শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শ্রীপুরে টিউলিপ বাগানে প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড়

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:০৮

গাজীপুরের শ্রীপুরে কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে দেলোয়ার হোসেন ও শেলী হোসেন দম্পতির নয়নাভিরাম টিউলিপ বাগান দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। বাগানে টকটকে লাল, গাঢ় হলুদ, হালকা বেগুনি, পিংকসহ ছয় রঙের বাহারি সব টিউলিপ ফুলের সমারোহ। নানা রঙের টিউলিপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। আকর্ষণীয় এই ফুলের বাগানটি দেখতে ইতিমধ্যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন দপ্তরের বড় কর্মকর্তারা ঘুরে গেছেন। গণমাধ্যমে খবর দেখে খোদ কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও এসে হাজির হয়েছিলেন এই টিউলিপ বাগানে। ভিনদেশি টিউলিপের নান্দনিক বাগান দেখে হয়েছেন মুগ্ধ, উচ্ছ্বসিত। 

ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, “গত বছর শখের বসে নেদারল্যান্ডস থেকে কিছু বীজ এনে রোপণ করি। ফুল ভালোই ফুটেছিল। এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে ২০ হাজার বাল্ব (বীজ) নেদারল্যান্ডস থেকে আনা হয়েছে। পরে আমার বাগান ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ার্সে’ ১২-১৩ হাজার বীজ রোপণ করি। বাকিগুলো ঠাকুরগাঁও ও সাতক্ষীরার দুই কৃষকের মাধ্যমে রোপণ করা হয়েছে। বাগানে এবার চমত্কার ফুল ফুটেছে। তবে আগে রোপণ করতে পারলে আরো ভালো ফুল পাওয়া যেত।” তিনি বলেন, ‘শীতপ্রধান দেশের ফুল টিউলিপ ফোটাতে পেরে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আগামীতে আরো বড় পরিসরের একটি বাগানে টিউলিপ নিয়ে কাজ করতে চাই। সরকারি সহযোগিতা পেলে এ টিউলিপ আমদানির পরিবর্তে রপ্তানির দ্বার খুলবে। এ দেশেও এই ফুলের বেশ চাহিদা রয়েছে।’

দেলোয়ার-শেলীর বাগানে ফুল পরিচর্যারত এরশাদ উদ্দীন জানান, প্রতিদিন শত শত মানুষ আসেন টিউলিপের বাগান দেখতে।

পরিবার নিয়েও অনেকে আসেন। ছবি তোলেন এবং পরে তা ফেসবুকে ছেড়ে দেন। মানুষের এমন খুশি দেখে আমাদেরও আনন্দ লাগে। অনেক বড় বড় মাপের মানুষ এ বাগান দেখতে এসেছেন, যা আমাদের দারুণ উৎসাহীত করেছে, আনন্দ দিয়েছে।

ফুলচাষি শেলী হোসেন বলেন, ‘টিউলিপের অর্থনৈতিক চাষ আমাদের কৃষিক্ষেত্রে সাফল্যে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বিশ্বব্যাপী এই ফুলের দারুণ চাহিদা। বিশেষ করে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় এর বড় বাজার গড়ে উঠতে পারে আমাদের টিউলিপকে ঘিরে। শীতকালে আমাদের দেশেও ভালো মানের টিউলিপ ফুল চাষ করা সম্ভব, যা দিয়ে আমাদের একটি ফুল রপ্তানির বাজার তৈরি করতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘এবার টিউলিপ বাগান শুধু আগত মানুষের দেখার জন্যই রাখা হয়েছে। কোনো ফুল বিক্রি করা হয়নি। প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছে আমাদের পরিশ্রমের সাফল্য দেখতে। এটা আমাদের ভিন্ন রকমের আনন্দ ও তৃপ্তি দেয়।’

গতকাল রবিবার ২১ ফেব্রুয়ারির দিনটিতে তাদের টিউলিপ বাগান দেখতে এসেছিলেন মিসেস ফৌজিয়া নামের এক গৃহিণী। সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন নিজের ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকেও। বললেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর পেয়ে বাগানটি দেখার সাধ জাগে তার। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছেন তিনি। চমত্কার সব টিউলিপ ফুল দেখে তারা সত্যিই মুগ্ধ।

প্রাথমিক স্কুলশিক্ষিকা শামছুন্নাহার তার দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন এই টিউলিপ বাগানে। তার দুই মেয়ে তো নতুন ধরনের চমত্কার এই ফুল দেখে মুগ্ধ। শামছুন্নাহার বলেন, ‘এই ফুল দেখতে এখন আর নেদারল্যান্ডস বা ভূস্বর্গ কাশ্মীরে যাওয়া লাগবে না, কেওয়া গ্রামে এলেই চলবে। বাগান দেখে আমি অভিভূত। আমার মেয়েরাও আনন্দে আত্মহারা।’

উপজেলা কৃষি অফিসার এ এস এম মূয়ীদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশে টিউলিপ নিয়ে নানা গবেষণা হয়েছে। তবে সফলতা আসেনি বললেই চলে। কিন্তু সব অসাধ্যকে জয় করে দেলোয়ার-শেলী দম্পতি টিউলিপ চাষে দারুণ সফলতা দেখিয়েছেন। তাদের মৌমিতা ফ্লাওয়ার্সে বাহারি রঙের সব টিউলিপ হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। দর্শনার্থীরা এই চমত্কার সৌন্দর্য দারুণভাবে উপভোগ করছেন। দেলোয়ার এর আগে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এলাকাবাসীও তার সাফল্যে গর্বিত।’

ইত্তেফাক/কেকে