শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে দেশের পর্যটন শিল্প

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:১১

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সে বছর দেশের মোট জিডিপির ২ দশমিক ৭ ভাগ পর্যটন খাত থেকে এসেছিল। এই খাত থেকে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে একটি সম্ভবনাময় খাত হলো পর্যটন খাত। তবে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়, নিরাপত্তার অভাব ও সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে এখনো অবহেলিত এ খাতটি।

দেশি পর্যটকদের আনাগোনায় গতি ফিরছে পর্যটনে

আজ সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন সেবার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ট্রিপস এন্ড লিজার (বিটিএল) Bangladesh Trips and Leisure-(BTL) কর্ণধার শিমুল জাবালি। পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘিরে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে সরাসরি ইত্তেফাক অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, পর্যটন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি এ সেক্টরটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ-তরুণীরা এ খাতে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রতিনিয়ত আমরা নানারকম দূরাবস্তার সম্মুখীন হই। প্রধান সমস্যা হলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পর্যটন খাতের মতো গুরুত্ত্বপূর্ণ খাতে নিরাপত্তা খুবই নিম্নমানের। যার কারণে ঘটছে ধর্ষণ, হত্যা, ছিনতাই, মানহানিসহ মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যার কারণে নারীরাও ভ্রমণে নিরাপত্তাবোধ করেন না।

দেশি পর্যটকদের আনাগোনায় গতি ফিরছে পর্যটনে

তিনি আরও বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র সুনামগঞ্জের টাঙুয়ার হাওর কেন্দ্রিক। এখানে নেই কোনো ট্যুরিস্ট পুলিশ। হাওরে যেসব ট্রলারে করে পর্যটকরা ভ্রমণ করেন সেসব ট্রলারও অসাধু সিন্ডিকেট গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু সুনামগঞ্জ নয়, দেশের বেশিরভাগ পর্যটন এলাকা এধরণের অসাধু সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সব বিনোদন ও পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ক্ষতির মুখে পড়ে হোটেল, মোটেল, রিসোর্টসহ এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষ। সংক্রমণ কমলে গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে আবার সব পর্যটনকেন্দ্র খুলতে শুরু করে। করোনা সংক্রমণ কম থাকায় সে সময় প্রাণ ফিরে পায় পর্যটন শিল্প। তখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ২০২১ সালে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে এপ্রিল থেকে দেশে দফায় দফায় বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। এতে আবার বন্ধ হয়ে যায় এই শিল্প। 

প্রবাল দ্বীপের হাতছানি

বৈশ্বিক মহামারি করোনা বিপর্যয় কাটিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর  সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট থেকে  পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দিয়েছে সরকার। এমন সিদ্ধান্তে এ খাতে কাজ করে দেশের প্রায় ৪৫ লাখ মানুষের  জীবন-জীবিকা নিয়ে আশার আলো সঞ্চয় হয়েছে। তবে শঙ্কা কাটেনি এখনো। এ খাতে শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চয়তা অভাব রয়েছে। এমন অবস্থায় পর্যটন হাতের ক্ষত দূর করতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রণোদনা, স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় ও এ খাতের কর্মীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির জন্য পর্যটন খাতের যে ক্ষতি হয়েছে সেগুলো কাটিয়ে উঠার জন্য যে সমস্ত প্রদেক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন আমরা ইতোমধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে বলে দিয়েছি। 

Saint Martin Tour | Find the best hotel and tour to St. Martin

এ খাতে যারা ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছেন, কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য বলা হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ পর্যটন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোখলেচুর রহমান দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, পর্যাটন খাতকে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে হলে প্রণোদণা ঘোষণার এখনই প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশ এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরার্স এসোসিয়েশনের তথ্য মতে, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে হোটেল ও বিমান মিলে ১০ শতাংশ ব্যবসায়ী কর্পোরেট শ্রেণির, মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৮০শতাংশ এবং ১০শতাংশ প্রান্তিক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ফলে পর্যটনের সঙ্গে মূলত ৯০শতাংশ পেশাজীবী ও কর্মী অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় পতিত হয়েছে, যা অন্য যে কোনো উৎপাদন ধর্মী এবং সেবাধর্মী শিল্পের চাইতেও নাজুক অবস্থা। এই শিল্প দেশে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ এবং আবেশিত এই ৩ (তিন) উপায়ে অবদান রাখে। তাই পর্যটন শিল্প ভেঙ্গে পড়লে ভেঙ্গে পড়বে অর্থনীতি ও সমাজ।

Cox's Bazar and Saint Martin Tour | Book Tour Packages in Bangladesh

বাংলাদেশ ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেলস ওয়ার্কার্স-এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের সভাপতি রাশেদুর রহমান দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, পর্যটন খাতে সবচেয়ে অবহেলিত হলো সেই খাতের শ্রমিকরা। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের অধিকার, সিকিউরিটি নিশ্চিত না হবে ততদিন এ সেক্টরের তেমন কোনো উন্নতি হবে না। করোনার জন্য হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা এ খাতে বরাদ্দ থাকলেও মালিকপক্ষ সেই প্রণোদনা গ্রহণ করেনি ফলে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের হাতে এসব প্রণোদনার কোনো সুযোগ সুবিধা পৌঁছায়নি। তারা বঞ্চিত হয়েছে। কারণ মালিকপক্ষ না নিলে সেটা কখনো শ্রমিকদের খাতে পৌঁছানো সম্ভব না।

ভাসমান রেস্তোরাঁতে কিছুক্ষণ

তিনি আরও বলেন, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো। আমাদের একটি দাবি সেটা হলো পর্যটন মন্ত্রণালয় হিসেবে আলাদা একটি মমন্ত্রণালয় তৈরি করা। বর্তমানে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় যেটি আছে এর সিংহভাগ অর্থেই খরচ হয় বিমান খাতে। ফলে পর্যটন খাত সেইভাবে সুবিধা পাচ্ছে না। সরকার যদি শুধু পর্যটন হিসেবে আলাদা একটি মন্ত্রণালয় তৈরি করে তাহলে অচিরেই এ খাত এগিয়ে যাবে। দেশি-বিদেশি পর্যটক বাড়াতে হলে সরকার, সংশ্লিষ্ট  সংগঠন ও সাধারণ জনগণসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে  কাজ করতে হবে।

ইত্তেফাক/কেকে