শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভিতরগড় দুর্গ

আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:১৬

একটি দেশ ও জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক সেই দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো। এদেশ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর দ্বারা শাসিত হয়েছে এবং তাদের শাসনকালে তৈরি হয়েছে নানা ইমারত, দুর্গ, নগর, প্রাসাদ, মসজিদ-মন্দির, বিহার ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রায় ২৫০০ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ পর্যন্ত (এপ্রিল, ২০২১) দেশে প্রায় ৫২৪টি পুরাকীর্তি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে। এগুলোর একটি পঞ্চগড়ের ‘ভিতরগড় দুর্গ’।

এটি মধ্যযুগে নির্মিত একটি দুর্গ নগরী যা পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তরে অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত। সর্বপ্রথম এই দুর্গটির উল্লেখ পাওয়া যায় রবার্ট মার্টগোমারি মার্টিন-এর ‘দ্য হিস্ট্ররি, এন্টিকুইটিজ, টপোগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটির তৃতীয় খণ্ডে যা ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত। দুর্গটি ২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এর নির্মাতা ছিলেন রাজা পৃথু এবং তিনি তাঁর শাসনকালে একে রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করতেন। একসময় অঞ্চলটি গৌড় ও প্রাগজ্যোতিষপুরের অংশ ছিল বলে জানা যায়। ভিতরগড়ের পুরো দুর্গটি কয়েকটি স্তরে চারটি আবেষ্টনী দেয়াল দ্বারা বিভক্ত। এর সবচেয়ে ভিতরের এবং মধ্যবর্তী গড়ে রাজার প্রাসাদ ছিল এবং সবচেয়ে বাইরের নগরীতে ছিল নিম্নবর্গের মানুষের বসবাস। এই দুর্গের প্রাচীর মাটি ও ইটের তৈরি। দুর্গের প্রাসাদ ও রাজপ্রাসাদের উত্তর-পূর্বে ছিল বিস্তৃত ভিতরগড় দিঘি আর তাতে আটটি বিরাট আকারের পাকা ঘাট। এই সুবিশাল দিঘি আজো বর্তমান।

২০০৯ সালের পর থেকে এই দুর্গতে বেশ কয়েকবার খননকার্য পরিচালনা করা হয় এবং এ পর্যন্ত ভিতরগড় দুর্গের অভ্যন্তরে ২২টি প্রত্নস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রত্নস্থলগুলো দুর্গটির আশেপাশের গ্রামজুড়ে বিস্তৃত। বর্তমানে দুর্গটির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত তালমা ও শালমারা নদী এর সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশে আবিষ্কৃত দুর্গনগরীগুলোর মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় নগরী ভিতরগড়। প্রায় ১৫০০ বছর আগের। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে এই অঞ্চলের প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যসহ নানা দিক উন্মোচন করা সম্ভব। এছাড়া পর্যটনশিল্প হিসেবে এর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এই ভিতরগড় দুর্গ দেখার জন্য পর্যটক ও দর্শনার্থী এখানে আসেন।

ইত্তেফাক/কেকে