উত্তর আফ্রিকার দেশ মিশর পর্যটকদের জন্য আন্তর্জাতিক সীমানা খুলে দিয়েছে। প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতা, নীল নদ, মরুভূমি প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং পিরামিডের জন্য বিখ্যাত মিশর।
যেকোনো ট্রাভেল এজেন্সী থেকে ভিসা করে ফেলুন। এবছরের ১ নভেম্বর থেকে কায়রো-ঢাকা-কায়রো রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে ইজিপ্ট এয়ার। অন্যান্য এয়ারলাইন্স এ-ও যাওয়া যায়। বুকিং ডট কমে হোটেল বুক করে নেবেন। হোটেল বুক করে যাওয়ায় ভালো, এয়ারপোর্ট শাটল পাওয়া যায়। অল্প কিছু আরবি শিখে গেলে দামাদামি করতে সুবিধা হয়।কায়রো মিশরের রাজধানী এবং একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। মিশর ট্যুরে প্রতি জন ১ লাখ করে বাজেট করলে সুন্দর ভাবে ঘুরে আসতে পারবেন।
মিশরের পরিদর্শনযোগ্য স্থান
পিরামিড
মিশরীয় পিরামিডগুলি তত্কানলীন ফেরাউন বা সম্রাটদের স্মারক স্থান, যার ভিতরে রাজা এবং রানী এবং অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের মৃতদেহ সমাহিত ও সংরক্ষিত রয়েছে। পিরামিডের আকারটি ত্রিভুজাকার এবং যদি এর প্রান্তগুলির দৈর্ঘ্য, উচ্চতা এবং কোণগুলি পরিমাপ করা হয়। পিরামিডের চার কোণার পাথরে বল এবং সকেট তৈরি করা হয়েছে যাতে এটির গড় তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি না হয় এবং ভূমিকম্প থেকেও নিরাপদ থাকে।
গিজার মিরামিড
বিশ্বের সবচেয়ে স্বীকৃত ল্যান্ডমার্ক গিজার পিরামিড পরিদর্শন ব্যতীত মিশর ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। শত-শত পর্যটক প্রতিদিন এটির পরিদর্শনে আসে। স্পিংক্স দ্বারা সুরক্ষিত, গিজার মিরামিড হল পরাক্রমশালী ফ্যারাও – কূফু, কাফরে ও মেনকৌরের সাথে সাথে রাজ পরিবার, আভিজাত্য এবং পুরোহিতদের সমাধি। এই তিনটির মধ্যে, কূফুর মহীয়ান পিরামিডটি হল প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি অংশ এবং এটিই একমাত্র এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে। কালপুরুষের নক্ষত্রপুঞ্জের সাথে সংযুক্ত, পিরামিডগুলি প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের শেষ অবস্থা অবলম্বন করে টিকে রয়েছে।
কায়রো জাদুঘর
প্রাচীন মিশরীয় হস্তনির্মিত সামগ্রীর বিশ্বের আদ্য ভান্ডারের আবাসস্থল, প্রাচীনত্বের সময়কাল থেকে আধুনিকতায় দর্শকদের সামনে তুলে এনেছে। মিশরীয় ফ্যারাওদের সংস্কৃতির একটি মহাকোষ, মিউজিয়ামটি তার প্রদর্শিত পুরাকীর্তির নিছক সংখ্যার জন্য বিখ্যাত। পর্যটকদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং জনপ্রিয় হল তুতেনখামেন-এর সমাধি ভান্ডার।
আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়
পৃথিবী বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় তাহরির স্কয়ার থেকে ১০-১৫ কি.মি. দূরে।অনেক সাজানো গোছানো ছিমছাম বিশ্ববিদ্যালয়।
কাটাকম্ব
এটি আসলে একটি কবরস্থান। অন্তত ৪-৫ তলা মাটির নিচে একটি কবরস্থান। সুরঙ্গ দিয়ে ঘুরে ঘুরে নামতে হয় এখানে। গা ছমছমে পরিবেশ।
ভ্যালি অব কিংস
মিশরীয়রা এক সময় ভাবল রাজাদের জন্য এককেটা পিরামিড বানানো অনেক ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। তাই একজন রাজা একটা বুদ্ধি বের করল। পিরামিডের মতো দেখতে একটি পাহারের মধ্যে গর্ত করে রাজাদের কবর দেয়ার সিস্টেম চালু করল। পাহারটিও দেখতে পিরামিডের মতোই।
তাহরির স্কয়ার
মিশরের রাজধানী কায়রোর ডাউন-টাউনে অবস্থিত একটি মিলনকেন্দ্র ও চত্বর। এটি শহীদ চত্বর নামেও পরিচিত।সাধারনত পর্যটকরা তাহরির স্কয়ারে থাকে।এই স্কয়ারটি ১৯১৯ সালের মিশর বিপ্লব-এর পর সর্বপ্রথম তাহরির স্কয়ার বা মুক্ত স্কয়ার" নামে পরিচিত লাভ করে। এই চত্বরটি ২০১১ সালের মিশর বিপ্লব-এর সময় সবার মনোযোগের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়।
প্যাপিরাসের কারখানা
গিজা শহরেই অনেক প্যাপিরাসের কারখানা আছে। কারখানায় যাওয়ার পর প্রথমে প্যাপিরাস কাগজ কিভাবে বানানো হয় তার উপর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো বক্তৃতার মত। এই প্যাপিরাসের উপর প্রাচীন মিশরীয়রা লিখত ও বিভিন্ন চিত্রকলা অংকন করত। প্যাপিরাস কারখানায় অজস্র চিত্র শিল্পীর আঁকা মিশরীয় প্রতীক ও অন্যান্য প্রাচীন ছবির বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। চিত্রকররা বসে আছে কারখানায় এবং অর্ডার মোতাবেক তারা চিত্র এঁকে দিচ্ছে।
লুক্সোর
প্রায়শই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ওপেন-এয়ার জাদুঘর হিসেবে পরিচিত, শহরটি থ্যাবসের প্রাচীন রাজধানী সাইটটির উপর নির্মিত। এটি মিশরের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মন্দিরের দুটি সংলগ্ন বাড়ি - কর্ণাক ও লুক্সোর। নীল নদীর বিপরীত দিকে রাজাদের উপত্যকা এবং কুইন্স উপত্যকায় অবস্থিত, যেখানে প্রাচীন রাজপ্রাসাদের কবর দেওয়া হয়। সর্বাধিক বিখ্যাত, কবরস্থানটি তুতানখামুনের সমাধি অন্তর্ভুক্ত।
মেমফিশ
ফ্যারাও মেনেস দ্বারা প্রবর্তিত মেমফিশ, একটি শহরের চেয়ে অনেক বেশি দূর্গের মতো দেখতে ছিল। তবে, শহরের বেশিরভাগই গ্রাম, মাঠ ও নীল নদের পলি জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আচ্ছাদিত রয়েছে। শহরের অবশিষ্টাংশের অধিকাংশই মিৎ রহিনা গ্রামের চারপাশে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। এখানে, পর্যটকেরা পতাহ মন্দিরের ধ্বংসস্তূপ ও সেই সঙ্গে বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্রকায় মঠ ও অভয়ারণ্য সহ দ্বিতীয় রামাশেসের দুটি বৃহৎ মূ্র্তি দেখতে পেতে পারেন। এছাড়াও, এখানে তৈলস্ফটিক স্ফিংক্সও রয়েছে, যা একজন অজানা ফ্যারাও-এর প্রতি উৎসর্গীকৃত।
লাল সাগর উপকূল
বিশ্বের সেরা স্কুবা ডাইভিং গন্তব্য হিসাবে মিশরের লাল সাগর উপকূল বিখ্যাত। সুস্পষ্ট, উষ্ণ জল এবং সুস্থ প্রবালপ্রাচীরগুলির প্রচুর পরিমাণে, ডুব শিখতে এটি একটি দুর্দান্ত জায়গা।
সিটাডেল অফ কায়রো
এখানে দেখতে পাবেন মোহাম্মদ আলির অ্যালাব্যাস্টার মসজিদও। সিটাডেলের উপর থেকে দেখা যায় কায়রো শহরের অসাধারণ দৃশ্য।
ইত্তেফাক/এফএস