বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অটোতে ওয়াই ফাই-ল্যাপটপ, আয় লক্ষাধিক

আপডেট : ১০ জুন ২০২১, ২০:০০

সাধারণত অটোতে করে মানুষ তখনই যাত্রা করেন যখন বিকল্প কোনো যানবাহন থাকে না অথবা এক প্রকার বাধ্য হয়েই মানুষ অটোতে করে গন্তব্যে পৌঁছান। কিন্তু ভারতের চেন্নাইয়ের এক চালকের অটোতে উঠতে রীতিমতো আগে থেকেই আসন বরাদ্দ দিয়ে রাখতে হয়। যাত্রীরা লাইনেও দাঁড়িয়ে থাকেন। তবুও অনেকেই আসন পান না। ভাবছেন হয়তো কী এমন আছে অটোতে? তাহলে জেনে নিন।

এই অটোর প্রধান আকর্ষণ হলো অতিরিক্তি পরিষেবা। এটিতে খবরের কাগজ, দেশি-বিদেশি পত্রিকা, ওয়াই-ফাই, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ছোট টেলিভিশন, চিপস, স্ন্যাকস, পানি, কফি, ডাবের পানি, মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং ছাতাসহ যাত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য নানা ব্যবস্থা রয়েছে। আর এসব সুবিধা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন আরোহনকারীরা।

৩৭ বছর বয়সী অটোচালকের নাম আন্না দুরাই। তিনি চেন্নাইয়ের মহাবলীপুরম রোডে অটো চালান। তার এই পরিবহনে সর্বোচ্চ ছয় জন যাত্রী একসঙ্গে যাতায়াত করতে পারেন। শিক্ষাজীবনে দ্বাদশ শ্রেণীও উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি। তবুও বড় বড় কর্পোরেট ইভেন্টে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ডাক পরে তার। এমনকি আন্তর্জাতিক মঞ্চ টেডেক্সেও বক্তব্য দিয়েছেন।

যাত্রীদেরকে বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি খেলা, সিনেমা, রাজনীতি, বিজ্ঞানসহ সাম্প্রতিক বিশ্বের নানান ঘটনা নিয়েও আলোচনা করতে পারেন। প্রথাগত ডিগ্রি না থাকলেও তার এসব কথা শুনতে মুখিয়ে থাকেন স্কুল-কলেজে পড়ুয়ারা। সংসদ সদস্য, বিজ্ঞাপন জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেল্লারের সঙ্গেও একই মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছেন এই অটোচালক।

যাত্রাপথে সীমিত যাত্রীদের নিয়ে এসব সুবিধার কথা ভাবলেন কী ভাবে? তার অটোতে ওঠার চাহিদা এত বেশি কেনো? বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দিতে গেলে তার এই ধরনের প্রায়ই শুনতে হয়। জবাবে আন্না বলেন, প্রথম দিন থেকে তিনি গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। সেই ধারাবাহিকতার প্রেক্ষিতেই আজকের এই অবস্থান।

প্রথমে অটোতে কেবল খবরের কাগজ রাখতেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখন যাত্রীরা চাইলে ছাতাও ধার নিতে পারেন। চেন্নাইয়ের আবহাওয়াটাই এমন যখন তখন বৃষ্টি। অনেক সময় দেখা যায় যাত্রীরা অটো থেকে নেমে ভিজে যাচ্ছেন। সে জন্যই ছাতার স্ট্যান্ড রেখেছি।

কিন্তু ছাতা ফেরত আসে কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আন্না বলেন, আশপাশের বিভিন্ন দোকানের সঙ্গে অলিখিত চুক্তি আছে। যেন পরবর্তীতে যাত্রীরা দোকানগুলোতে ছাতা জমা দিয়ে যেতে পারেন। কারণ, ওই যাত্রী অটোতে দ্বিতীয়বার নাও উঠতে পারেন।

একইভাবে যাত্রীদের কথা ভেবে ল্যাপটপ, ওয়াই-ফাই ও খাবারের ব্যবস্থা রাখা। যেন যাত্রাপথে তারা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে পারে। চিপস ও চকোলেট রাখা হয়েছে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য।

আন্না জানিয়েছেন, প্রতিদিন অন্তত ১০০ যাত্রীকে পরিষেবা দেন তিনি এবং মাসিক গড় আয় ১ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে যাত্রীদের পেছনে ব্যয় হয় ১৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া গ্রাহকদের জন্য কুপনের ব্যবস্থাও রয়েছে।

ইত্তেফাক/টিএ