শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পায়ে হেঁটে ১৬৬০ ফুট উঁচু পাহাড়ে পাবনার তিন বছরের শিশু 

আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ২১:১৯

পায়ে হেঁটে বান্দরবনের ১৬৬০ ফুট উচ্চতার মারায়ন তং পাহাড়ে উঠে সবাইকে হতবাক করে দিয়েছেন পাবনার চাটমোহরের তিন বছরের শিশু সাবিলা মোস্তাফিজ জারা। সম্প্রতি বাবা-মায়ের সাথে বেড়াতে গিয়ে কারো কোলে না উঠে নিজেই হেঁটে অত্যন্ত উঁচু এই পাহাড়ে উঠানামা করেছে সে। 

জারা’র পায়ে হেঁটে পাহাড়ে উঠানামার বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সেখানকার পর্যটক গাইডরাও। তারা জানিয়েছেন, এর আগে এতো কম বয়সী শিশু পায়ে হেঁটে পাহাড়ে ওঠেনি। জারা’র এমন কৃতিত্বে খুশি ও গর্বিত বাবা-মা, স্বজন, প্রতিবেশীরা। আগামীতে আরও বড় পাহাড় জয় করার প্রত্যাশা তাদের। 

পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের চৌধুরীপাড়া মহল্লার ফ্রিল্যান্স ওয়েব সাইট ডেভেলপার মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও সাদিয়া ইসলাম ইলা দম্পতির একমাত্র সন্তান জারা। ভ্রমণ পিপাসু বাবা-মায়ের মুখে বিভিন্ন সময়ে পাহাড় আর সমুদ্রে ঘোরাঘুরির গল্প শুনে ৩ বছরের জারা আধো আধো কথায় বাবা-মায়ের কাছে আবদার করতো পাহাড়-সমুদ্র দেখার। 

মেয়ের আবদার রাখতে গত ৫ জানুয়ারি চাটমোহর থেকে ট্রেনে বান্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা হন বাবা-মা। ৬ জানুয়ারি দুপুরে আলীকদম উপজেলার আবাসিক এলাকার মিরিঞ্জা রেঞ্জে পৌঁছায়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ১৬৬০ ফুট উচ্চতার মারায়ন তং পাহাড়ে উঠা শুরু করেন তারা। তাদের সঙ্গী ৩ বছরের মেয়ে জারাকে কোলে নিয়ে পাহাড়ে উঠাতে ভাড়া করা হয় পর্যটক গাইড। কিন্তু জারা কারো কোলে না উঠে নিজের পায়ে হেঁটে মারায়ন তং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছায়। অত্যন্ত খাড়া এই পাহাড়ে উঠতে তাদের সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট। এতটা পথ ও সময় যেখানে উঠতে বড়রা হাঁপিয়ে ওঠে, সেখানে মেয়ের পায়ে হেঁটে পাহাড়ে উঠায় হতবাক বাবা-মা। 

বাবা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রথমে ভাবিনি জারা হেঁটে উঠবে, তাকে কোলে নিয়ে উঠতে হবে ভেবেছিলাম। এজন্য গাইডও ভাড়া করেছিলাম। কিছু টাকাও গাইডকে দিয়েছিলাম যাতে কিছু চকলেট বিস্কিট কিনে জারার সাথে সখ্যতা করে কোলে নিতে পারে। কিন্তু আমাদের মেয়ে বরং কোলে নিলেই কান্নাকাটি করতো। পরে সে একাই আমাদের সাথে হেঁটে পাহাড়ে ওঠে। শুধু হেঁটে পাহাড়ের চূড়ায় উঠাই নয়, নামার সময়েও নিজেই হেঁটে নিচে নেমেছে জারা।

আরও পড়ুন: বাইডেনের প্রশাসনে জাইন, মিষ্টি বিতরণ নান্দাইলে

মা সাদিয়া ইসলাম ইলা বলেন, আমাদের জানা মতে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ খাড়া পাহাড় হলো ১৬৬০ ফুট উচ্চতার মারায়ন তং পাহাড়। উঠা খুবই কষ্টকর। আমরা উঠতে গিয়েই হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু আমাদের মেয়ের মধ্যে কষ্টের কোনো চিহ্ন দেখিনি। বরং আমরা মাঝপথে দাঁড়ালে জারা আমাদের তাড়া দিতো। বলতো তোমার থামছো কেন? আসো, উঠো। আমি শুরুতে ভাবছিলাম হয়তো জারা সাত-আট মিনিট হাঁটতে পারবে, তার বেশি হাঁটতে পারবে না। কিন্তু যখন সে পুরো পথ হেঁটে উপরে উঠে গেলো তখন আমি নিজেই রীতিমত হতবাক হয়ে গেলাম যে এটা কিভাবে সম্ভব হলো!

জারার বাবা-মা দাবি করেন, পরে তারা পাহাড় থেকে নেমে গাইড ও স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, এর আগে এতো কম বয়সে কোনো শিশু পাহাড়ে হেঁটে উঠতে পারেনি। তবে এর বাইরে যদি কারো কোনো তথ্য জানা থাকে তাহলে সেটা দেখতে পারেন। আর যদি না থাকে তাহলে তাদের মেয়ের কৃতিত্বটুকু লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ রাখা ও স্বীকৃতির দাবি জানান।

জারার এমন কৃতিত্বে বিস্মিত ও গর্বিত তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা। জারার নানা হাজী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার নাতনী যে এইটুকু বয়সে পাহাড়ে হেঁটে উঠেছে এটা জেনে খুবই খুশি লাগছে। তার জন্য দোয়া চাই সে যেন ভাল থাকে, আরও বড় কৃতিত্ব অর্জন করে। প্রতিবেশী ডা. জাহানারা খাতুন বলেন, আমি একবার পাহাড়ে গিয়ে মাঝপথে থেমে গিয়েছিলাম। কিন্তু জারা যে কাজ করেছে তাতে আমরা বিস্মিত। ওর বাবা-মা আমাদের ভিডিও দেখালো, আমরা চাটমোহরবাসী হিসেবে গর্বিত। আমরা চাই আগামীতে জারা বড় হয়ে আরো বড় পাহাড় জয় করবে।

এদিকে, এ বিষয়ে বান্দরবনের আলীকদম উপজেলার পর্যটক গাইড ইয়াসিন আলী, জামাল হোসেন ও মুন্না হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তারা জানান, তিন বছরের শিশু জারা হেঁটে মারায়ন তং পাহাড়ে উঠেছে এটা সত্য, তারা শিশুটির সাথে ছিলেন সবসময়। তারাও বিস্মিত শিশু জারার এমন মনোবল দেখে। এর আগে তিন বছর বা চার বছর বয়সী কোনো শিশুকে তারা পায়ে হেঁটে পাহাড়ে উঠতে দেখেননি বা শোনেননি। এর আগে সাত বছর বয়সী এক শিশু পাহাড়ে উঠেছিল। তবে মাঝপথে তাকে কোলে নিয়ে উঠতে হয়েছিল বলে জানান পর্যটক গাইডরা।

ইত্তেফাক/এমএএম