত্ দেখি একটি লঞ্চ মনপুরার দিকে আসছে। লঞ্চটি দেখে লোক জন দৌড়ে আসে। লঞ্চে থেকে বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। মনপুরার অসহায় মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে নির্জন এলাকায় একটি চিন্তানিবাস করার পরিকল্পনা করেন। কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজও বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়নি। আমরা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করে আসছি।

মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম মিঞা জানান, ‘বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস’ স্থাপনের বিষয়ে গত ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের সঙ্গে অনলাইন সভায় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। চিন্তানিবাস স্থাপনের বিষয়ে টুরিজম বোর্ড, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সাংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। প্রাথমিক প্রস্তাবপত্র (ধারণাপত্র) তৈরি করা হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাসের জায়গা নির্ধারণের জন্য জমির প্রস্তাব দেওয়ার কাজ চলমান। ‘বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস’ বাস্তবায়ন হলে মনপুরা হবে পর্যটকদের আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় জায়গা।

উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিনা আকতার চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস’ বাস্তবায়নে আমাদের সংসদ সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন।

ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, জাতির জনকের স্বপ্নের ‘চিন্তানিবাস’ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।

ইত্তেফাক/কেকে